-->
শিরোনাম

পীরগঞ্জে রেকর্ড পরিমাণ গম চাষ, সুদিন ফিরছে কৃষকদের

পীরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি
পীরগঞ্জে রেকর্ড পরিমাণ গম চাষ, সুদিন ফিরছে কৃষকদের
রংপুরের পীরগঞ্জে গম চাষে ফিরেছে সুদিন, ফলনও হয়েছে বাম্পার

রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলায় এক সময়ে বিপুল পরিমাণে গম চাষ হতো। তবে গমের ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ এবং ভুট্টার দাপটে কমে যায় গমের আবাদ। ব্লাস্ট রোগের আক্রমণে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় গম চাষিরা। গম চাষ বেশ কয়েক বছর মুখ ফিরিয়ে নেয় পীরগঞ্জের কৃষকরা। তবে বিগত বছরের তুলনায় এ বছর পীরগঞ্জ উপজেলায় রেকর্ড পরিমাণ গম চাষ হয়েছে। গমের সুদিন ফিরেছে পীরগঞ্জে। একই সাথে কৃষকদের সুদিন ফিরছে।

 

২০১৫-১৬ মৌসুমে সারা দেশের মতো পীরগঞ্জ উপজেলায়ও মহামারি আকার ধারণ করে ছত্রাকজনিত রোগ ব্লাস্ট। পরের মৌসুমে এ উপজেলায় গম চাষে নিষেধাজ্ঞা দেয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এরপরও কয়েকজন কৃষক নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে গম চাষ করে ক্ষতিগ্রস্ত হন। কৃষকরা মুখ ফিরিয়ে নেন গম চাষ থেকে। পরে এসব গম চাষের জমি দখল করে নেয় ভুট্টা।

 

তবে চলতি বছর কৃষি অফিসের পরামর্শে আবারো গম চাষ করছেন কৃষকরা। অনুকূল আবহাওয়া থাকায় গমের ফলনও ভালো হয়েছে। এ উপজেলায় ২০১৫ সালে ব্লাস্ট রোগের কারণে কমে যায় গমের উৎপাদন। কৃষকরা গম চাষের পরিবর্তে শুরু করে ভুট্টাসহ অন্যান্য ফসল। চলতি বছর চিত্রটা পাল্টে গেছে।

 

বিগত দিনের মতো চাষিরা ঝুঁকেছে গম চাষে। কৃষি বিভাগের পরামর্শে তারা গম চাষ করেছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি, ফলনও হয়েছে বাম্পার।

 

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে ২৭০ হেক্টর জমিতে গম চাষের লক্ষ্যমাত্রা করা হলেও ছাড়িয়ে যায় লক্ষ্যমাত্রা। চলতি বছর ৩শ’ হেক্টর জমি চাষের জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেও তা ছাড়িয়ে ৩২৫ হেক্টর জমিতে গম চাষ হয়েছে। চলতি মৌসুমে রেকর্ড পরিমাণ গমের চাষ হয়েছে।

 

উপজেলার পাঁচগাছী ইউপির আমোদপুর গ্রামের গম চাষি বাবু মন্ডল, জানুরাম জানান, গমে রোগ হওয়ার কারণে কয়েক বছর আগে অনেক ক্ষতি হয়েছিল। কৃষি অফিসের লোকজন এসে গম চাষ নিষেধ করেছিল। এজন্য গম চাষ করিনি। এ বছর কৃষি প্রণোদনার মাধ্যমে আবারো গম চাষ করতে বলেছে কৃষি অফিস, তাই গম চাষ করেছি।

 

এ বছর বেশ ভালো ফলন হয়েছে। এত সুন্দর গম আগে কখনো হয়নি। এবার বেশ ভালো ফলন পাব বলে আশা করছি।

 

উপজেলার শানেরহাট ইউনিয়নের রায়তীসাদুল্যাপুর গ্রামের কৃষক বকুল মিয়া, জাহেদুল ইসলাম বলেন, গত বছর আমাদের জমিতে ভুট্টা ছিল। এ বছর দেড় বিঘা জমিতে গম চাষ করেছি। গম বেশ ভালো হয়েছে।

 

উপজেলার বড়দরগাহ্ ইউপির শাহাপাড়া হাজীপুর এলাকার কৃষক আব্দুল কাফি বলেন, এ বছর আমি সাড়ে ৪ একর জমিতে বারি-৩২ ও বারি-৩০ জাতের গম চাষ করেছি। অন্যান্য বছরের তুলনায় গম খুব ভালো হয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাদেকুজ্জামান স্যারের পরামর্শে ছত্রাকনাশক স্প্রে করি। এতে বেশ ভালো ফল পাই। আশা করছি গম চাষে বেশ ভালো লাভ হবে।

 

একই এলাকার কৃষক রুহুল আমীন, রাহুল ইসলাম জানান, তিন বছর আগে গম চাষ করে রোগে গম নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। এজন্য লোকসান হয়েছিল। তাই পরের বছর আর গম চাষ করিনি। এবার কৃষি অফিসের কৃষি প্রণোদনার বীজ-সার পেয়েছি। এবার এক বিঘা জমিতে গম চাষ করেছি। বেশ ভালো হয়েছে। আর কোনো রোগ-বালাই হয়নি। আশা করছি গত দুই বছরের লোকসান এবার পুষিয়ে যাবে।

 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সাদেকুজ্জামান সরকার জানান, এ বছর পীরগঞ্জ উপজেলায় রেকর্ড পরিমাণ গমের চাষ হয়েছে। চলতি মৌসুমে ৩শ’ হেক্টর জমিতে গম চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু উপজেলায় গম চাষ হয়েছে প্রায় ৩২৫ হেক্টর জমিতে। ২০১৫ সালে এ অঞ্চলে গমে ব্লাস্টের আক্রমণ মহামারি আকার ধারণ করে। সে সময় কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরবর্তী বছর ২০১৬ সালে আমরা এ এলাকায় গম চাষে নিষেধাজ্ঞা জারি করি। এতে ব্লাস্টের প্রাদুর্ভাব কম হয়।

 

তিনি আরো বলেন, গত বছর থেকে আমরা আবার গম চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি। কৃষকরাও পুনরায় গম চাষে আগ্রহ দেখিয়ে চাষ করছেন। এ উপজেলার মাটি গম চাষের জন্য উপযুক্ত। আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধী জাতের গম চাষের জন্য পরামর্শ দিচ্ছি।

 

এ ছাড়া এ বছর গম চাষের আবহাওয়া অনুকূলে রয়েছে। রোগবালাইও আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। প্রণোদনার মাধ্যমে গম চাষে আমরা কৃষকদের সার, বীজ দিয়ে উদ্বুদ্ধ করছি। আমরা আধুনিক উপায়ে গম চাষের জন্য কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version