-->
শিরোনাম

গাইবান্ধায় নিত্যপণ্যের দাম আকাশছোঁয়া

গাইবান্ধা প্রতিনিধি
গাইবান্ধায় নিত্যপণ্যের দাম আকাশছোঁয়া
সাদুল্লাপুর বাজারের একটি নিত্যপণ্যের দোকান

নদীবেষ্টিত গাইবান্ধার মানুষকে বন্যা-খরাসহ নানা দুর্যোগ মোকাবিলা করে বাঁচতে হয়। চরাঞ্চলসহ এ জেলার অধিকাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করেন। এরই মধ্যে ক্রমান্বয়ে বাড়ছে মানুষের মৌলিক দ্রব্যের লাগামহীন দাম। সবজি, চাল-ডাল, ডিজেল-বিদ্যুৎ, মাছ-মাংস, বস্ত্র, ওষুধ, প্রসাধনীসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির দাম এখন আকাশছোঁয়া।

 

এ অবস্থায় খেটে খাওয়া ও মধ্যবিত্ত পরিবারে আয়ের চেয়ে ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় তাদের দৈনন্দিন জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।

 

সম্প্রতি গাইবান্ধা জেলা শহরসহ বিভিন্ন হাটবাজারে দেখা গেছে, দ্রব্যসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির চিত্র। অস্থিতিশীল দামের কারণে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণহীন। যেন সংসার চালানো দায় হয়ে পড়েছে নিম্নআয়ের মানুষের। সেইসঙ্গে আসন্ন রমজান মাসে পণ্যসামগ্রীর দাম আরো বৃদ্ধির আশঙ্কায় তাদের কপালে পড়েছে দুশ্চিন্তার ভাঁজ।

 

ভোক্তারা জানান, বর্তমান বাজারে প্রতি কেজি চাল ৪৫ থেকে ৫৫ টাকা, আটা ৬৫, ব্রয়লার ২৫০, দেশি মুরগি ৬০০, গরু মাংস ৬৮০, ছাগলের মাংস ৯০০, ছোলা ১৫০, চিনি ১১০, ডাল ৯০ থেকে ১৪০, সয়াবিন ১৮৫, ফল ২০০ থেকে ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

 

এছাড়া বই, কলম, খাতা, বিভিন্ন শিক্ষাসামগ্রী, শাকসবজি, সাবান, ডিটারজেন্ট পাউডার, প্রসাধনী, বস্ত্র, দুধসহ সব ধরনের পণ্যসামগ্রীর দাম আগের তুলনায় দ্বিগুণ বেড়েছে। এদিকে সব ধরনের জিনিসের দামবৃদ্ধির প্রতিবাদে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো বিক্ষোভ-মিছিল সমাবেশ অব্যাহত রেখেছে।

 

একাধিক ব্যক্তি জানান, একটি পরিবারের জীবন-জীবিকার গতি নির্ভর করে তাদের আয়, চাহিদা এবং দ্রব্যমূল্যের ওপর। প্রতিটি পণ্যের দাম যখন সহনীয় পর্যায়ে থাকে, তখন মানুষের জীবন কাটে স্বস্তিতে। আর যদি দাম ঊর্ধ্বগতি থাকে তখন নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের বেড়ে যায় অশান্তি। বিশেষ করে ক্ষেতমজুর কিংবা দিন আনে দিন খাওয়া মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে।

 

তাদের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা বিরাজ করছে। বিদ্যমান পরিস্থিতি মধ্যবিত্তরা চরম বেকায়দায় পড়েছে। আর গরিবরা হচ্ছে আরো গরিব। যার কারণে ইদানীং বেড়েছে ভিক্ষাবৃত্তি পেশা। একই সঙ্গে চুরি-ছিনতাইসহ নানা অপরাধমূলক কান্ডও বেড়েছে। সম্প্রতি গাইবান্ধা সদরে অটোবাইক চালক রাজুকে জবাই করে তার বাইকটি ছিনতাই করেছে দুর্বৃত্তরা।

 

শুধু রাজুই নয়, এ জেলা ছিনতাইকারীর কবলে পরে খুনের ঘটনা ঘটেই চলেছে। বিশেষ করে গরিব পরিবারে জীবিকা নির্বাহে গ্রাম থেকে শুরু করে হাটবাজার ও পার্কগুলোয় ভিক্ষুকের আনাগোনা বৃদ্ধি পেয়েছে।

 

বছিরন বেওয়া নামে এক বৃদ্ধা বলেন, একসময়ে রিকশাচালক ছেলের হাড়িতে খেয়ে কোনোমতে জীবন পার করতাম। এখন সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় ছেলেটা তেমন সংসার চালাতে পারছে না। তাই আমি ভিক্ষাবৃত্তিতে নেমেছি। মহির উদ্দিন নামে এক ক্ষেতমজুর বলেন, আমার ৬ সদস্যের সংসার। বর্তমানে যেভাবে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে সেভাবে আয় বাড়েনি।

 

এর আগে করোনা ধকল না সামলাতেই এখন জিনিপত্রের বেসামাল দামে দিন দিনে সংসারে ঋণের বোঝা ভারী হচ্ছে। কৃষক আজগর আলী জানান, ধানসহ অন্যান্য কৃষি ফসল উৎপাদনে পরিবারের মৌলিক চাহিদা পূরণ করে আসছিলেন। এরই মধ্যে কৃষিপণ্যসহ সার-কীটনাশক, বিদ্যুৎ-ডিজেলের অস্বাভাবিক দামের কারণে চরম হিমসিম খাচ্ছেন তিনি।

 

ছাইফুল আলম নামে এক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বলেন, ইদানীং সব ধরণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। এখন মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ না পারছে অধিক দামে জিনিস কিনতে, না পারছে কারো কাছে হাত পাততে। এ অস্থিতিশীল অবস্থা নিরসনে সরকারের কার্যকর জরুরি পদক্ষেপ নেয়া দরকার বলে মনে করেন তিনি।

 

সমাজসেবক শহিদুল ইসলাম মÐল বলেন, আগের তুলনায় মানুষের আয় বেড়েছে। কিন্তু জীবনযাত্রায় ব্যয়ও বেড়েছে অনেকটাই। তাই গ্রামীণ পর্যায়ে সহজ শর্তে ঋণদানসহ বিভিন্ন সরকারি সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো দরকার। স্থানীয় মাদরাসা সুপার মোসলেম উদ্দিন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বেতন বৃদ্ধি না হলেও পণ্যসামগ্রীর দাম দ্বিগুণ বেড়েছে। আসন্ন পবিত্র রমজান মাস নাজাতের মাস হলেও এবার আতঙ্কের মাস মনে হচ্ছে।

 

অগ্নিমূল্যে খাদ্যপণ্য কিনে রোজা করা দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। সাদুল্লাপুর বাজারের নিত্যপণ্যসামগ্রী বিক্রেতা নরেশ সাহা, রাজা, সুজন, রফিকুলসহ আরো অনেকে বলেন, ক্রমান্বয়ে সবকিছুর দাম বেড়ের যাওয়া বিক্রিও কমেছে। এমনকি দাম নিয়ে ভোক্তাদের সঙ্গে তর্কবিতর্ক বাধছে। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়েছে।

 

গাইবান্ধা জাতীয় ভোক্তা অধিকার রংক্ষণ অধিদপ্তরের সরকারি পরিচালক আব্দুস সালাম বলেন, বাজার দর নিয়ন্ত্রণ রাখতে নজরদারি রাখা হয়েছে। এ নিয়ে অভিযানও চালানো হচ্ছে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version