-->
শিরোনাম
বদরগঞ্জ বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ

বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করেও পাটোয়াকামড়ী বিল খনন

বাবলুর রহমান বারী, রংপুর
বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করেও পাটোয়াকামড়ী বিল খনন
নিয়ম-নীতি না মেনে বদরগঞ্জের পাটোয়াকামড়ী বিল পুনঃখননের কাজ চলছে

রংপুরের বদরগঞ্জ পৌর শহরের পাটোয়াকামড়ী ডাঙ্গাপাড়া, কালুপাড়া ইউনিয়নের চারালীর বিল ওগোপীনাথপুরে ইউনিয়নের নৈমুল্লার বিল ব্যস্ততম সড়কের পাশে আবাদি জমি নষ্ট করে বিলের নামে খনন করা হচ্ছে। বিল খনন করায় সাধারণ মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ। এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন, বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিল খননের নামে প্রকল্পের টাকা লুটপাট করছেন।

 

সরেজমিনে দেখা যায়, পৌর শহরের আবাসিক এলাকার ভেতর ১১ একর ৩০ শতক জমি চারটি ভেকুযন্ত্র দিয়ে আবাদি জমিতে বিল খনন করা হচ্ছে। ৬০ লাখ টাকার এই খনন কাজটি পেয়েছে রংপুরের স্বপন কনস্ট্রাকশন নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সেখানে কাজ দেখভাল করছেন সুমন ও আতিক। তারা বলেন, ঠিকাদার স্বপনের কাছ থেকে কাজটি ১৭ লাখ টাকায় কিনে নিয়েছেন রংপুরের শাহাদত হোসেন।

 

এলাকার আইয়ূব আলী বলেন, এই জায়গাটি ‘পাটোয়াকামড়ী বিল’ নামে পরিচিত। স্বাধীনতার পর বিলটি আবাদি জমিতে পরিণত হয়। আমরা এলাকার মানুষ তখন থেকে চাষাবাদ করে আসছি। এই জায়গাটি অকেরে নামে রেকডও হয়েছে। সেই জায়গাটি খনন করছে। আইয়ূব আলী বলেন, ‘পৌর শহরের ভেতর বাড়ি ঘেঁষে এমন বিল খননে ছোট বাচ্চাদের নিয়ে থাকতে হয় আতঙ্কে।

 

পৌরসভার প্যানেল মেয়র মানিক রায় বলেন, ‘এই জায়গাটির মূল্য শতকোটি টাকা। বছরে দুই ফসল হয়। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন এক ইঞ্চি জায়গা যেন অনাবাদি না থাকে। আর সেই সোনার আবাদি জায়গায় খাল খনন করে পৌরবাসীকে ঝুকির মধ্যে রাখা হচ্ছে। পৌরমেয়র টুটুল চৌধুরী বলেন, ‘পৌর শহরের ভেতর এই জায়গাটি প্রশাসন খাল খনন না করে বড় ধরনের যে শিল্পপ্রতিষ্ঠান তা গড়ে তোলার প্রকল্প হাতে নিতে পারতেন।

 

এতে এলাকার হাজারো মানুষের কর্সংস্থানের ব্যবস্থা হতো। বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কালুপাড়া ইউনিয়নের চারালীর বিল ১৩ একর ১৮ শতক এবং গোপীনাথপুর ইউনিয়নের নৈমুল্লার বিল ১২ একর ৫০ শতক প্রায় আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে পুনঃখনন কাজ হাতে নেয়। এই দুই বিলের মধ্যে চারালীর বিলটি আবাদি জমিতে পরিণত হয়েছে অনেক আগে।

 

অনেকের নামে ৮ একর জমি রেকডও হয়েছে। কিন্তু সেই জায়গা খননে প্রশাসন এনওসি দেয় বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে। এরপর বরেন্দ্র বিল খননে দরপত্র আহবান করা হয়। এখন সেই বিল খনন করতে পারছে না। খনন করতে গিয়ে স্থানীয়দের তোপের মুখে পড়েছেন বরেন্দ্রের কমকতা ও ঠিকাদার। পরে ইউএনও চারালীর বিলের বিরোধপূর্ণ জায়গায় খনন কাজ করতে নিষেধ করেন বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষকে।

 

এবিষয়ে কালুপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল হক মানিক বলেন, ‘রেকর্ডভুক্ত জমি খনন করতে প্রশাসন কিভাবে এনওসি দেন। আর দিলেও এখন খনন করতে পারছেন না কেন। এসব করে শুধু এলাকার মানুষের সঙ্গে দ্ব›দ্ব সৃষ্টি করা হচ্ছে।’ চেয়ারম্যান মানিক আরো অভিযোগ করে বলেন, ‘খনন কাজে যে বরাদ্দ নেয়া হয়েছে, তার অধেক টাকাও খনন করতে লাগবে না।

 

মূলত বরেন্দ্র যত্রতত্র খনন কাজ নিয়ে ঠিকাদারের মাধ্যমে টাকা লুটপাট করছে।’ গোপীনাথপুরে ইউনিয়নের নৈমুল্লার বিলের ১২ একর ৫০ শতক জায়গায় মানুষ চাষাবাদ করতেন। সেখানে এক কোটি এক লাখ টাকায় খনন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। এই খনন কাজটি করতে গিয়ে প্রথমে বাধার মুখে পড়ে বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষ।

 

পরে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে খনন কাজ শুরু করেছেন। এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা লুৎফর রহমান অভিযোগ করে বলেন, ‘বিলটি খনন করতে সর্বচ্চ ব্যয় হবে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা। কিন্তু বরাদ্দ নেয়া হয়েছে এক কোটি এক লাখ টাকা।

 

গোপীনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান সুমন বলেন, ‘বরেন্দ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আবাসিক এলাকায় খনন কাজ করে এলাকার মানুষকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছেন। ছোট ছোট শিশুকে নিয়ে এলাকার মানুষ আতঙ্কে থাকবে।’ বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ভূ-উপরিস্থ পানির সর্বোত্তম পানি সংরক্ষণের (ইআইআর) মাধ্যমে ওই প্রকল্পগুলো গ্রহন করেছেন।

 

গত ২ ফেব্রয়ারি এই খনন কাজ শুরু করা হয়। তবে বিধি অনুযায়ী খনন কাজ শুরুর আগে প্রকল্প এলাকার সাধারণ কৃষকদের অবহিত করতে হবে। কিন্তু এই খনন কাজে সেই বিধিও মানা হয়নি। ফলে এলাকার মানুষ জানতে পারছেন না সেখানে কত টাকার প্রকল্প, কাজের ধরণ, বরাদ্দ, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম এবং খনন কাজের মেয়াদ।

 

রংপুর নির্বাহী প্রকৌশলী একেএম মশিউর রহমান বলেন, ‘দরপত্র’র আগে স্থানীয় প্রশাসন তিনটি বিলের এনওসি দিয়েছেন। সেখানে বলা ছিল সরকারি বিল, খননে কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু এখন অনেক বাধা। বিলের দরপত্র নিয়ে কিছুটা বিপাকে পড়েছি। রংপুরের প্রকল্প সমন্বয়ক হাবিবুর রহমান বলেন, কাজে কোনো অনিয়ম হচ্ছে না। বিধি অনুযায়ী বদরগঞ্জের তিনটি বিলের দরপত্র আহবান করা হয়।

 

এখন শুনছি, বিলের কিছু অংশ নাকি মালিকানায় আছে। যদি কারো মালিকানায় থাকে তাহলে সেটি বাদ দিয়ে খনন কাজ করা হবে। এ ব্যাপারে বদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু সাঈদ বলেন, ‘পৌর শহরে বিল খননে এমপি ডিও লিটার দেয়ায় সেখানে খনন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। যদি সেখানে কারো নামে রেকর্ড থাকে তাহলে সেটি বাদ দিয়ে খনন করতে বলা হয়েছে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version