-->
শিরোনাম

গাইবান্ধার শুকনা মরিচ যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে

গাইবান্ধা প্রতিনিধি
গাইবান্ধার শুকনা মরিচ যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে
গাইবান্ধার ‘ফুলছড়ি মরিচ হাট’

কথায় আছে স্বাদে ভরা রসমঞ্জুরীর ঘ্রাণ, চরাঞ্চলের ভুট্টা-মরিচ গাইবান্ধার প্রাণ। কৃষিনির্ভর জেলাগুলোর মধ্যে গাইবান্ধা একটি। এ জেলায় নানা ধরনের ফসলের পাশাপাশি কৃষকরা প্রতি বছর মরিচের আবাদ করে থাকে।

 

এ জেলার ব্রহ্মপুত্র নদী বেষ্টিত ফুলছড়ি উপজেলার চরাঞ্চলে এবার মরিচ চাষে বিপ্লব ঘটে গেছে।

 

ফুলছড়িতে মরিচ চাষ বেশি হবার কারণে এটি জেলার একমাত্র মরিচের হাট। এতে করে গজারিয়া ইউনিয়নে ব্রহ্মপুত্র সংলগ্ন হাটে নৌকাযোগে বিভিন্ন চর থেকে আসে প্রচুর মরিচ। ‘ফুলছড়ি মরিচ হাট’ নামে পরিচিত এই হাট এখন শুকনো মরিচের আমদানিতে টকটকে লাল মরিচে দৃষ্টিনন্দন হয়ে উঠেছে। হাইব্রিড, বগুড়ার জাত ও স্থানীয় জাতের মরিচ চাষ করেছেন কৃষকরা।

 

ফুলছড়ি হাটে গিয়ে জানা যায়, গাইবান্ধা সদরের কামারজানি, টেংরাকান্দি, মোল্লারচর, খোলাবাড়িসহ ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চরাঞ্চল এবং জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জের বকশীগঞ্জের কয়েকটি চর থেকে কৃষক ও পাইকাররা মরিচ বিক্রি করতে আসেন গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি উপজেলার একমাত্র এই মরিচ হাটে।

 

আর বগুড়া জেলা থেকে মরিচ কিনতে আসেন ব্যাপারীরা। এ হাট বসে সপ্তাহে শনি ও মঙ্গলবার দুদিন সকাল ৭টা থেকে বসে হাট। প্রতি হাটে দুই হাজার মণের বেশি শুকনা মরিচ বিক্রি হচ্ছে বলে জানান হাট ইজারাদার বজলুর রহমান মুক্তা।

 

গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর গাইবান্ধা জেলার ৭ উপজেলায় ২ হাজার ৩০ হেক্টর জমিতে মোট উৎপাদন হয়েছে ৫ হাজার ৭৫ টন শুকনা মরিচ। এর মধ্যে গাইবান্ধা সদর উপজেলায় ৪০ হেক্টর, সাদুল্লাপুরে ১৮০ হেক্টর, পলাশবাড়ীতে ৭৫ হেক্টর, গোবিন্দগঞ্জে ১২৫ হেক্টর, সুন্দরগঞ্জে ১৪৮ হেক্টর, ফুলছড়িতে ৯৯২ হেক্টর ও সাঘাটায় ৫৫০ হেক্টর জমি মরিচ চাষ হয়েছে।

 

কথা হয় ফুলছড়ি উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের গলনাচরের কৃষক আব্দুল মজিদ (৩৬) বলেন, বিঘা প্রতি কাঁচামরিচ উৎপাদনের খরচ পড়েছে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় ৫০ মণের বেশি মরিচ উৎপন্ন হয়।

 

তিনি আরো বলেন, ৫০ মণ কাঁচামরিচ পাকার পর তা শুকিয়ে ১০ মণ শুকনা মরিচ পাওয়া যায়। মরিচ শুকানো, পরিবহন এবং বাজারজাত খরচ যুক্ত করে মণপ্রতি ব্যয় যা হচ্ছে তাতে খুব সামান্য লাভ টিকছে বলে জানান তিনি।

 

গত বছর শুকনা মরিচ ১০ থেকে ১১ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছে, সেখানে এ বছর একটু দাম চড়া আছে। ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ শুকনা মরিচ।

 

মরিচ বিক্রেতা আব্দুর মনসুর (৫৫) জানান, এই হাটে মরিচ বিক্রি করতে আসেন হাজার খানেক কৃষক ও বগুড়াসহ কয়েক জেলার প্রায় শতাধিক ব্যাপারী।

 

দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট থেকে মরিচ কিনতে আসা ব্যাপারী ইলুল রহমান (৪৫) বলেন, আমরা প্রতি বছরেই এই হাট থেকে শুকনা মরিচ কিনে নিয়ে গিয়ে স্থানীয় হাটবাজারে বিক্রি করি। অন্যান্য বছরের থেকে এ বছর মরিচের মান ভালো। কিন্তু দামটা চড়া খ্বুই।

 

গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. খোরশেদ আলমের সঙ্গে কথা হলে তিনি দৈনিক ভোরের আকাশকে জানান, এ জেলার সাতটি উপজেলায় যে পরিমাণ মরিচের চাষ হয় তার অর্ধেকই উৎপন্ন হয় ফুলছড়ি উপজেলায়। এখানে দিন দিন মরিচ চাষের পরিমাণ বাড়ছে।

 

কৃষি বিভাগ থেকে পরামর্শসহ সবধরনের সহায়তা দেয়া হয়েছে।

 

ভোরের আকাশ/নি

মন্তব্য

Beta version