-->
শিরোনাম

ফেনীতে তরমুজের বাম্পার ফলন, দ্বিগুণ লাভের আশা কৃষকদের

ফেনী প্রতিনিধি
ফেনীতে তরমুজের বাম্পার ফলন, দ্বিগুণ লাভের আশা কৃষকদের
ফেনীর সোনাগাজীর তরমুজ এবং ক্রেতা-বিক্রেতা

ফেনীর সোনাগাজী ও চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে এখন সম্ভাবনার ফসল তরমুজ। পাশাপাশি দুই উপজেলার বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন শোভা পাচ্ছে নানা জাতের বিভিন্ন স্বাদের রসালো তরমুজ। এই দুই উপজেলার হেক্টরের পর হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে তরমুজের। ফলনো হয়েছে বাম্পার।

 

ইতোমধ্যেই সেসব তরমুজ আহরণ করে দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হচ্ছে। প্রাকৃতিক পরিস্থিতি ঠিক থাকলে বিনিয়োগের দ্বিগুণের বেশি লাভের আশা করছেন কৃষকরা। তবে আশঙ্কার বিষয় শিলাবৃষ্টি। বৃষ্টির সঙ্গে শিলা পরলে বড় ধরনের ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন তরমুজ চাষিরা।

 

সোনাগাজীতে চতুর্থ বারের মতো আবাদ হয়েছে তরমুজের। এখানকার তরমুজ বেশ সুস্বাদু হওয়ায় এবং গত তিন বছর বাম্পার ফলন হওয়ায় চাষাবাদে আগ্রহ বেড়েছে কৃষকদের। বাজারেও তৈরি হয়েছে ব্যাপক চাহিদা।

 

উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, এবছর সোনাগাজীর উপকূলীয় ৫টি ইউনিয়ন চর ছান্দিয়া, চর দরবেশ, নবাবপুর, আমিরাবাদ ও সোনাগাজীতে ব্লাকবেরি, গ্লোরি, বাংলালিংক, ওশান সুপার ও ভিক্টর সুপার জাতের তরমুজের আবাদ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ৩৪৫ হেক্টর জমি ধরা হলেও আবাদ হয়েছে ৫৭৫ হেক্টর জমিতে।

 

কৃষকরা জানান, হেক্টরপ্রতি আনুমানিক খরচ হয়েছে ৩ লাখ টাকা। হেক্টরপ্রতি তরমুজ বিক্রি হবে প্রায় ১০ লাখ টাকার। সব মিলিয়ে প্রায় ৫৭ কোটি টাকার তরমুজ বিক্রি হতে পারে এবার। সোনাপুর এলাকার তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা আইয়ুব নবী ফরহাদ, ইফতেখার ও আনোয়ার জানান, তাদের ১৫ জনের একটি দল গত বছর তরমুজের আবাদ করে প্রায় কোটি টাকা লাভবান হয়েছেন।

 

এ বছর তারা পুনরায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে কৃষি অফিসের পরামর্শ নিয়ে প্রায় ২১৬ একর জমিতে দেড় কোটি টাকা খরচ করে তরমুজের আবাদ করেছেন। ফলনো ভালো আসছে। সব কিছু ঠিক থাকলে এবারো কোটি টাকার বেশি লাভবান হবেন বলে আশাবাদী তারা।

 

জসিম উদ্দিন নামের এক কৃষক জানান, গত বছর তার পাশের জমিগুলোতে তরমুজের ভালো ফলন দেখে এ বছর তিনিও ২ একর জমিতে ২ লাখ টাকা ব্যয়ে আবাদ করেছেন। ফলন দেখে তিনি খুশি। আশা করছেন ৭/৮ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করতে পারবেন।

 

এ অঞ্চলের মানুষ জমির মালিক হলেও এখানে তরমুজ চাষাবাদের জন্য দক্ষ নোয়াখালীর সুবর্ণ চরের মানুষ। সেখান থেকে কৃষকরা এসে এখানকার জমিগুলোতো আবাদ করেন। এতে তারাও বেশ লাভবান হচ্ছেন।

 

মো. ইমরান নামের এক তরমুজ চাষি জানান, তিনি সুবর্ণ চর থেকে ফেনীতে এসে তরমুজ আবাদ করছেন। প্রতিমাসে তিনি বেতন হিসেবে পাচ্ছেন ১৮ হাজার টাকা। এভাবে আরো শত শত শ্রমিক সুবর্ণ চর থেকে এসে তরমুজের আবাদ করছে। সোনাগাজী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন মজুমদার জানান, কৃষকদের তরমুজ চাষে উদ্বুদ্ধ করতে এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে কৃষি অফিস কাজ করছে।

 

এখানকার জমিগুলো তরমুজ উৎপাদনের জন্য বেশ উপযোগী। তরমুজের আকার বড় হয় ও স্বাদ অতুলনীয় যে কারণে বাজারে ব্যাপক চাহিদা আছে। আশাকরি এ বছর কৃষকরা বেশ লাভবান হবেন।

 

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের ইছাখালী ইউনিয়নে সাগরের কোল ঘেঁষে জেগে উঠা জমিতে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয়েছে তরমুজের। এক সময় এসব জমি গরু-মহিষের চারণক্ষেত্রে ছিল। পাশাপাশি ধান চাষ করতেন কৃষকরা। এখন এসব জায়গায় তরমুজের চাষ হচ্ছে।

 

জানা গেছে, উপজেলার ইছাখালী, মিঠানালা, কাটাছরা ও শাহেরখালী ইউনিয়নে চরের অধিকাংশ জমি খালি পড়ে থাকতো। এবার নোয়াখালীর সুবর্ণ চর উপজেলার ১১ জন উদ্যোক্তা মিরসরাইয়ে তরমুজ চাষের উদ্যোগ নিয়েছেন।

 

এখানকার মাটি তরমুজ চাষের উপযোগী হওয়ায় গত ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে তারা স্থানীয় কৃষকদের থেকে ৩ মাসের জন্য প্রতি একর জমি ১৫ হাজার টাকা খাজনায় বর্গা নেন। সেই জমিতে তারা তরমুজের বীজ বপন করেছেন।

 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ১৭৫ একরেরও বেশি বিস্তির্ণ এলাকা জুড়ে সবুজ লতার সমারোহ। বর্তমানে অধিকাংশ গাছে ফুল ফোটার পাশাপাশি তরমুজের মুকুল এসেছে।

 

স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, উপজেলা কৃষি অফিস থেকে যদি সহযোগিতা পাওয়া যায় তাহলে আমরাও তরমুজ চাষ করতে আগ্রহী। কারণ নিজেদের জমিতে অন্য এলাকা থেকে আসা কৃষকরা বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করে লাভবান হচ্ছেন। আমরা নিজেরা যদি চাষ করি তাহলে আমাদের এলাকা বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হবে।

 

তরমুজ চাষি মো. মোশাররফ বলেন, গত বছর আমাদের নোয়াখালী উপজেলার সুবর্ণচর এলাকার কৃষকরা এখানে তরমুজ চাষ করে লাভবান হয়েছেন। ডিসেম্বরে শেষের দিকে ১১ জন মিলে ৭০ একর জমিতে তরমুজের চারাগাছ রোপণ করেছি। এখন গাছের চারায় ফুল এবং মুকুল আসতে শুরু করেছে। আশা করছি ফলন ভালো হবে।

 

চাষি মো. আব্দুল হান্নান বলেন, আমরা নিজ উপজেলা সুবর্ণচরে তরমুজ চাষ করে সফল হয়েছি। এই প্রথম মিরসরাই উপজেলার ইছাখালী, মিঠানালা ও কাটাছরা ইউনিয়নের চরে স্থানীয় কৃষকদের থেকে জমি বর্গা নিয়ে চীন, আমেরিকা ও বাংলাদেশিসহ ৮ প্রজাতির তরমুজ চাষ করছি।

 

মিরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, মিরসরাইয়ে তরমুজ চাষ হয়েছে। বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে আমি এখনো দেখতে যেতে পারিনি। আগামী সপ্তাহে তরমুজের জমিগুলো পরিদর্শন করব। আবহাওয়া উপযোগী থাকলে ফলন ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তরমুজ চাষে পরিশ্রম অন্য রবিশষ্য থেকে বেশি।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version