-->

২২৩ পদশূন্য খুলনা ফায়ার সার্ভিসের, নেই পর্যাপ্ত সরঞ্জাম

এজাজ কায়েস, খুলনা
২২৩ পদশূন্য খুলনা ফায়ার সার্ভিসের, নেই পর্যাপ্ত সরঞ্জাম
ক্যাপশন: ডিফেন্স, খুলনা

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স খুলনা বিভাগের আওতায় ৬০টি স্টেশন রয়েছে। এসব স্টেশনে ২২৩টি পদে জনবল নেই। অধিকাংশ স্টেশনে নেই ফায়ার ফাইটার, চালক ও স্টেশন অফিসার। নেই পর্যাপ্ত সরঞ্জাম। এ অবস্থায় ধুঁকে ধুঁকে চলছে বিভাগীয় এই শহরের ফায়ার সার্ভিসের কার্যক্রম।

 

ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বলছেন, একদিকে পর্যাপ্ত জনবল ও সরঞ্জাম নেই। অন্যদিকে অগ্নিনির্বাপণে গিয়ে পানির উৎসের অভাব, বৈদ্যুতিক ও ডিশের তার, সরু সড়ক ও উৎসুক জনতার কারণে প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে কাজ করতে হচ্ছে তাদের। এমন পরিস্থিতিতেও গত বছর বিভাগে দুই হাজার ৩৪টি অগ্নিকান্ডের ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করেছেন তারা। এসব দুর্ঘটনায় দুই হাজার ৩২ জন আহত ও ২৬৫ জন নিহত হন।

 

বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কার্যালয় সূত্রে জানায়, বিভাগের ১০টি জেলায় ফায়ার সার্ভিসের ৬০টি স্টেশন রয়েছে। পাশাপাশি বাগেরহাটের ফকিরহাট ও চিতলমারী, সাতক্ষীরার তালা ও শ্যামনগরে চারটি স্টেশনের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। এখন উদ্বোধনের অপেক্ষা। কুষ্টিয়ার দৌলতপুর ও খুলনার পাইকগাছায় আরো দুটি স্টেশন নির্মাণের জন্য জমি চূড়ান্ত হয়েছে।

 

সচল ৬০টি স্টেশনের মধ্যে রয়েছে ‘এ’ শ্রেণির আটটি (জনবল প্রতিটিতে ৩৫ জন), ‘বি’ শ্রেণির ৪৪টি (জলবল প্রতিটিতে ২৭ জন), ‘সি’ শ্রেণির সাতটি (জনবল প্রতিটিতে ১৬ জন) ও নদী ফায়ার স্টেশন একটি (জনবল ১২ জন)। এসব স্টেশনে ১ হাজার ৬৮৮ জনবল থাকার কথা থাকলেও রয়েছে ১ হাজার ৪৬৫ জন। ২২৩টি পদ শূন্য।

 

এর মধ্যে উপসহকারী পরিচালক ১০টির মধ্যে একটি, সহকারী যোগাযোগ প্রকৌশলীর একটির মধ্যে একটি, স্টেশন অফিসার ৬৪ টির মধ্যে ৪৭টি, ফায়ার অফিসার ১১টি মধ্যে সাতটি, মবিলাইজিং অফিসার তিনটির মধ্যে তিনটিই, সাব অফিসার ৪৭টির মধ্যে একটি, লিডার ১৩১টির মধ্যে সাতটি, ফায়ার ফাইটার ১ হাজার ১৩টির মধ্যে ১২৬টি, ড্রাইভার ২৫৮টির মধ্যে ১৭টি পদ শূন্য।

 

অগ্নিনির্বাপণ কাজের জন্য রয়েছে পানিবাহী গাড়ি ৫৮টি, ছোট কাভার্ডভ্যান ৫৩টি, মহড়ার কাজে সরঞ্জার নেয়ার জন্য ১১টি গাড়ি, মহড়ার জন্য জনসংযোগ করতে একটি গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স ২২টি, পাজেরো চারটি, পাম্প ১০৩টি, বিশেষ গাড়ি ১৩টি ও জলযান পাঁচটি।

 

গত বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা ১ হাজার ২৪৪টি সড়ক দুর্ঘটনা, ২ হাজার ৩৪টি অগ্নিকান্ড, অন্যান্য ৯১টি দুর্ঘটনায় ভুমিকা রাখেন। ২ হাজার ৩৪টি অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ১৩ কোটি ৩৯ লাখ ৬৫ হাজার ৫০০ টাকার সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

 

আর ৫৯ কোটি ৫৬ লাখ ৫৮ হাজার টাকার সম্পদ উদ্ধার হয়। পাশাপাশি ১ হাজার ৮৭০টি বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনায় ২ হাজার ৩২ জনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার ও ২৬৫ জন নিহত হন।

 

ফায়ার সার্ভিসের একাধিক সদস্য জানান, অগ্নিনির্বাপণের সময় স্পটে যাওয়ার পথে ও যাওয়ার পর পানির উৎসের অভাব, বৈদ্যুতিক ও ডিশ লাইনের নিচু করে রাখা তার, সরু সড়ক, রাস্তায় থাকা বৈদ্যুতিক খুঁটি, বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় খুঁটি দিয়ে তৈরি নিচু গেট রাখার কারণে দ্রুত কাজ করার ক্ষেত্রে সমস্যা হয়। আর আগুন লাগার পর উৎসুক জনতার কারণেও সমস্যায় পড়তে হয়।

 

এ ছাড়া জনবল স্বল্পতা, ডুবুরি ইউনিটের অপ্রতুলতা, গাড়ির স্বল্পতা, বেতার যোগাযোগের বিঘœতা, বহুতল আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনে ফায়ার সেফটি বাস্তবায়ন না করায় সমস্যায় পড়তে হয়।

 

সংশ্লিষ্ট একাধিক সুত্র থেকে জানা যায়, খুলনা সদর ও টুটপাড়া স্টেশন ভবনটি পুরোনো ও জরাজীর্ণ। অনেক সময় ভবনের পলেস্তারা খসে পড়ে আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটে। আবার গাড়ি, কম্পিউটার, ওয়ারলেস যন্ত্রপাতিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ জরাজীর্ণ ভবনে বাস করেন ১৫০ জন ফায়ার কর্মী। যাদের জীবনের ঝুঁকিও রয়েছে। ফায়ার সার্ভিস সদস্যদের জন্য কোয়ার্টার ছিল, কিন্তু সেটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়।

 

খুলনা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক মো. তানহারুল ইসলাম জানান, দ্রুত প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে পুরোনো ভবন অপসারণ ও নতুন ভবন নির্মাণ প্রয়োজন। ফলে যানবাহন সুরক্ষা ও ঝুঁকিতে থাকা ফায়ার সদস্যদের নিরাপদ আবাসন গড়ে উঠবে। আর সুষ্ঠুভাবে ফায়ার কার্যক্রম গতিশীল করতে অতি প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি জরুরি ভিত্তিতে সরবরাহ করা প্রয়োজন।’

 

বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপপরিচালক মামুন মাহমুদ বিএফএম বলেন, ‘বিভাগের ফায়ার সার্ভিসের জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানেন। ফায়ার সার্ভিসের অপারেশনাল কর্মকান্ডে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রতিটি স্টেশনে জনবলসহ যন্ত্রপাতি চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অগ্রগতি হচ্ছে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version