-->

মেহেরপুরে আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে কুষ্ঠ রোগী

মেহেরপুর প্রতিনিধি
মেহেরপুরে আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে কুষ্ঠ রোগী
কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি

২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে কুষ্ঠমুক্ত করার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও আশানুরূপ হারে কমছে না কুষ্ঠ রোগী। সীমান্তবর্তী অনেক জেলায় নিয়মিত সনাক্ত হচ্ছে কুষ্ঠ রোগী। দেশের সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দশটি জেলার মোধ্য মেহেরপুর একটি। অবহেলিত এই রোগটি নির্মূলে বেশি বেশি সরর্চিং কর্মসূচির ওপর গুরুত্ব দেয়ার পরামর্শ চিকিৎসকদের।

 

এনজি ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে সঙ্গে নিয়ে নতুন পরিকল্পনা নিচ্ছে সরকার। প্রতি লাখ জনসংখ্যায় ৫-এর অধিক কুষ্ঠ রোগী থাকলে সেই এলাকাকে লাল চিহ্নিত হিসেবে গণনা করছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এমনই লাল চিহ্নিত দশটি জেলার মধ্যে একটি সীমান্তবর্তী জেলা মেহেরপুর। প্রতিনিয়ত কুষ্ঠ রোগী সনাক্ত হচ্ছে জেলাটিতে। ইতোমধ্যে আক্রান্ত হয়েছে শতাধিক ব্যক্তি। ছয়জন কুষ্ঠ রোগী পঙ্গুত বরণ করেছে।

 

অবহেলিত এই রোগটির ভয়াল থাবা কেড়ে নিয়েছে তাদের স্বাভাবিক জীবন। স্বাভাবিক চর্ম সমস্যা মনে করে অবহেলা করাই হয়েছে তাদের জন্য কাল। দীর্ঘদিন চিকিৎসা নিয়ে ভালো হলেও সারা জীবনের জন্য বয়ে বেড়াচ্ছেন চিহ্ন।

 

তাছাড়া নিয়মিত ওষুধ সেবনে কুষ্ঠ ভালো হলেও রয়েছে সামাজিক নানা বাধা। এসব কারনে কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি ভেঙে পড়েন মানসিকভাবে। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন আত্মীয়-স্বজন এমনকি নিজ পরিবারের সঙ্গেও। চিকিৎসার পাশাপাশি এসব জেলায় কুষ্ঠ রোগী পুনর্বাসন কেন্দ্র গড়ার দাবি রোগীদের।

 

মেহেরপুর গাংনী উপজেলার তেতুল বাড়ীয়া গ্রামের জামেলা খাতুন। কুষ্ঠ রোগের কথা বর্ণনা করতে গিয়ে জানান, আজ থেকে ১০ বছর আগে তার স্বামী মোশারফ হোসেন শরীরের পায়ে ও কোমরে ছোট দাগ দেখা দিলে চিকিৎসক তার কুষ্ঠ রোগ সনাক্ত করে। পরে সুষ্ঠু চিকিৎসার অভাবে ধীরে ধীরে এই দাগ ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে, এক পর্যায়ে তার পায়ে ক্ষতের সৃষ্ঠি হয়।

 

শরীরে কুষ্ঠের সংক্রমণ আর বয়সের ভারে ভারাক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। দীর্ঘদিন একই সঙ্গে বসবাস করায় তার এই সংক্রমণ একে একে পরিবারের অন্য প্রায় ১০ জন সদস্যদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। এই পরিবারের সদস্যদের মতো জেলার গাংনী উপজেলার কল্যাণপুর, করমদি, হিন্দা, মুজিবনগর উপজেলার সোনাপুর, শীবপুর, আনন্দবাসসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষের মাঝে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে এ রোগির সংখ্যা।

 

মেহেরপুর জেলা সিভিল সার্জন অফিসের তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, সরকারি হিসেব মতে, মেহেরপুর জেলায় ২০১৬ সালে হঠ্যাৎ করেই ৪০ জন রোগীর মাঝে ভয়াবহ মাত্রায় কুষ্ট রোগে সংক্রামণ পাওয়া যায় বিভিন্ন এলাকায়।

 

মেহেরপুর স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে, জেলায় ২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত কুষ্ঠ রোগীর সংখ্যা ২৫৩ জন, যার মধ্যে ৬৫ জন ভয়াবহ অবস্থায় সনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে বর্তমানে চিকিৎসা চলমান আছে ৩২ জনের । কুষ্ঠ নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা দি লেপ্রসি মিশন ইন্টারন্যাশনালের এক জরিপের তথ্য মতে এর সংখ্যা আরো বেশি বলে দাবি তাদের।

 

কুষ্ঠ নিয়ে কাজকরা একটি বেসরকারি সংস্থ্যার স্বাস্থ্যকর্মী সন্ধ্যা রানী বলেন, চিকিৎসায় কুষ্ঠ ভালো হলেও সেখানেও রয়েছে নানা বাধা। নতুন কুষ্ঠ রোগী সনাক্তকরণ প্রক্রিয়া এখনো অপ্রতুল, ভারতের সঙ্গে লাগোয়া সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে কুষ্ঠ রোগের প্রকোপ বেশি বলে দেখা যাচ্ছে এ সব জেলার ইতোমধ্যে রেডজোন ঘোষণা করা হয়েছে।

 

যে জেলাগুলোকে রেডজোন ঘোষণা করা হয়েছে, রংপুর, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, নীলফামারী, ঠাকুরগাও, পঞ্চগড়, জয়পুরহাট, মৌলভীবাজার ও মেহেরপুর। বিভিন্ন সময় ভারত থেকে কুষ্ঠ রোগীর অনুপ্রবেশ হচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয় চিকিৎসকদের।

 

মেহেরপুর সদরের UHFPO ডা. অলোক কামার দাস তিনিও একই মন্তব্য করেন। মাসুমা পারভীন, ব্যবস্থাপক, দি লেপ্রসি মিশন ইন্টারন্যাশনাল, ঢাকা তিনি বলেন, যদি প্রত্যন্ত অঞ্চলে কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্যকর্মী দিয়ে জেলার সকল গ্রামে কুষ্ঠ রোগি সনাক্ত করা সম্ভব না হয় তাহলে এর বিস্তার ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।

 

সরকারেরর কাছে কুষ্ঠ রোগী সনাক্ত করার দাবি জোরাল তোলেন তিনি। কুষ্ঠ নিয়ে কাজ করা, কানাডার স্বেচ্ছাসেবক কর্মী, টম ব্র্যাডলি বলেন, বর্তমানে কুষ্ঠ রোগের জীবাণু ধরা পড়েছে, এখন চিকিৎসা ও ওষুধের প্রয়োজন। এ রোগে আক্রান্ত রোগির সংখ্যা বাড়ছে। দ্রুত এই রোগটি প্রতিরোধ করা প্রয়োজন।

 

মেহেরপুরের সিভিল সার্জন ডা. জাওয়াহেরুল আনাম সিদ্দিকী বলেন, হাঁচি কাশির মাধ্যমে কুষ্ঠ ছড়ায়। এ রোগের জীবাণু বহুদিন সুপ্ত অবস্থায় থাকে। সচেতনতার অভাব ও রোগটি সম্পর্কে ডাক্তারকে না জানানো প্রধান বাধা ।

 

ইতোমধ্যে রোগটি সনাক্ত করতে কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সাস্থ্য বিভাগ। এখন শরীরে বড় বড় যে কোনো দাগের সৃষ্টি হলেও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে ওই সব গ্রামের এলাকাবাসী।

 

জেনে না জেনে চিকিৎসার অভাবে মারা যাচ্ছে অনেকে। বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে কুষ্ঠ আক্রান্ত রোগিদের সনাক্ত করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।

 

স্বাস্থ্য বিভাগের এমনটাই প্রত্যাশা।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version