বাবুল আহমেদ, মানিকগঞ্জ: মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার তেওতা ইউনিয়নের নিহালপুর হতে জাফরগঞ্জ পর্যন্ত ২২টি স্থানে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসবে মেতে উঠেছে বালুখেকোরা। নদীতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবাধে বালু উত্তোলন করা হলেও প্রশাসন নীরব রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার তেওতা ইউনিয়নের নিহালপুর হতে জাফরগঞ্জ পর্যন্ত যমুনা নদীর পাড় ঘেঁষেই বেড়িবাঁধকে উপেক্ষা করে প্রায় ৫টি গ্রামে ২২টি স্থানে অবৈধ ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে সরকারের রাজেস্ব ফাঁকি দিয়ে কোটি কোটি টাকার বালু চুরি করে বিক্রি করছে বালুখেকোরা।
নিহালপুর গ্রামে স্থানীয় ইউপি সদস্য মাসুদ, কৃষক লীগের সভাপতি অছিউর রহমান সিকো, বিশ্বজিৎ, মিজান খন্দকার, মুক্তার, মনির , মুন্না, শামীম ফকির, রুবেল সমেজঘর এলাকায় ফারুক, আরিফ, পান্নু ফকির, মানিক, তেওতা গ্রামে শ্যাম মিয়া,আব্দুল কাদের, আবুল, রেজা, আব্দল হালিম, জালাল সাতুরিয়া গ্রামে মুন্না, কাঞ্চন, জাফরগঞ্জ গ্রামে নান্নু মিয়া, নিপেন্দ্র, রাকিব, গ্রামবাসীকে জিম্মি করে বালু উত্তোলন করছে। তাদের বিরুদ্ধে এলাকাবাসী টুঁ শব্দ করতে সাহস পায় না।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে জানান, যমুনা নদীতে অসাধু বালু উত্তোলনকারীরা ক্ষমতাসীন দলের ব্যক্তি হওয়ায় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে উপজেলার তেওতা ইউনিয়নে ২২টি স্থানে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চালিয়ে যাচ্ছে। এতে নদীর পানি প্রবাহ কমে যাওয়াসহ বিভিন্ন স্থানে ভাঙন সৃষ্টি হচ্ছে। একই সঙ্গে বসতভিটা পড়েছে হুমকির মুখে। পাশাপাশি মেশিনের বিকট শব্দে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে এ অঞ্চলের মানুষ।
এ বিষয়ে প্রশাসনকে জানিয়েও কোনো প্রতিকার পায়নি আমরা। প্রশাসন মাসোহারা না পেলে মাঝে মধ্যে দু-একটি ড্রেজারের উপর লোক দেখানো অভিযান চালায়।বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ওইসব স্থানে চুরি করে বালু নেয়ার জন্য অবৈধ ড্রাম ট্রাক, ট্রাক্টরের সারিবদ্ধভাবে লম্বা লাইন দেখে যে কারো মনে হবে যেন বালু উত্তোলনের মহাউৎসব চলছে। আর যত্রতত্র ভাবে বালু উত্তোলনের ফলে রাস্তাঘাট ও বেড়িবাঁধ নষ্ট হয়ে একদিকে যেমন মানুষের চলাচলে অযোগ্য হয়ে পড়েছে অন্যদিকে ধুলাবালির স্তূপ পড়ে গেছে। এসব ধুলার কারণে বসতবাড়িতে থাকার অযোগ্য পরিবেশ হয়ে পড়েছে। অনেকেই এসব ধুলাবালির মধ্যে চলাচল করায় নানা ধরনের শ্বাসকষ্ট জনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। শুধু তাই নয়, সড়ক দিয়ে বেপরোয়া ভাবে ড্রাম ট্রাক ও ট্রাক্টর চলাচল করায় দুর্ঘটনারও সম্ভাবনা রয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী আরো জানান, তাদের চলাচলে রাস্তাঘাট, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নষ্ট হলেও দেখছে না কোনো স্থানীয় প্রশাসন। বালুদস্যুরা অসাধু কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সঙ্গে আঁতাত করে নির্বিকারে বালু ব্যবসা করে আসছে। এ যেন দেখার কেউ নেই।
বালু উত্তোলনকারী একাধিক ড্রেজার ব্যবসায়ীরা জানান, হালিম ও সাবেক চেয়ারম্যান কাদেরের মাধ্যমে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই আমরা নদীতে ড্রেজার চালাই।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আনিছুর রহমান খান বলেন, ড্রেজার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে শিবালয় উপজেলা প্রশাসনের কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা নেই, আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
ভোরের আকাশ/আস
মন্তব্য