-->

‘সজনে গ্রাম’ রঘুনাথপুর

মেহেরপুর প্রতিনিধি
‘সজনে গ্রাম’ রঘুনাথপুর

রঘুনাথপুর– মেহেরপুর সদরের ছোট্ট গ্রাম। গ্রামের যেদিকে চোখ যাবে, গাছে গাছে ঝুলছে সজনে ডাঁটা। এমন কোনো বাড়ি নেই, যেখানে কিষান-কিষাণিরা সজনে আবাদ করেননি। এখন রঘুনাথপুর মানুষের কাছে ‘সজনে গ্রাম’ নামে পরিচিতি পেয়েছে।

 

সার, কীটনাশক ও সেচ ছাড়াই এ বছর ব্যাপক ফলন হয়েছে সজনের। স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী সজনে ডাঁটার ভালো দামে খুশি গৃহিণীরা। একসময় তারা শুধু পারিবারিক চাহিদা মেটাতে বাড়ির আঙিনায় সজনে গাছ লাগাতেন। এখন রঘুনাথপুর গ্রামের বেশিরভাগ বাড়ির আঙিনা ও পতিত জমিতে গৃহিণীরা সজনে আবাদ করছেন।

 

ডাল কেটে মাটিতে পুঁতে দিলেই হয়ে যায় গাছ। শীতের শুরুতে ফুল আসে, শেষ না হতেই সজনে ডাঁটা খাওয়ার উপযোগী হয়। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি শজনে ডাঁটা ১০০ থেকে ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। রঘুনাথপুর গ্রামের গৃহবধূ সুমাইয়া খাতুন জানান, পুরুষরা মাঠেঘাটে কাজ করে। সংসারের কাজ সেরে তারা বাড়ির আশপাশের ফাঁকা জায়গায় সজনের ডাল লাগিয়ে যত্ন করেন। ১৫টি গাছ থেকে এরই মধ্যে ১৪ হাজার টাকার সজনে বিক্রি করেছেন। আরো অন্তত ১৬ হাজার টাকার ডাঁটা বিক্রি করতে পারবেন বলে জানান তিনি।

 

গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম জানান, মাঠে অন্যান্য সবজি চাষ করলেও সার-কীটনাশকের খরচ সামলে লাভের মুখ দেখা কঠিন। কিন্তু বাড়িতে অযত্ন-অবহেলায় বেড়ে ওঠা ২০টি গাছ থেকে এরই মধ্যে ২৬ হাজার টাকার ডাঁটা বিক্রি করেছেন তিনি। আরো ৩০ হাজার টাকার বেশি বিক্রি করতে পারবেন।

 

মেহেরপুর পৌর শহরের কাঁচামাল ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান জানান, শ্রমিকের মাধ্যমে রঘুনাথপুর থেকে প্রতিদিন সজনে ডাঁটা পেড়ে এনে বাজারে বিক্রি করেন তিনি। ঢাকায় ব্যাপক চাহিদা থাকায় ঠিকমতো ডাঁটা দিতে পারছেন না। নিরাপদ সবজি হিসেবে স্থানীয় বাজারেও সজনে ডাঁটার কদর অনেক।

 

জেলায় কত হেক্টর জমিতে সজনে গাছ আছে, তার হিসাব কৃষি বিভাগের কাছে নেই। তবে ছয় বছর আগে কৃষি বিভাগ মুজিবনগর কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় তিন উপজেলার কয়েকটি গ্রামে ১০ হাজার সজনে চারা বিনামূল্যে বিতরণ করে। পরে প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে গেলেও সেসব গ্রামই এখন সজনে গাছে ভরে আছে। কৃষি বিভাগের ধারণা, জেলায় প্রায় ২০০ হেক্টর জমিতে কয়েক লাখ সজনে গাছ রয়েছে। প্রতিটি গাছে গড়ে ২০ কেজি করে সজনে ডাঁটা হবে।

 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শঙ্কর কুমার মজুমদার জানান, ব্যাপক পরিসরে আবাদের কারণে রঘুনাথপুরকে সবাই এখন ‘সজনে গ্রাম’ নামে চেনে। নিরাপদ সবজি হিসেবে দাম ভালো পাওয়ায় বাণিজ্যিকভাবেও উৎপাদন হচ্ছে। কৃষি বিভাগ থেকে সজনে চাষে উৎসাহ হিসেবে প্রতিবছর বিনামূল্যে চারা দেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version