-->

‘কষ্ট পুরুষের সমান করলিও বেতন আমাগের একটু কম’

খুলনা ব্যুরো
‘কষ্ট পুরুষের সমান করলিও বেতন আমাগের একটু কম’
রূপসা নদীর পাড়ে খুলনা ডকইয়ার্ড

নিমার্ণাধীন বিশাল জাহাজে রং করছেন মরিয়ম বেগম। তপ্ত রোদে ক্লান্তহীন কাজ করে চলছেন তিনি। দম ফেলারও যেন ফুসরত নেই। তার মতো প্রায় অর্ধশত নারী জং ছাড়ানো (হাতুড়ি দিয়ে), গ্রান্ডিং মেশিন চালানো ও রং করার কাজ করছেন। নৌযান নির্মাণ ও মেরামতে কঠোর শ্রম দিচ্ছেন তারা।

 

খুলনার রূপসা উপজেলার রূপসা নদীর পাড়ের রহিমনগরের খুলনা ডকইয়ার্ডে কর্মরত মরিয়ম দুপুরে বলেন, ‘একজন পুরুষ যে কাজ করতি পারে, তা আমরাও করতি পারি। কষ্ট পুরুষের সমান করলিও বেতন আমাগের একটু কম।’

 

ওই নারী শ্রমিক বলেন, প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা শ্রম দিয়ে থাকি। আমরা যখন কাঁদার মধ্যে দাঁড়িয়ে কাজ করি তখন পায়ে গাম্বুস পরি। আর যখন রং করি তখন রং করার পোশাক পরি। শুধু চোখ দুটো বাইরে থাকে। ফলে আমাদের গায়ে রং লাগে না। রঙের কাজ করলে প্রতিদিন ২৮০ টাকা, ঠুকালে ২৬০ টাকা দেয়। আর মেশিনের কাজ করলে পুরুষদের দেয় ৫০০ টাকা আর নারীদের দেয় ৩০০ টাকা।

 

জুলেখা নামের আরেক শ্রমিক বলেন, প্রায় ২৫ বছর ধরে ডকইয়ার্ডে চাকরি করি। প্রথম দিকে এত নারী শ্রমিক ছিল না, এখন অনেক বেশি। একজন পুরুষের সমান আমরা কাজ করি। আমি গ্রামীণ মেশিনের কাজ করি। এর মাধ্যমে নৌযানের জংসহ ময়লা উঠে যায়। প্রথম দিকে ঠুকানোর কাজ করেছি। এরপর রং করেছি। পরে মেশিন ধরতে ধরতে কাজ শিখেছি। প্রায় ১৫ বছর ধরে মেশিনের কাজ করি। লঞ্চ, ট্রলার, জাহাজ ও পল্টুন সব নৌযানে কাজ করি।

 

মুর্শিদা নামের শ্রবণ প্রতিবন্ধী এক নারী শ্রমিক প্রায় ১২ বছর এ ডকইয়ার্ডে কাজ করেন। তিনি কথা না বলতে পারলেও খুব সুন্দর পরিশ্রমের কাজ করতে পারেন বলে জানান ডক কর্মকর্তারা।

 

খুলনা ডকইয়ার্ডের ইলেকট্রো মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার মো. শাহ নেওয়াজ বলেন, খুলনা শিপইয়ার্ডের পরেই মেসার্স খুলনা ডকইয়ার্ডের অবস্থান। খুলনায় ৪০টির অধিক ডকইয়ার্ড আছে। তার মধ্যে খুলনা ডকইয়ার্ড সবচেয়ে বড়।

 

এখানে খুলনা ও মোংলা বন্দরে একটি নতুন পন্টুন তৈরি করা হয়েছে ও একটি পানির বার্জ ১শ ফুট লম্বা মেরামত করা হয়েছে। এ ছাড়া বিআইডবিøউটির একাধিক পন্টুন নতুন তৈরি ও মেরামত করা হয়েছে। এখনো বিভিন্ন পন্টুনের মেরামতের কাজ চলছে।

 

এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি খুলনা ডকইয়ার্ডে বিভিন্ন ধরনের জলযান নতুন তৈরি ও মেরামত করা হয়। খুলনা ডকইয়ার্ড খুলনার বহু মানুষের কর্মসংস্থানের জায়গা। রোদ, বৃষ্টি-ঝড় উপেক্ষা করে পুরুষ শ্রমিকের পাশাপাশি খুলনা ডকইয়ার্ডে নারী শ্রমিকরা সমান শ্রম দিয়ে থাকেন।

 

খুলনা ডকইয়ার্ড মালিক সমিতির সভাপতি মো. সালাহউদ্দীন খান বলেন, ২০০৭ সালে খুলনা ডকইয়ার্ড প্রতিষ্ঠিত হয়। ডকইয়ার্ডে নৌযান নির্মাণ ও মেরামতে দিনরাত কাজ করছেন দুই শতাধিক শ্রমিক। এর মধ্যে নারী শ্রমিক রয়েছেন প্রায় অর্ধেক। খুলনা ডকইয়ার্ড ২০১৯-২০ অর্থবছরে জেলা পর্যায়ে সেবা খাতে সর্বোচ্চ মূল্য সংযোজন কর পরিশোধকারী সম্মাননা পায়।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খুলনা ডকইয়ার্ড ছাড়াও মেসার্স রকি ডকইয়ার্ড, মেসার্স রূপসা ডকইয়ার্ড, মেসার্স ফাতেমা ডকইয়ার্ড, মেসার্স মুন লাইট ডকইয়ার্ড, মেসার্স শিপসা ডকইয়ার্ড, মেসার্স চৌধুরী ডকইয়ার্ড, মেসার্স দাদাজী ডকইয়ার্ডসহ প্রায় ৪০টির অধিক ডকইয়ার্ড খুলনায় রয়েছে।

 

যেখানে প্রধানত ছোট-মাঝারি আকারের অভ্যন্তরীণ জলপথের জাহাজ এবং উপক‚লীয় জাহাজ নির্মাণ ও মেরামত করা হয়।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version