-->

টাঙ্গাইলে ভাঙাড়ি প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম

আ. রশিদ তালুকদার, টাঙ্গাইল
টাঙ্গাইলে ভাঙাড়ি প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম
টাঙ্গাইলে সরকারি রাস্তায় এভাবে ভাঙাড়ি প্রতিষ্ঠানের ক্ষতিকর বর্জ্য রাখা হয়েছে

টাঙ্গাইল জেলার ১২টি উপজেলায় রয়েছে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কারখানা বা ভাঙাড়ির দোকান রয়েছে বড়-ছোট মিলে প্রায় ৬০টির মতো। জেলা কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অফিসের সূত্র অনুযায়ী, এদের মধ্যে মাত্র ১০টি ভাঙাড়ি বা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানের বৈধ কাগজ পত্রাদিসহ অনুমোদন রয়েছে। বাকিগুলোর নেই অনুমোদন এবং প্রয়োজনীয় নথিপত্র।

 

সরেজমিনে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে তদন্ত করে জানা যায়, এসব বিপজ্জনক কারখানায় কর্মরত সংগ্রাহক ও শ্রমিকদের বিষয়ে মানা হচ্ছে না সুরক্ষা ব্যবস্থাপনা। নির্দিষ্ট স্থানে সুরক্ষা ব্যবস্থায় রাখা হচ্ছে না এসব বর্জ্য। রাস্তার পাশে এলোমেলোভাবে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। জেলায় কোথাও কোথাও সরকারি রাস্তা দখল করে এসব ক্ষতিকর বর্জ্য রাখা হচ্ছে, যা মানুষ ও প্রাণীক‚ল এবং পরিবেশের জন্য ভয়াবহ।

 

রাস্তায় ফেলানো বোতল, কৌটা বা অন্যান্য বর্জ্যরে মধ্যে সালফিউরিক এসিডের মতো ভয়ঙ্কর এসিড ও অন্যান্য রাসায়নিক থাকতে পারে। এসব প্রতিষ্ঠানের মালিক ও ব্যবস্থাপকদের কাছে প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে তারা ফায়ার, পরিবেশ ও কলকারখানা অধিদপ্তরের প্রতি কৃত্রিম ওজর বা দোহাই দেয়ার চেষ্টা করেছেন। তাদের জানিয়েই তারা এমনটি করছেন।

 

মূলত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বা ভাঙাড়ি কারখানায় আবর্জনা সংগ্রহ, পরিবহন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, পুনর্ব্যবহার এবং নিষ্কাশনের সমন্বিত প্রক্রিয়াকে করে থাকে। সাধারণত মানুষের কার্যকলাপে সৃষ্ট অপ্রয়োজনীয় বস্তুগুলো সংক্রান্ত কাজগুলোকে এবং বস্তুগুলোর থেকে স্বাস্থ্যসংক্রান্ত ক্ষতিকারক প্রভাব প্রশমিত করার জন্য, কিংবা পরিবেশের সৌন্দর্য্য রক্ষার কাজগুলোই ভাঙাড়ি দোকানগুলো করে থাকে।

 

আবর্জনা ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আবর্জনা থেকে পরিবেশের ক্ষতি রোধ করার কাজ এবং আবর্জনা থেকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য বস্তু আহরণ সংক্রান্ত কাজও করা হয়ে থাকে এসব ভাঙাড়ি নামক প্রতিষ্ঠানগুলোয়।

 

পরিবেশের অবনমন রোধ ও মানব শরীরে বিভিন্ন রোগের হাত থেকে মুক্তি জীববৈচিত্র্য রক্ষা ইত্যাদির উদ্দেশ্য বর্জ্যরে পরিমাণ হ্রাস, বর্জ্য পদার্থ সংগ্রহ, উপযুক্ত ব্যবস্থার মাধ্যমে বর্জ্য পদার্থের পুনর্ব্যবহার, নতুন সম্পদ সৃষ্টি, বর্জ্যরে যথাযথ সদ্ব্যবহার ইত্যাদি সম্মিলিত প্রক্রিয়াকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বলে থাকে।

 

নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য ও প্রয়োজন অনুসারে ভিন্ন ভিন্নভাবে আবর্জনাকে শ্রেণিভেদ হয়ে থাকে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ময়লা সংগ্রহের সুবিধার্থে ময়লাকে শ্রেণিবিভাগ করা হয়ে থাকে, পৌর এলাকার আবর্জনা, বাণিজ্যিক এলাকার আবর্জনা, শিল্প এলাকার আবর্জনা। যেখানে শেষ গন্তব্যস্থল হিসেবে ময়লাকে মূলত মাটিচাপা দেয়া হয়। শ্রেণিবিভাগটা এ রকম পচনশীল, অপচনশীল।

 

শহরে ময়লা পোড়ানো হয়, দহনযোগ্য, অদহনীয়, পুনর্ব্যহারযোগ্য, প্লাস্টিক, পুরোনো কাপড়, খবরের কাগজ, পেট-বোতল, কাচের বোতল, ধাতব বস্তু, অতিরিক্ত বড় ময়লা, ইলেকট্রনিক দ্রব্যাদি। এসব কিছু কিছু বর্জ্য রিসাইক্লিন করার সুবিধার্থে ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যমে তা নির্দিষ্ট মাধ্যমে প্রেরণ করা হয়ে থাকে। আবর্জনা থেকে বিকল্প উপায়ে শক্তি আহরণ করতে হলেও রাসায়নিক বৈশিষ্ট খুব ভালোভাবে জেনে রাখা প্রয়োজন রয়েছে।

 

আবর্জনার উৎস সম্বন্ধে আমরা বলতে পারি, আবর্জনা কল-কারখানা পুরোনো জলাশয় এবং শহরের নর্দমার ড্রেন ইত্যাদি জায়গা আবর্জনার উৎস হিসেবে আমরা ধরতে পারি। বর্তমানে আমরা নিজেদের অসচেতনের ফলে নানা রকম সামাজিক অনুষ্ঠানে নানা রকম সামগ্রী নিজেরা সঠিক জায়গায় না ফেলার কারণে সেখান থেকেও কিন্তু অনেক আবর্জনা সৃষ্টি হয়ে চলেছে।

 

যেমন বেঁচে যাওয়া খাবার এবং প্লাস্টিকের পাতা, ই-আর্বজনাসহ সঠিক জায়গায় ফেলছি না! ফলে আবর্জনা সৃষ্টি দিনকে দিন বেড়ে চলেছে এবং পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত ও দুর্গন্ধের কারণে সমাজে অনেক রোগ ছড়িয়ে পড়ছে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version