-->

দীর্ঘদিন পেরোলেও হয়নি পূর্ণাঙ্গ কমিটি

কাশেম হাওলাদার, বরগুনা
দীর্ঘদিন পেরোলেও হয়নি পূর্ণাঙ্গ কমিটি

আওয়ামী লীগ ও দুই অঙ্গ-সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন হয়নি। এসব সংগঠনের পদ প্রত্যাশী নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, আংশিক কমিটি ঘোষণার পর কেন্দ্র থেকে পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা দেয়ার নির্দেশনা থাকলেও তা বাস্তবায়ন করছেন না শীর্ষ নেতারা। এতে পদ প্রত্যাশী অনেকেই হতাশ হয়ে পড়েছেন।

 

সর্বশেষ ১৫ নভেম্বর ২০২২ বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে ধীরেন্দ্র দেবনাথ শমভুকে সভাপতি ও জাহাঙ্গীর কবিরকে সাধারণ সম্পাদক ও গোলাম সরোয়ার টুকুকে জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করে তিন সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। দীর্ঘ ৮ বছর পর সর্বশেষ এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। প্রায় ৩০ বছর ধরে জেলা আওয়ামী লীগে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে ধীরেন্দ্র দেবনাথ ও বর্তমান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির।

 

সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের উপস্থিত ছিলেন। তিনি বক্তব্যে দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশনা দেন। গঠনতন্ত্র অনুসারে জেলা আওয়ামী লীগ ৩৯ জন কর্মকর্তা ও ৩৬ জন সদস্যসহ মোট ৭৫ সদস্য বিশিষ্ট হবে। কিন্ত সম্মেলনের পাঁচ মাস পেরোলেও কেন্দ্রে পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দেয়া হয়নি।

 

জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মোতালেব মৃধা বলেন, আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সংশোধিত গঠনতন্ত্রে বলা আছে ৪৫ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে হবে। সম্মেলনে এ সংক্রান্ত নির্দেশনাও দেয়া হয়েছিল। কিন্ত ৫ মাস শেষ হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। যারা বছরের পর বছর দলের হয়ে কাজ করে আসছেন তারা একটা পদ পেতে অপেক্ষা করে। অপেক্ষার শেষ হয় না। আমরা চাই পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হোক।

 

জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক এক শীর্ষ পদের নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নতুন কমিটি ঘোষণায় বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়েছে। শুধুমাত্র জাতীয় দিবস ও দলের কিছু কর্মসূচি পার্টি অফিসে দায়সারা পালিত হয়।

 

এর অন্যতম কারণ দলের ত্যাগি পরীক্ষিত নেতাদের অবমূল্যায়ন ও অনেক ক্ষেত্রে বঞ্চনার শিকার হওয়া। এখন দল কিছু নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের খেয়াল খুশির কব্জায়। এ কারণেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেয়া হয় না। এভাবে একটা জেলায় আওয়ামী লীগের মতো সংগঠন চলা উচিত না।

 

পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রসঙ্গে বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বরগুনা-১ আসনের এমপি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শমভুর সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। তবে এবিষয়ে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধরাণ সম্পাদক গোলাম সরোয়ার টুকু বলেন, আমি যতদূর জানি কেন্দ্রের কাছে এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দেয়া হয়নি।

 

গঠনতন্ত্রে ৪৫ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেয়ার কথা বলা আছে। আমি বিষয়টি নিয়ে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে আলোচনা করবো। আশা করি আমরা শিঘ্রই পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেয়ার বিষয় নিয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছব।

 

২০২২ সালের ৭ মার্চ ১৭ বছর পর বরগুনা জেলা যুবলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। নতুন এ কমিটিতে রেজাউল করিমকে সভাপতি এবং আবুল কালাম আজাদকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। আগামী তিন বছরের জন্য এ কমিটির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। যুবলীগের জেলা কমিটি ১০১ সদস্যের হলেও এ কমিটিতে ২৮ জনের নাম দেয়া হয়েছে।

 

গঠনতন্ত্র অনুসারে জেলা যুবলীগের ১০১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি হবে। বাকি পদগুলো আগামী এক মাসের মধ্যে পূরণ করে কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে জমা দিতে বলা হলেও এক বছরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা হয়নি। এতে পদপ্রত্যাশী নেতাদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।

 

বরগুনা জেলা যুবলীগের পদ প্রত্যাশী কয়েকজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘দীর্ঘ ১৭ বছর পরে ২৮ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটির দিয়েছে কেন্দ্র। এক বছর হয়ে গেল আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে এখনো গড়িমসি চলছে। আমরা চাই বরগুনা জেলা যুবলীগে গঠনতন্ত্র মেনে দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেয়া হোক।

 

এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি রেজাউল করিম এটম বলেন, এটা আমাদের সংগঠনের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আমি কেন্দ্রীয় নেতাদের পরামর্শ নিয়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম করছি। কেন্দ্রে পূর্ণাঙ্গ তালিকা জমা দেয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি আবারো বলেন, এটা আমাদের দলের ইন্টারনাল বিষয়।

 

গত বছরের ২৪ জুলাই বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। রেজাউল কবির রেজা সভাপতি ও তৌশিকুর রহমান ইমরানকে সাধারণ সম্পাদক করে ৩৩ জনের নাম ঘোষণা করেন। এক বছরের জন্য ঘোষিত কমিটিতে ২০ জন সহ-সভাপতি। পাঁচজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ছয়জন সাংগঠনিক সম্পাদকের নাম ঘোষণা হয়। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুসারে জেলা ছাত্রলীগের ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি হবে।

 

সর্বশেষ রেজা-ইমরাণ কমিটি ঘোষণার পর কাক্সিক্ষত পদবঞ্চিত নেতারা এ কমিটির বিরুদ্ধাচারণ করে এবং সেই থেকে এখনো পর্যন্ত দুটি গ্রুপ মাঠে পরষ্পর বিরোধী কর্মসূচি ঘোষণা করে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়ে আসছে। যে কারণে আলোচিত মহররম কান্ড ঘটেছিল। কমিটি ঘোষণার সাত মাসেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন হয়নি। কমিটির মেয়াদ পাঁচ মাস বাকি থাকলে এখনো কেন্দ্রে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেয়া হয়নি।

 

এ বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল কবির রেজা বলেন, কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে পাঠানোর জন্য বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা প্রস্তত আছে। আমরা শীঘ্রই তালিকা কেন্দ্রে পাঠাবো।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version