-->
টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসন

ভিআইপি প্রার্থী লতিফ সিদ্দিকী দুই দলের গলার কাঁটা

আ. রশিদ তালুকদার, টাঙ্গাইল
ভিআইপি প্রার্থী লতিফ সিদ্দিকী দুই দলের গলার কাঁটা
টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনে আওয়ামী লীগ-বিএনপির একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী আগাম গণসংযোগ করছেন। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরোত্তম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করার পর জেলার আওয়ামী রাজনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তনের হাওয়া বইছে।

 

টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনে ওই প্রভাব ব্যাপকভাবে পড়েছে। ১৩টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত জাতীয় সংসদের ১৩৩ টাঙ্গাইল-৪ আসনে সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির গলার কাঁটা হিসেবে দেখছেন নির্বাচন বোদ্ধারা।

 

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সব দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা বেশ আগে থেকে গণসংযোগ শুরু করেছেন। বড় দুই দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে কুশল বিনিময়, নির্বাচনী এলাকায় পোস্টার ও লিফলেট সেঁটে জনগণের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন।

 

টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনটি বরাবরই ভিআইপি আসন হিসেবে চিহ্নিত। এ আসনের মহান স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠক ও সাবেক মন্ত্রী শাজাহান সিরাজ মৃত্যুবরণ করেছেন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে টাঙ্গাইলের সংগঠক আবদুল লতিফ সিদ্দিকী রাজনীতির মাঠ থেকে ছিটকে পড়েছেন।

 

আবদুল লতিফ সিদ্দিকী হজ ও তাবলিগ জামাত নিয়ে আপত্তিকর বক্তব্যের কারণে মন্ত্রিত্ব হারান, দল থেকে বহিষ্কৃত হন এবং সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এ আসনের শাজাহান সিরাজ ও লতিফ সিদ্দিকীর মধ্যে চির প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকলেও তাদের মধ্যে মঞ্চের বাইরে অত্যন্ত সুনিবিড় সুসম্পর্ক ছিল। দলীয় রাজনীতি থেকে বিচ্যুত হলেও আবদুল লতিফ সিদ্দিকী মনে করেন তিনি সাচ্চা আওয়ামী লীগার, আওয়ামী লীগ থেকে কেউ তাকে সরাতে পারবে না।

 

তিনি এখনো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর আস্থাশীল। নানা কথা ও আলোচনাচ্ছলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তিনি ‘দেবী’ বলে সম্বোধন করে থাকেন। টাঙ্গাইলের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণের কারণে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন এমন আভাস তার কাছের লোকজনের।

 

টাঙ্গাইল-৪ আসনে তিনি প্রকৃতার্থে অত্যন্ত জনপ্রিয় প্রার্থী। তবে তিনি কোনো কারণে নির্বাচনে অংশ না নিলে তার সহধর্মিণী সাবেক এমপি বেগম লায়লা সিদ্দিকী নির্বাচন করবেন এমন আলোচনা স্থানীয় পর্যায়ে শোনা যাচ্ছে।

 

জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগের পর তিনি নিয়মিত সস্ত্রীক এলাকায় যাতায়াত করছেন। কাছের লোকদের নিয়ে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন। তিনি নির্বাচনী মাঠে থাকলে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দলের জন্যই বড় বাধা বলে মনে করেন উভয় দলের নেতাকর্মীরা।

 

এ আসনে সাবেক মন্ত্রী শাজাহান সিরাজের মেয়ে ব্যারিস্টার সরোয়াত সিরাজ শুক্লা (শুক্লা সিরাজ) প্রয়াত বাবার অনুসারীদের সাথে যোগাযোগ রাখছেন। নানা সামাজিক কাজে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দিচ্ছেন। ঢাকার গুলশান সোসাইটির সাবেক সেক্রেটারি শুক্লা সিরাজ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবেন এমনটাই মনে করছেন তার কাছের লোকজন।

 

স্থানীয় রাজনৈতিক বোদ্ধারা মনে করছেন, টাঙ্গাইল-৪ আসনটি ভিআইপি হলেও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের আসন হিসেবে আওয়ামী লীগ ছেড়ে দিতে পারে। সেক্ষেত্রে মহাজোটের অন্যতম শরিক দল জাতীয় পার্টির (এরশাদ) প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার লিয়াকত আলী এ আসনে মনোনয়ন পেতে পারেন।

 

এ আসনটি কৃষক শ্রমিক জনতা লীগও দাবি করে আসছে। সবশেষ মহাজোটের কাছ থেকে তারা এ আসনটি পেলে কাকে প্রার্থী করবেন তা জানা যায়নি। তবে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের স্থানীয় সভা-সমাবেশে সা’দত কলেজের সাবেক ভিপি শামীম আল মনসুর আজাদ সিদ্দিকী কৌশলে প্রার্থিতা জানান দিচ্ছেন।

 

জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭৩ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ৩ বার, বিএনপি প্রার্থী ৩ বার, জাতীয় পার্টির প্রার্থী একবার, জাসদ (সিরাজ) প্রার্থী একবার এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী একবার জয়লাভ করেছেন।

 

মহান মুক্তিযুদ্ধের সূতিকাগার টাঙ্গাইলের কালিহাতী থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ আবদুল লতিফ সিদ্দিকী ১৯৭০ সালে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য, এরপর ১৯৭৩, ১৯৯৬, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এ আসনে যিনি এমপি নির্বাচিত হয়েছেন তার দলই সরকার গঠন করেছে এজন্য এ আসনকে ‘শুভ আসন’ হিসেবে জনশ্রুতি রয়েছে।

 

সরেজমিনে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০০৮ সালে শাহজাহান সিরাজ জেলহাজতে থাকায় এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন দেয়া হয় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য শিল্পপতি লুৎফর রহমান মতিনকে। তিনি আওয়ামী লীগের আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর কাছে পরাজিত হন। লতিফ সিদ্দিকী এমপি হওয়ার পর সরকারের মন্ত্রী হিসেবে এলাকার বেশ উন্নয়ন করেন।

 

সর্বশেষ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে পুনরায় আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হন। এ আসনে আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর জনপ্রিয়তা এখনো ঈর্ষনীয়।

 

টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনে শাসকদল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অন্তঃকোন্দল সীমাহীন। এ আসনের আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনগুলো দৃঢ় সাংগঠনিক দক্ষতায় নিয়ন্ত্রণ করতেন আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। তার অনুপস্থিতিতে দলের সর্বেসর্বা এখন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোজহারুল ইসলাম তালুকদার।

 

এদিকে, আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর পদত্যাগের পর উপনির্বাচনে এমপি হন মোহাম্মদ হাছান ইমাম খান সোহেল হাজারি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নে মোহাম্মদ হাছান ইমাম খান সোহেল হাজারি নির্বাচিত হন। স্থানীয় সংসদ সদস্য মোহাম্মদ হাছান ইমাম খান সোহেল হাজারির সঙ্গে উপজেলা আ’লীগের সভাপতি মোজহারুল ইসলামের সুসম্পর্ক থাকলেও ভেতরে ভেতরে দূরত্ব যোজন যোজন।

 

উভয়ের মধ্যকার অভ্যন্তরীণ সম্পর্ক সাপে-নেউলে। কেউ কাউকে সহ্য করেন না। সভা-সমাবেশ ও দলীয় কর্মসূচি একত্রে করলেও অভ্যন্তরীণ দূরত্বটা স্পষ্ট। মোজাহারুল ইসলাম তালুকদারের অভিযোগ, এমপি সোহেল হাজারি বিএনপি-জামায়াতের লোক নিয়ে চলাফেরা করেন, আ’লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীদের গুরুত্ব দেন না।

 

আর এমপি সোহেল হাজারির বক্তব্য হচ্ছে, উপজেলা আ’লীগের সভাপতি তাকে দলীয় কাজে খুব কমই ডাকেন, যথাযথ মূল্যায়নও করেন না। সাংগঠনিক কর্মকান্ডের তিনি নিজেই উপস্থিত হন।

 

বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ হাছান ইমাম খান সোহেল হাজারি আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হবেন। দলীয় মনোনয়নও তিনিই পাবেন এমন বিশ্বাস তার কর্মী-সমর্থকদের। সোহেল হাজারি প্রতি সপ্তাহের অন্তত ৪-৫ দিন ভোর থেকে রাত পর্যন্ত এলাকার মানুষের খোঁজখবর নেন।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version