-->

কুমিল্লার বাজারে বিষাক্ত দ্রব্য মিশ্রিত সুপারি, বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

মশিউর রহমান সেলিম, লাকসাম, কুমিল্লা
কুমিল্লার বাজারে বিষাক্ত দ্রব্য মিশ্রিত সুপারি, বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি
কুমিল্লার হাটবাজার জুড়েই এসব সুপারি রাসায়নিক মিশ্রিত করে বিক্রয় হয়

কুমিল্লার দক্ষিণাঞ্চল লাকসাম, বরুড়া, লালমাই, নাঙ্গলকোট ও মনোহরগঞ্জ উপজেলার হাটবাজার জুড়ে বিষাক্ত দ্রব্য মিশ্রিত সুপারি ব্যবসা যত্রতত্র ভাবে জমে উঠেছে। এতে সকল শ্রেণির মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি মারাত্মকভাবে বাড়ছে। এ ব্যাপারে জেলা-উপজেলা সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য দপ্তর কর্মকর্তারা রহস্যজনক কারণে যেন অনেকটাই নিরব দর্শকের ভূমিকায়।

 

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, জেলার দক্ষিণাঞ্চলের সবকটি উপজেলায় সাধারণ মানুষ এ সুপারি পণ্যটি পান, চুনসহ মসলার সঙ্গে কাঁচা কিংবা শুকনো সমানভাবেই খেয়ে থাকে। মানবদেহ চাঙা রাখতে এ সুপারি প্রায় ৬ কাপ কপির সমান কার্যকর বলে অভিমত অনেকের।

 

এ অঞ্চলের প্রায় ৯০ ভাগ মানুষ মেহমান আপ্যায়ন, বিয়েবাড়িসহ নানা সামাজিক অনুষ্ঠানে এ সুপারি খেয়ে থাকেন। আবার এক শ্রেণির মানুষ এটিকে সাধারণত দেখে ভালোবাসার প্রতীক কিংবা মানবদেহের কিছু কিছু রোগের প্রতিকার হিসেবেও ব্যবহার করে থাকেন।

 

স্থানীয় চিকিৎসকদের একাধিক সূত্র জানায়, প্রতি বছর এ অঞ্চলের মানুষ এ সুপারি খাওয়ার ফলে নানা ভাবে স্বাস্থ্যঝুঁকির শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে মুখে, গলায় ক্যান্সারসহ নানা জটিল রোগের মারাত্মক ঝুঁকি রয়েছে। এ সুপারিকে নিরব মরণঘাতক হিসেবে উল্লেখ করেছেন কেউ কেউ।

 

কারণ হিসেবে এ সুপারিতে রয়েছে নিকোটিন, অ্যালকোহল ও ক্যাফেইনের উপাদানের প্রভাব এবং আবেগপ্রবন মাদক হিসেবেও উল্লেখ করেন কেউ কেউ। যদিও সকল শ্রেণির মানুষ কেউ শখ করে কিংবা দৈনন্দিন তালিকা এবং পারিবারিক ঐতিহ্য হিসেবে এ পান-সুপারি ব্যবহার করছে। এর মধ্যে কর্মক্ষম পুরুষ ও বৃদ্ধ নারীদের মাঝে এর ব্যবহার বেশি।

 

পাইকারি ও খুচরা দোকানিরা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কাঁচাসুপারি সংগ্রহ করে শুকিয়ে ফরমালিনসহ বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য মিশ্রন পানিতে ৪/৫ দিন ভিজিয়ে কিংবা পঁচা-কাদা মাটির গর্তে এবং মাটির পাতিল ও বড় ড্রামে ৮/১০ দিন ভিজিয়ে রেখে শুকিয়ে অবশেষে চিকন চিকন ভাবে কেটে মোটা অঙ্কের লাভে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছেন।

 

স্থানীয় ভুক্তভোগী লোকজন জানায়, ওইসব ব্যবসায়ীরা বিশেষ বিশেষ দিন কিংবা নানা অনুষ্ঠান ঘিরে গলাকাটা দামে বিক্রি করছে। কিন্তু এ সুপারির অভ্যান্তরে কী আছে এবং এ ব্যবসার প্রসার কীভাবে বাড়ছে তা কিন্তু কেউ জানে না। এ অঞ্চলে পারিবারিকভাবে ছাড়া দৃশ্যমান কোনো সুপারি বাগান নেই।

 

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন জেলার হাটবাজার থেকে নানা জাতের সুপারি সংগ্রহ করে থাকেন। দামের বেলায় পাইকারি ও খুচরার ক্ষেত্রে অনেক তফাত। খুচরা বাজারে কাঁচা সুপারির প্রতি ডজন ১২০/১৫০ টাকা এবং শুকনো সুপারির প্রতি কেজি ৩৫০/৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মূলত এ পণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে কার কি ভ‚মিকা কেউ কিন্তু খবর রাখেন না।

 

এ দিকে হাটবাজারগুলোতে চিকন- কাটা সুপারি আমদানির মহোৎসব চলছে। সুপারিগুলো বিভিন্ন মহানগরীর শহরগুলোর কারখানা থেকে বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য মিশ্রণ হয়ে ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে এ অঞ্চলে বাজারজাত হচ্ছে।

 

এ ব্যাপারে জেলা-উপজেলা স্বাস্থ্য দপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট অন্য বিভাগের একাধিক কর্মকর্তাদের মুটোফোনে বার বার চেষ্টা করেও তাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version