রংপুর অঞ্চলে নারী শিক্ষাকে এগিয়ে নিতে ৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট। কর্মমূখী শিক্ষায় নারীদের এগিয়ে নিতেই রংপুর নগরীর শালবন এলাকায় তিন একর জমির ওপর এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করছে সরকার। প্রতিবছর এখানে ৪০০ শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবেন।
রংপুর ছাড়াও সিলেট, বরিশাল, ও ময়মনসিংহ বিভাগীয় শহরে সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত¡াবধানে ‘চারটি মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট স্থাপনা’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ৭টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে ৭টি প্যাকেজের মাধ্যমে এই প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং ফুটওয়্যার, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি, ফুড প্রোসেসিং অ্যান্ড প্রিজারভেশন, ওয়েব ডিজাইনিং, ওসনোগ্রাফি, গার্মেন্টস ডিজাইন অ্যান্ড প্যাটার্নমেকিং, আর্কিটেকচার অ্যান্ড ইন্টেরিয়র ডিজাইন, সফটওয়্যার ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এবং অডিও অ্যান্ড সাউন্ড টেকনোলজি কোর্স থাকবে। এ চারটি মহিলা পলিটেকনিক ইসস্টিটিউটে প্রতি বছর ১ হাজার ৬০০ জন নারী শিক্ষার্থীর ভর্তির সুযোগ সৃষ্টি হবে।
২০১৮ সালের ৩ মার্চ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় প্রকল্পটির অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। ওই বছরের ২৫ মার্চ প্রকল্প বাস্তবায়ন করার প্রশাসনিক আদেশ দেয়া হয়। কিন্তু কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের বাস্তবায়নে ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ থাকলেও সেই সময়ের মধ্যে কাজ শুরু করা হয়নি। পরে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া হাতে নেয় সংশ্লিষ্ট দপ্তর।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে কার্যাদেশ অনুযায়ী এই প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও মাঝে মহামারি করোনায় কিছুটা থমকে যায়। মহামারি করোনার প্রভাব কিছুটা কমলে বিধিনিষেধ মেনে পরবর্তীতে ২০২১ সাল থেকে কাজটি পুরোদমে আবার শুরু হয়।
প্রকল্পেরটির মধ্যে রয়েছে, ভূমি অধিগ্রহণ-ক্রয়, ভ‚মি উন্নয়ন, প্রশাসনিক ভবন, একাডেমিক ভবন, ওয়ার্কশপ, অধ্যক্ষের বাসভবন, শিক্ষক এবং অফিসারদের জন্য ডরমেটরি, স্টাফ কোয়ার্টার, মহিলা হোস্টেল, সীমানা প্রাচীর, অভ্যন্তরীণ রাস্তা, গার্ড রুম, অনাভ্যন্তরীণ বৈদ্যুতিক কাজ, গভীর নলক‚প, পানির পাইপলাইন, আন্ডারগ্রাউন্ড ওয়াটার রিজারভার, ওভারহেড পানির ট্যাংক, অভ্যন্তরীণ সারফেস ড্রেন, মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ, শহীদ মিনার, ট্রান্সপোর্ট-ভেহিকেল, মেশিনারি-যন্ত্রপাতি, জার্নাল এবং বই, আসবাবপত্রসহ বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরীর শালবন এলাকায় রংপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের পাশেই নারীদের জন্য উত্তরাঞ্চলের প্রথম এই মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের নির্মাণ কাজ চলছে। শ্রমিক, মিস্ত্রিরা ইট, পাথর, বালু, সিমেন্ট, রডের সংমিশ্রণে গড়ে তুলছেন শিক্ষার্থীদের পাঠদানের ভবন।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, পুরো প্রকল্পের বিভিন্ন অংশের কোথাও ৬০ ভাগ, কোথাও ৮০ ভাগ আবার কোনো ক্ষেত্রে ৩০ ভাগ কাজ এগিয়েছে। তবে নির্মাণ কাজ অব্যাহত থাকায় দ্রুত সময়ের মধ্যে পুরো প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।
রংপুর জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা বলেন, দেশে ও বিদেশে বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ চাকরির বাজারের চাহিদার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টির লক্ষ্যে এই পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটটি নির্মাণ করা হচ্ছে। বর্তমান সরকার কারিগরি শিক্ষার প্রসার ও নারীদের অগ্রাধিকার সম্প্রসারণে যেভাবে কাজ করছে, তারই প্রতিচ্ছবি এটি। রংপুর বিভাগে এটিই প্রথম মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট হচ্ছে।
সহকারী প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা আরো বলেন, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো এবং অন্যান্য ভৌত সুবিধা তৈরির কাজ প্রায় ৬০ ভাগ হয়েছে। আশা করছি বড় কোনো সংকট তৈরি না হলে ২০২৫ সালের মধ্যেই পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।
আগামী বছর থেকেই রংপুর মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ভর্তি কার্যক্রম শুরুর সম্ভাবনা রয়েছে।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য