গত কয়েকদিনের তাপদাহ ও ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে কুমিল্লা দক্ষিণাঞ্চলের লাকসাম, বরুড়া, লালমাই, নাঙ্গলকোট ও মনোহরগঞ্জ উপজেলার মানুষ। চৈত্র মাসজুড়ে প্রচন্ড খরা ও ভ্যাপসা গরমে মানুষশূন্য হয়ে পড়েছে এলাকার অলি-গলি, হাটবাজার ও রাস্তাঘাট।
পবিত্র রমজান মাসের শুরুতে ২-৩ দিন কিছুটা বৃষ্টি হলেও গত ২০ দিনে তীব্র খরা, গরমের তাপদাহে ৫টি উপজেলার জনজীবন, গ্রামীণ জনপদ বিপর্যস্ত ও দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। ফলে নানা ভাইরাস রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার শিশু-কিশোর ও বৃদ্ধসহ সব পেশার মানুষ।
এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে বৃষ্টি না হওয়ায় ধুলাবালুতে বাতাসে বিষাক্ত শিসা ছড়াচ্ছে এবং পুড়ে যাচ্ছে গাছপালা ও আবাদি জমির ফসল। এদিকে অবৈধ ট্রাক্টর-ভেগু দিয়ে মাটি কাটার ফলে সরকারের কাঁচা-পাকা সড়কগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ধুলোবালি উড়ে এলাকার পরিবেশ দূষিত হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, টানা ফালগুন-চৈত্র মাসজুড়ে গরমের তীব্রতায় এ অঞ্চলের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। শত শত শিশু-কিশোর ও বৃদ্ধ আক্রান্ত হচ্ছে গরমজনিত বিভিন্ন ভাইরাস রোগে। গত কয়েক সপ্তাহে জেলা দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ৩ সহস্রাধিক ভাইরাস রোগীকে সরকারি হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ক্লিনিক ও প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
ওষুধের দোকানগুলোতে বিভিন্ন ভাইরাস রোগীদের ভিড় বাড়ছে। এ অঞ্চলে প্রচন্ড তাপদাহ ও গরমে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে মানুষ। দিনে প্রচন্ড গরমে এ অঞ্চলের ছিন্নমূল মানুষ, শিশু-কিশোর ও বৃদ্ধদের পোহাতে হচ্ছে বাড়তি দুর্ভোগ।
গত ২৪ ঘণ্টায় এ অঞ্চলের তাপমাত্রা মৌসুমের সর্বোচ্চ বৃদ্ধি পেয়েছে। খাল-বিল, পুকুর, নদী এখন পানিশূন্য। মানুষ বাজার থেকে বিশুদ্ধ পানির নামে বিভিন্ন ব্রান্ডের বোতল ও জার এবং ভেজাল ওষুধ কিনে প্রতারিত হচ্ছেন।
সূত্রগুলো জানায়, স্থানীয় আবহাওয়া অফিস টানা ভ্যাপসা গরমের আগাম বার্তা ঘোষণা দিয়েছে। চলমান ইরি-বোরো মৌসুমে প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশংকা করলেও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বর্ষা মৌসুম অনেক দেরি হচ্ছে। ফলে আসন্ন আমন ধান, গ্রীষ্মকালীন শাকসবজি ও মৎস্য চাষে বর্তমান পানি সংকটে বড় ধরনের দুর্ভোগে পড়েছে কৃষকরা। চৈত্রের এ গরমের তাপদাহে স্থানীয় খেটে খাওয়া, দিনমজুর ও ছিন্নমূল মানুষের জীবনযাত্রার ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়েছে।
স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসক জানান, চলমান রমজান মাসের শুরু থেকে গত কয়েকদিনের টানা গরমে ভাইরাসজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ফাল্গুন-চৈত্রের তাপদাহ ও দিনে ভ্যাপসা গরম ও রাতে শীত এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ডায়রিয়া, আমাশয়, চর্ম ও এ্যাজমাসহ বিভিন্ন ভাইরাস রোগীর সংখ্যাই বেশি। পরিষ্কার-পরিচছন্নতা, প্রচুর ঠান্ডা পানি, ঠান্ডাজাতীয় খাবার, স্যালাইন, শরবত, আখের রস, জুস, আইস ও মৌসুমী ফল-ফলাদি খাওয়ার পরামর্শ দেন তারা।
এ তাপদাহ কেবল জনজীবনে অস্থিরতা আনছে না বরং মানবদেহের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছে। তার ওপর দিনে-রাতে পিডিবি ও পল্লীবিদ্যুৎ বিভাগের বিদ্যুৎ ভেলকিবাজি তো আছেই।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য