-->
শিরোনাম
নোয়াখালী-৪ আসন

আওয়ামী লীগে পরিবর্তন চায় তৃণমূল, আন্দোলনমুখী বিএনপি

এ আর আজাদ সোহেল, নোয়াখালী
আওয়ামী লীগে পরিবর্তন চায় তৃণমূল, আন্দোলনমুখী বিএনপি
নোয়াখালী-৪ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা

জাতীয় সংসদের ২৭১ নম্বর আসন নোয়াখালী-৪, সদর ও সুবর্ণচর উপজেলা নিয়ে গঠিত। পুরো জেলার রাজনীতি সদর থেকেই নিয়ন্ত্রণ হয় বলেই আসনটি সব দলের কাছেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৫৬ সালের যুক্তফন্ট্রের উপনির্বাচনে জাতীয় নেতা আবদুল মালেক উকিল সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর দীর্ঘদিন আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে থাকে।

 

পরবর্তীতে ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে বিভাজনের কারণে আসনটি দখলে নেয় বিএনপি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের ত্রিমুখী লড়াইয়ে পুনরায় আসনটি দখলে নেয় আওয়ামী লীগ।

 

আসনটিতে বর্তমান সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। সম্প্রতি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ হারিয়ে সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর রাজনীতির প্রভাবে কিছুটা ভাটা পড়ে। এতে তার বিরুদ্ধে তৈরি হয়েছে বিপক্ষ বলয়। আওয়ামী লীগের এই মুখোমুখি অবস্থানে ভোটের মাঠে সুখের ঘুম দিতে চায় বিরোধী শিবির। আওয়ামী লীগের বিভাজনই এখানে বিএনপির বড় শক্তি। ক্ষমতাসীন দলের এই গ্রুপিং-দ্বন্দ্বকেই পুঁজি করে আসনটি পুনরুদ্ধার করতে চায় বিএনপি।

 

‘আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে চ্যালেঞ্জিং’ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার এমন বার্তায় নোয়াখালী-৪ আসনে নড়ে-চড়ে উঠেছেন নেতারা। এই আসনে আওয়ামী লীগের মধ্যে বিভাজনের কারণে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কে হবেন দলীয় প্রার্থী সেটি এখনো নিশ্চিত না হলেও বিভিন্ন সভা-সমাবেশ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তৃণমূলের কর্মীদের চাওয়ায় একাধিক প্রার্থীর নাম ওঠে এসেছে।

 

আওয়ামী লীগের মধ্যে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নোয়াখালী-৪ আসনে বর্তমান এমপি একরামুল করিম চৌধুরীর বাইরে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিম, জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি, সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জাতীয় নেতা আবদুল মালেক উকিলের ভ্রাতুষ্পুত্র অ্যাডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহিন।

 

এ ছাড়া শেষ পর্যন্ত আরো দু-একজনের নামও আসতে পারে। জাতীয় রাজনীতিতে বিএনপির অবস্থান আন্দোলনমুখী হলেও আসনটিতে বিএনপির একক প্রার্থী হিসেবে দলটির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান ছাড়া এখন পর্যন্ত অন্য কারও নাম শোনা যায়নি।

 

অন্যদিকে, এই আসনে মহাজোট থেকে মনোনয়ন চাইবেন বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নানও। আওয়ামী লীগের গ্রুপিং এবং দ্বন্দ্ব এর কারণে এই আসনে তুরুপের তাস হতে পারেন তিনি।

 

সদর ও সুবর্ণচর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে আওয়ামী লীগের মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, অপরাজনীতি, দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি, চাকরি বাণিজ্য, লুটপাট এবং গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার কারণে একরামুল করিম চৌধুরী নেতাকর্মী শূন্য হয়ে পড়েছেন। বর্তমানে একরামুল করিম চৌধুরীর বিরুদ্ধে নোয়াখালী পৌরসভা, সদর ও সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতৃবৃন্দ একাট্টা হয়েছেন।

 

নেতাকর্মীদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় থাকাকালীন ধারাবাহিক উন্নয়ন করলেও দুর্নীতি, টেন্ডারবাজির কারণে সদর-সুবর্ণচরে টেকসই উন্নয়ন হয়নি। চাকরি বাণিজ্য, স্বজনপ্রীতির কারণে দলীয় সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত হয়েছেন দুঃসময়ের নেতাকর্মীরা। স্থানীয় সাংসদের কাছে মূল্যায়িত হয়েছেন অনুপ্রবেশকারীরা। এতে নেতাকর্মীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। তাই আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে দলীয় প্রার্থীর পরিবর্তন চান তারা।

 

অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের অপর একটি অংশ একরামুল চৌধুরীর মনোনয়ন নিশ্চিত দাবি করে বলেন, গত টানা তিন মেয়াদে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। তাদের দাবি, এলাকার ভোটাররাও চান একরামুল করিম চৌধুরী আবারো এমপি হোক।

 

সদর উপজেলার নোয়াখালী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের একাধিক নেতাকর্মী বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় অথচ টাকার বিনিময়ে চাকুরি পায় জামায়াত-বিএনপি ও অনুপ্রবেশকারীরা। নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ব বিদ্যালয় এই ইউনিয়নে অবস্থিত কিন্তু গত ১৪ বছরে এই ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কোনো কর্মীর সেখানে চাকরি হয়নি। আগামী নির্বাচনে দল এবং দলের কর্মীদের মূল্যায়ন করবে জেলা হেড কোয়ার্টার থেকে ক্লিন ইমেজের এমন ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেয়া প্রয়োজন।

 

সদর উপজেলা অশ্বদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন বাবলু বলেন, আমাদের নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা স্মার্ট বাংলাদেশ বির্নিমাণের ঘোষণা দিয়েছেন। সেই স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে প্রয়োজন স্মার্ট নেতৃত্ব। বর্তমানে নোয়াখালীতে অসুস্থ রাজনীতি চলছে, সেটাকে সুস্থ ধারায় ফিরিয়ে আনতে জেলা সদর থেকে আগামী সংসদ নির্বাচনে যোগ্যতাসম্পন্ন ক্লিন ইমেজের স্মার্ট ব্যক্তি মনোনয়ন দিলে দল এবং জনগণ উপকৃত হবে।

 

সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক এক শীর্ষ নেতা ও বর্তমান জনপ্রতিনিধি বলেন, আমরা মাঠ পর্যায়ের কর্মী। ২০১৯ সালের সম্মেলনে আমরা সুবর্ণচরের মানুষ একরামুল করিম চৌধুরীর জন্য মাইজদী গিয়ে উনার প্রতিদ্ব›দ্বী সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীর লোকজনের হাতে মার খেয়েছি, হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি।

 

কিন্তু ২০২২ সালে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে একরামুল করিম চৌধুরী আমাদের যেই লোকে মারধর করেছে, সেই লোকের পক্ষে প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়েছেন। তিনি ত্যাগী কর্মীদের মূল্যয়ন করেননি। মাঠের কর্মীরা পরিবর্তন চায়। সেই ক্ষেত্রে, একরামুল করিম চৌধুরীর বাহিরে মাঠে ভোট করার মতো অবস্থান আছে জাতীয় নেতা আবদুল মালেক উকিলের ভাতুষ্পুত্র অ্যাডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহিনের। কারণ সুবর্ণচরের প্রতিটি ঘরে ঘরে আবদুল মালেক উকিলের নাম আছে। আবদুল মালেক উকিলের ভাতুষ্পুত্র হিসেবে শাহিনকে মনোনয়ন দিলে তিনি ভোটারদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবেন।

 

গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বর্তমান সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী নৌকার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন মন্তব্য করে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান নাছের বলেন, এখানে ভোট করার মতো যোগ্য অনেকেই রয়েছেন। দলীয় সিদ্ধান্তে যিনি মনোনয়ন পাবেন আমরা তার জন্য ভোট করব।

 

সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুজ জাহের বলেন, জেলার রাজনীতিতে সদর আসনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জাতীয় নেতা আবদুল মালেক উকিল সাহেবের মৃত্যুর পর আসনটি বিএনপির দখলে চলে যায়।

 

২০০৮ সালে বর্তমান সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর বাড়ি কবিরহাট উপজেলায় হলেও আমরা নৌকাকে জিতানোর স্বার্থে দলের প্রয়োজনে তার পক্ষে কাজ করেছি। তিনি টানা তিন বার এমপি হওয়ার পর দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈরী আচরণ করেছেন।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version