-->
শিরোনাম

গৃহবধূ পারাপার গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী রিকশা এখন আর নেই

লাকসাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
গৃহবধূ পারাপার গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী রিকশা এখন আর নেই
রিকশার বহর নিয়ে এভাবেই নববধূ আনা-নেয়া করা হতো

কুমিল্লা দক্ষিণাঞ্চলের সবক’টি উপজেলাজুড়ে একটা সময় নানা গানের সুরে সুরে বিয়ে কিংবা সামাজিক অনুষ্ঠানে গৃহবধূ পারাপারে একমাত্র গরিবের বাহন ছিল গ্রামবাংলার চিরায়ত জনপ্রিয় ঐতিহ্যবাহী রিকশা। কিন্তু চলমান প্রযুক্তির ঢামাঢোলে আজ সবই যেন হারিয়ে গেছে। কালের আবর্তে শুধু অতীত স্মৃতি হয়ে কল্পনায় ভাসছে সেই মধুর দিনগুলো।

 

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, কালের আবর্তে হারিয়ে গেছে গরিবের বাহন রিকশা দিয়ে বিয়ে কিংবা সামাজিক অনুষ্ঠানে গৃহবধূ পারাপারের একমাত্র বাহন। বর্তমান প্রযুক্তির যুগে এখন আর রিকশায় গৃহবধূ পারাপারে চোখে পড়ে না। ওই সময় দেখা যেত বিয়ে কিংবা যেকোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে গৃহবধূকে রিকশা দিয়ে নিয়ে যাওয়ার অপরূপ দৃশ্য।

 

সেই সঙ্গে রিকশাওয়ালার কণ্ঠে নানা গান শোনা যেত। রাস্তা দিয়ে গৃহবধূ আসছে শুনে ঘর থেকে বের হয়ে আসত এ অঞ্চলের ছেলে-মেয়েরা। এখন আর সে দৃশ্য নেই বললেই চলে। রিকশার সামনে-পেছনে গৃহবধূর ৬-৭ জন স্বজন আর মাঝখানে রিকশাওয়ালার মধুর কণ্ঠে গান গেয়ে ছুটে চলত নিজ গন্তব্যের স্থলে। এভাবেই বহন করা হতো বিয়ে কিংবা সামাজিক অনুষ্ঠানে গৃহবধূকে রিকশা নামক গরিবের বাহন দিয়েই।

 

সূত্রগুলো আরো জানায়, জেলা দক্ষিণাঞ্চলের বাণিজ্যিক নগরীখ্যাত লাকসামসহ সবকটি উপজেলাজুড়ে গৃহবধূ পারাপারে রিকশাই ছিল একমাত্র বাহন। কিন্তু এখন আর তাদের ওই পেশার অস্তিত্ব বলতে কিছুই নেই। তবে রিকশা বাহন পেশার সঙ্গে জড়িতদের শরিয়ত বিধিবিধান মেনে চলায় এ অঞ্চলের মানুষ তাদের ভালোবাসত।

 

চলমান সময়ে রিকশার প্রচলন থাকলেও গৃহবধূ পারাপারে এখন আর নেই। তবে আবার অভাবের তাড়নায় কেউ কেউ পেশা পরিবর্তন করে অন্য পেশায় এবং কেউ কেউ চলে গেছেন বিভিন্ন শহরে।

 

স্থানীয় বয়ঃবৃদ্ধদের একাধিক সূত্র জানায়, এ পেশার সঙ্গে জড়িত রিকশাওয়ালা পরিবারগুলো ছিল অনেকটাই অভাবী পরিবার। বিয়ের মৌসুম আসলেই বিয়ে অনুষ্ঠানে বর-কনে বহন করতে গরিবের রিকশা ছাড়া বিকল্প কোনো বাহন ছিল না। মাসে ৮-১০টি বিয়ের ভাড়া দিয়েই চলত তাদের সংসার।

 

অথচ আজ সবকিছু যেন অতীত। নতুন প্রজন্মের কাছে গৃহবধূ পারাপারে রিকশার গল্পটা যেন একটা ইতিহাস। ১৯৯০ সালের পূর্বে এ বাহন রিকশা ভাড়া প্রতিটা ৫শ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত গন্তব্য এলাকা বুঝে দর হাঁকাত তারা।

 

আনন্দ-উল্লাস করে এলাকার মানুষদের কেউ কেউ ওই সময় রিকশা ভাড়া নিয়ে থাকত।

 

৯০ দশকের পর প্রযুক্তিযুগে দেশ অনেকটাই এগিয়ে গেলেও গ্রাম-বাংলার চিরায়ত ঐতিহ্য গৃহবধূ পারাপারে গরিবের বাহন রিকশার কদর এখন আর নেই।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version