নারায়ণগঞ্জ সোনারগাঁ জামপুর ইউনিয়নের জয়রামপুর সিদ্ধেশ্বরী কালীতলা এলাকায় শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী বউমেলা। ১ বৈশাখ হতে একটানা ৩ দিন (১লা বৈশাখ-৩য় বৈশাখ) পর্যন্ত চলবে এই বউমেলা। সনাতন ধর্মাবলম্বী অনুসারীরা শত বছর ধরে বংশ পরম্পরায় এ মেলার আয়োজন করে আসছে।
জয়রামপুর গ্রামের শতবর্ষী বটগাছকে ঘিরে ঐতিহ্যবাহী বউমেলা শুরু হয়েছে শনিবার থেকে। বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী বৈশাখের প্রথম দিন এই পূজা করে থাকে তারা। বউমেলায় নববধূ থেকে শুরু করে নানা বয়সি গৃহবধূরা অংশগ্রহণ করে।
বটবৃক্ষের তলায় স্বামী ও সন্তানের মঙ্গল কামনায় পূজা অর্চনা দিয়ে আসছে তারা। তাই এ মেলার নাম দেয়া হয়েছে বউমেলা। গৃহবধূরা পূজায় বসে আরাধনা করেন, পূজায় অংশ নেয়াদের ধারণা এখানে আরাধনা করলে স্বামী ও সংসারের বাঁধন অটুট থাকবে এবং স্বামী সন্তানদের নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারবে।
বউমেলায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন জেলা ও স্থানীয় বিভিন্ন গ্রাম থেকে হিন্দু ধর্মাবলম্বী নারীরা ঝুড়িতে করে মৌসুমীর ফল কবুতর ও দেবীর নামে উৎসর্গ করার জন্য পাঠাবলিসহ বিভিন্নরকম পূজার জিনিস নিয়ে বটবৃক্ষ তলায় একত্রে জড়ো হয়ে পূর্ণ অর্চনা করছেন।
গৃহবধূরা মৌসুমী ফল নিয়ে লাইন ধরে বটগাছ তলায় ভোগ দিচ্ছেন। ফলে বটবৃক্ষ তলে মৌসুমী ফলের সারি সারি স্তূপ জমে উঠেছে। বটগাছটি সিদ্ধেশ্বরী কালীতলা নামে ও অনেকের কাছে পরিচিত। কিন্তু স্থানীয় এলাকাবাসী এটাকে বলেন বউতলা।
মেলায় অসংখ্য গৃহবধূর পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে এই এলাকা। পূজা অর্চনা শেষে ভক্তদের মাঝে প্রসাদ হিসেবে ফলগুলো বিতরণ করা হয়। পূজার পরপরই শুরু হয় তিন দিনব্যাপী এই বউমেলা। বউমেলায় পূজা দিতে আসা স্থানীয় এক গৃহবধূ পূজারানী দাস বলেন, আমার বিয়ের ১০ বছর হয়েছে।
বিয়ের পর থেকেই আমি প্রতিবছর বটগাছ তলায় পূজা দিতে আসি এবং আমরা সিদ্ধেশ্বরী কালী দেবী হিসেবে এই বৃক্ষকে পূজা করে থাকি। প্রথা অনুযায়ী মাটি দিয়ে বটবৃক্ষের গোড়ায় বিভিন্ন বয়সি গৃহবধূরা মাটির সঙ্গে একটি করে কড়ি দেয় বৃক্ষ দেবতাকে।
পক্ষান্তরে পরিবারের যতজন সদস্য আছে বৃক্ষ দেবতাকে ততবারই মাটির সঙ্গে কড়ি দিতে হয়। সনাতন ধর্মাবলম্বী গৃহবধূদের বিশ্বাস, এতে তাদের মনের কামনা বাসনা পূর্ণ হয়। সিদ্ধেশ্বরী বটতলা কালী পূজার আয়োজক ও সভাপতি নীলুত পাল দৈনিক ভোরের আকাশ প্রতিনিধিকে বলেন, প্রায় শত বছর ধরে সিদ্ধেশ্বরী কালী মায়ের পূজা করা হয় এই এলাকায়। হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন সার্বজনীনভাবে এই মেলার আয়োজন করে থাকেন।
এই বউমেলা পূজায় দেশবাসী ও এলাকার মানুষের শান্তি ও মঙ্গল কামনায় প্রার্থনা করা হয়।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য