-->
শিরোনাম

ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামগঞ্জের শিমুলগাছ

বাবুল আহমেদ, মানিকগঞ্জ
ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামগঞ্জের শিমুলগাছ
মানিকগঞ্জের একটি শিমুলগাছ

মানিকগঞ্জসহ দেশের সকল জেলার চারদিকে বইছে দখিনা বাতাস। কোকিলের সুমিষ্ট কুহুতানে ফাগুনের উত্তাল হাওয়া দিচ্ছে দোলা। গাছে গাছে গজিয়ে ওঠেছে সবুজ পাতা। মুকুল আর শিমুল ফুল দেখে বোঝা যায়, শীত বিদায় নিয়ে এসেছে ফাগুন। ঋতুরাজ বসন্তের আগমনে আবহমান গ্রামবাংলার প্রকৃতি রাঙিয়ে উঠে নয়নাভিরাম শিমুল ফুল, কিন্তু কালের বিবর্তনে মানিকগঞ্জে ফাগুনে চোখ ধাঁধানো গাঢ় লাল রঙের অপরূপ সাজে সজ্জিত শিমুলগাছ এখন বিলুপ্তপ্রায়।

 

এক যুগ আগে ও এ জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও গ্রামের অধিকাংশ বাড়ির আনাচে-কানাচে, রাস্তায়, পতিত ভিটায় প্রচুর শিমুলগাছ দেখা যেত। গাছে গাছে ফুটেওঠা শিমুল ফুলই স্মরণ করিয়ে দিত বসন্তের আগমন। প্রাকৃতিকভাবে তুলা আহরণের অন্যতম অবলম্বন শিমুলগাছ।

 

জানা যায়, এ গাছের সব অংশেরই রয়েছে ভেষজ গুণ। শীতের শেষে শিমুলের পাতা ঝরে পড়ে। বসন্তের শুরুতেই গাছে ফুল ফোটে। আর এ ফুল থেকেই হয় ফল। চৈত্র মাসের শেষের দিকে ফল পুষ্ট হয়। বৈশাখ মাসের দিকে ফলগুলো পেকে শুকিয়ে যায়। বাতাসে আপনা-আপনিই ফল ফেটে প্রাকৃতিকভাবে তুলার সঙ্গে উড়ে উড়ে দূর-দূরান্তে ছড়িয়ে পড়া বীজ থেকে নতুন গাছের জন্ম নেয়।

 

অন্য গাছের মতো এ গাছ কেউ শখ করে রোপণ করে না। নেয়া হয় না কোনো যত্ন। প্রাকৃতিকভাবেই বেড়ে ওঠে। এ গাছের প্রায় সব অংশই কাজে লাগে। এর ছাল, পাতা ও ফুল গবাদিপশুর খুব প্রিয় খাদ্য। বর্তমানে মানুষ এ গাছ কারণে-অকারণে কেটে ফেলছে। অতীতে নানা ধরনের প্যাকিং বাক্স তৈরি ও ইটভাটার জ্বালানি, দিয়াশলাইয়ের কাঠি হিসেবে ব্যবহার হলেও সেই তুলনায় রোপণ করা হয়নি। ফলে আজ বিলুপ্তির পথে শিমুল গাছ। জেলার সিংগাইর উপজেলার গুনা গ্রামের প্রবীণ হোসেন আলী বলেন, আগে গ্রামে প্রচুর শিমুলগাছ ছিল। এখন আর দেখা যায় না।

 

দৌলতপুর উপজেলার তালুকনগর গ্রামের বাসিন্দা রফিক খান বলেন, একটি বড় ধরনের গাছ থেকে তুলা বিক্রি করে ১০-১৫ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। আগের তুলনায় এখন শিমুলের তুলার দাম অনেক বেড়ে গেছে। তবুও এই গাছ বিলুপ্তির পথে। আগের যুগে শিমুল তুলা দিয়ে লেপ , তোষক, বালিশ, তৈরি করা হতো, কিন্তু শিমুল তুলার মূল্য বৃদ্ধিতে গার্মেন্সের জুট কাপড় দিয়ে তৈরি তুলা, পাম্পের তোষক, বালিশসহ পঞ্চ, কাপাশ তুলা আজ শিমুল তুলার স্থান দখল করে নিয়েছে। তাছাড়া শিমুল ফল ফেটে তুলা ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন স্থানে। তাই শিমুল গাছকে একটি বাড়তি ঝামেলা হিসেবে দেখতে শুরু করেছে গ্রাম-বাংলার মানুষ।

 

উল্লেখ্য বর্তমানে শিমুল তুলা ৪০০-৫০০ টাকা কেজি, আর গার্মেন্টেসের জুট দিয়ে তৈরি তুলা ৪০-৫০ টাকা, কাপাশ তুলা ২৫০ এবং পঞ্জের তুলা ৭০ কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে বলে শহরের মৌসুমি সিনেমা হল সংলগ্ন মার্কেটের লেপ-তোষক তৈরিকারক ও বিক্রেতা রহমত আলী জানান।

 

এ ব্যাপারে জেলা বন কর্মকর্তা বলেন, বাণিজ্যিকভাবে এখন দেশের কোথাও এই শিমুলগাছ বা তুলা চাষ করা হয় না। এটি প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠে। ফলে শিমুলগাছ ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। এর তুলা উন্নত মানের। এটি বাণিজ্যিকভাবে চাষ হলে মানুষ আসল তুলার মর্ম বুঝতে সক্ষম হতো।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version