তীব্র দাবদাহে আমের গুটি ঝরা নিয়ে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে রাজশাহীর চাষি ও ব্যবসায়ীদের। তাপদাহের কারণে গাছেই শুকিয়ে ঝরে যাচ্ছে আমের গুটি। ফলে ফিকে হতে শুরু করেছে চাষি ও ব্যবসায়ীদের স্বপ্ন। এমন অবস্থায় বিকল্প উপায় হিসেবে পানি সেচ ও পানি স্প্রে করতে বলা হচ্ছে। তবে বৃষ্টির পানি ছাড়া আমের গুটি ঝরা বন্ধ হবে না বলে জানিয়েছে ফল গবেষণা কেন্দ্র।
গবেষণা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তাপদাহের কারণে আমের বোটার আঠা শুকিয়ে যাচ্ছে। বোটায় রস না থাকায় আম কিছুটা ঝরছে। বিকল্প হিসেবে তারা চাষিদের গাছের গোড়ায় সেচ দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। একই সঙ্গে সকাল ও সন্ধ্যায় পানি স্প্রে করার জন্যও বলছেন তারা।
আম চাষি আবদুর রাজ্জাক বলেন, আমরা একেকটি বাগান তিন বছরের মেয়াদে কিনে নেই। পুরোটাই কপালের উপরে নির্ভর করে। গেল বছর আমার বাগানের ২২টি গাছের মধ্যে ১২টি গাছে ভালো আম এসেছিল। বাকি গাছগুলোতে এ বছর অনেক আমের গুটি রয়েছে। পুরো বাগান আমে পরিপূর্ণ হয়ে আছে।
কিন্তু রোদ আর তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে আমাদের গুটি ঝরে যাচ্ছে। কিছু কিছু আম গাছের বোটা শুকিয়ে গেছে। এ কারণে গাছের গোড়ায় পানি দেওয়া হয়েছে। বড় বড় আমের গাছ স্প্রে করা সম্ভব না। নিজের সাধ্যমত চেষ্টা করছি, বাকিটা আল্লাহ ভরসা।
তিনি আরও বলেন, আমরা আমের ব্যবসা করে সংসার চালাই। আমের মৌসুমে ব্যবসা করে সারা বছর চলি। আমের মুকুল ও গুটি দেখে ভেবেছিলাম এ বছর সর্বোচ্চ টাকার আম বিক্রি করব। কিছু ঋণ রয়েছে সেগুলো পরিশোধ করব। কিন্তু বোঝা যাচ্ছে না শেষ পর্যন্ত কি হবে। এখনই যেভাবে গুটি ঝরছে, তা নিয়ে মনের ভেতরে লোকসানের শঙ্কা কাজ করছে।
এছাড়া মৌসুমজুড়ে ছোট ছোট ঝড় ছাড়াও কালবৈশাখী ঝড় তো রয়েছেই। সেই সব ঝড়ে আমের ক্ষতি হয়। ঝড় হলে প্রচুর আম ঝরে যায়। সেই আমগুলো বিক্রির কোনো সুযোগ না থাকায় লোকসান হিসেবেই ধরে নেওয়া হয়।
আম চাষি মানিক মিয়া বলেন, কয়েকদিন থেকে গাছের গোড়ায় পানি দিচ্ছি। আমের গুটি ঝরছে। কিছু কিছু গাছেই শুকিয়ে গেছে। তবে সেচ দেয়ার কারণে মনে হচ্ছে গুটি ঝরা কমছে। কৃষি অফিস বলছে পানি স্প্রে করতে। কিন্তু আমার পক্ষে সম্ভব না। কারণ আমার অনেক বড় বড় গাছ। এই গাছে পানি স্প্রে করা কঠিন। তাই সেচ দিচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, গাছে বিষ স্প্রে করেছি। গুটি ঝরছে, পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। বৃষ্টিপাত না হলে বন্ধ হবে না গুটি ঝরা। তবে গাছে কোনো বোটায় তিনটি আম থাকলে তার মধ্যে একটি শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন অবস্থা বাগানের বেশ কিছু গাছে।
রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুল ইসলাম বলেন, তাপদাহে আমের ক্ষতি হবে, গুটি ঝরবে। স্বাভাবিক বৃদ্ধি থমকে যাবে। তবে গাছে যে পরিমাণের আমের গুটি রয়েছে তাতে স্বাভাবিকই মনে হচ্ছে। এমন অবস্থা আরও চার থেকে পাঁচদিন থাকলে ক্ষতিটা বেশি হবে বলে মনে করা হচ্ছে। বৃষ্টিপাত হলে আমের গুটি ঝরা কমে যাবে। একই সঙ্গে আমের স্বাভাবিক বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। তবে আমের গুটি ঝরা নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ নেই। গাছের গোড়ায় সেচ ও গাছে পানি স্প্রে করতে হবে।
রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের পর্যবেক্ষক আবদুস সালাম বলেন, রাজশাহীতে গত কয়েকদিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বৃদ্ধির দিকে ছিল। মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সোমবার রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এ বছর রাজশাহীতে আমের চাষ হয়েছে ১৯ হাজার ৫৭৮ হেক্টর জমিতে। গত বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে ১৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছিল। আম উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ৬ হাজার ১৫৬ মেট্রিক টন। তবে এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ২ লাখ ২৫ হাজার ৯১২ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য