-->
শিরোনাম

ভয়াবহ শব্দদূষণের শহর খুলনা

খুলনা ব্যুরো
ভয়াবহ শব্দদূষণের শহর খুলনা
শব্দদূষণ প্রতিরোধের দাবিতে অনশন কর্মসূচিতে প্লাকার্ড হাতে দুজন।

খুলনাসহ সারা দেশে ‘সুরক্ষিত শ্রবণ, সুরক্ষিত জীবন’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে পালিত হয়েছে আন্তর্জাতিক শব্দ সচেতনতা দিবস। দিবসটি ঘিরে খুলনায় দিনভর ছিল নানা অনুষ্ঠান কর্মসূচি।

 

শব্দদূষণের বিষয়ে গবেষণায় যেসব তথ্য উঠে এসেছে এর মধ্যে মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় কর্মরত ট্রাফিক পুলিশের ৫ শতাংশ একবারেই কানে শোনেন না। আর ৩৫ ভাগ সদস্য কানের সমস্যাসহ নানা ধরনের শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন।শব্দ দূষণের কারণে বধিরতা ছাড়াও হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, অনিদ্রা, গর্ভবতী নারীদের জটিলতা ও মানসিক সমস্যা বাড়ছে।

 

জনস্বাস্থ্যের জন্য শব্দের নিরাপদ মাত্রা ৪৫ ডেসিবল। পরিবেশ অধিদপ্তরের এক জরিপ জানায়, খুলনা মহানগর এলাকায় সর্বোচ্চ ১৩২ ডেসিবল মাত্রার শব্দদূষণ পাওয়া গেছে। গবেষণা থেকে শব্দদূষণের কারণ হিসেবে যানবাহনের উচ্চশব্দ ও হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার, নির্মাণকাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির শব্দকে প্রধানত দায়ী করা হয়েছে। এ ছাড়া শিল্পকারখানার যন্ত্রপাতির শব্দ, মাইক ও সাউন্ড বক্সের আওয়াজ এবং বিভিন্ন ইস্যুতে পটকা বা আতশবাজির ব্যবহার দূষণের মাত্রাকে চরমে পৌঁছে দিচ্ছে।

 

আন্তর্জাতিক শব্দসচেতনতা দিবস উপলক্ষে গত বুধবার খুলনা জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে আলোচনা সভায় বক্তারা শব্দদূষণ সম্পর্কে যেসব গবেষণালব্দ বক্তব্য তুলে ধরেন তার মধ্যে শব্দদূষণের ফলে মানুষের শ্রবণ শক্তি হ্রাস ও শ্রবণ ক্ষমতা পুরোপুরি নষ্ট হওয়া। এ ছাড়া হৃদরোগ, উচ্চরক্তচাপ, অনিদ্রা, মানসিক চাপ, শ্রবণশক্তি হ্রাস, শিশুর মেধা বিকাশ ব্যাহত হওয়াসহ নানা রোগের কারণ এই শব্দদূষণ। এ দূষণরোধে যানবাহনে হাইড্রোলিক হর্নের ব্যবহার, অযথা হর্ন বাজানো, নির্মাণকাজে উচ্চশব্দ সৃষ্টিকারী যন্ত্রপাতির ব্যবহার, যত্রতত্র লাউড স্পিকার ব্যবহার বন্ধ বা হ্রাস করা প্রয়োজন।

 

শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা-২০০৬ অনুযায়ী, বাংলাদেশে শব্দের মানমাত্রা অতিক্রমকারী হর্ন ব্যবহার নিষিদ্ধ। আবাসিক এলাকার পাঁচশ মিটারের মধ্যে শব্দ সৃষ্টিকারী যন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না। কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে শব্দের মানমাত্রা অতিক্রমকারী যন্ত্রপাতি দৈনিক সর্বোচ্চ পাঁচ ঘণ্টা ব্যবহার করা যাবে। তবে রাত ১০টার পর এ ধরনের যন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না। সন্ধ্যা ৭টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত নির্মাণকাজে শব্দদূষণকারী যন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না।

 

অনুষ্ঠানে আরো জানানো হয়, পরিবেশ অধিদপ্তরের ২০১৭ সালের জরিপে দেখা যায়, খুলনার শহরাঞ্চলে উৎপন্ন শব্দের তীব্রতা ৪২ থেকে ১৩২ ডেসিবল। পরিবেশ অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় কার্যালয় বিভাগের ১০ জেলায় ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত শব্দদূষণরোধে ১১৫টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ৩৪৩টি মামলার মাধ্যমে চার লাখ ৫২ হাজার পাঁচশ টাকা জরিমানা আদায় এবং ৬৬৪টি হাইড্রোলিক হর্ন জব্দ করেছে।

 

খুলনা বিআরটিএ সার্কেলের সহকারী পরিচালক কামরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা নিয়মিত জরিমানা করছি এবং সচেতনতা বাড়াতে প্রচার চালাচ্ছি। তবে মোটরযান আইনে নিষিদ্ধ হর্ন ব্যবহারে মাত্র ১০০ টাকা জরিমানার বিধান আছে। এই আইনে জরিমানা করলে তা দিতে কারো গায়ে লাগে না। শব্দদূষণ বন্ধে পরিবেশ অধিদপ্তর, বিআরটিএ, পুলিশ প্রশাসন ও জেলা প্রশাসন সমন্বিতভাবে কাজ করলে সুফল মিলবে।’

 

খুমেক হাসপাতালের নাক, কান, গলা বিভাগের প্রধান ডা. মো. কামরুজ্জামান বলেন, শব্দ ও পরিবেশ দূষণ রোধ করতে না পারলে জনসংখ্যার বড় একটি অংশ বধির হয়ে যাবে। উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়বে। মেজাজ বাড়বে, অনিয়ন্ত্রিত আচরণ করবে। কাজে মনঃসংযোগ হারাবে। কর্মক্ষমতা কমবে, স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় বাড়বে।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version