-->
শিরোনাম
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন, নোয়াখালী-২

দলীয় কোন্দলে আ.লীগ, সিদ্ধান্তহীনতায় বিএনপি

এ আর আজাদ সোহেল, নোয়াখালী
দলীয় কোন্দলে আ.লীগ, সিদ্ধান্তহীনতায় বিএনপি
দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীরা

২০২৩ সালের শেষ কিংবা ২০২৪ সালের শুরুতে বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রত্যাশা।

 

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ জয়লাভ করে সরকার গঠন করে। নির্বাচনে দ্বিতীয় স্থান লাভ করে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এবং এককভাবে নির্বাচনে তৃতীয় স্থান লাভ করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।

 

বিএনপির ঘোষণা অনুযায়ী দলীয় সরকারের অধীনে তারা আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবার কথা। সব দলের স্বতঃস্ফ‚র্ত অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে নির্বাচন সম্পন্ন করতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন।

 

কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতিতে মূল দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে আসন্ন নির্বাচন নিয়ে তেমন কোনো দৌড়ঝাঁপ লক্ষ করা যাচ্ছে না। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নোয়াখালীর রাজনৈতিক অঙ্গনেও তেমন কোনো সাড়া নেই। নেই কোনো প্রস্ততি। তবে দুদলেই রয়েছে একাধিক পদপ্রার্থী। রয়েছে গ্রুপিং আর নিজ দলের মধ্যেই দ্বিধাবিভক্ত। সংকিত সাধারণ ভোটার এমনকি তৃনমুল পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও।

 

জনমনে প্রশ্ন কে নেতৃত্ব দিবেন? আগামী দিনে কে হবেন সংসদ সদস্য? নোয়াখালী-২ আসনটি জেলার সেনবাগ উপজেলা ও সোনাইমুড়ী উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন (বারগাঁও, নাটেশ্বর ও অম্বরনগর) নিয়ে গঠিত। জাতীয় সংসদের ২৬৯ নম্বর আসন এটি।

 

আসনটিতে ভোটার রয়েছে ২ লাখ ৭৩ হাজার ৭৮৮। যার মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৩৮ হাজার ৪২ জন এবং নারী ভোটার রয়েছেন ১ লাখ ৩৫ হাজার ৭৪৬। এ আসনে বিএনপি থেকে ৫ বার নির্বাচিত হয়েছিলেন বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সাবেক চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক।

 

তবে গত দুই বারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত হয়ে সাংসদ সদস্য হিসেবে আছেন বেঙ্গল গ্রুপের চেয়ারম্যান মোরশেদ আলম। তবে এবার এ আসনে দলীয় গ্রুপিং চরমে পৌঁছে গেছে। দুর্দিনের নেতাকর্মীদের মুল্যায়ন না করে অনুপ্রবেশকারীদের পদ পদবি এবং বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দেয়ার কারণে কোনঠাসা হয়ে পড়েছেন বর্তমান এমপি মোর্শেদ আলম।

 

এমনটি অভিযোগ করেন দলের প্রবীণ ও বঞ্চিত নেতাকর্মীরা। আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এবার এ আসনটিতে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন পাওয়ার চেষ্টা করছেন, আর জাপার এক প্রার্থী হলেও কেন্দ্র থেকে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত না পাওয়ায় ভোটে আসা নিয়ে সন্দিহান বিএনপি।

 

এলাকাঘুরে জানাযায়, নোয়াখালী-২ আসনটি অতীত থেকে জনসমর্থনে এগিয়ে ছিল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের আগে সবসময় বিভিন্ন ভোটে বিএনপি সমর্থিত ও মনোনীতরাই বেশি এগিয়ে ছিলেন।

 

বিএনপি দলীয় নেতাকর্মীদের বিপক্ষে গত দুটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ কৌশলে পেশাজীবী বা ব্যবসায়ীকে দিয়ে নির্বাচন করিয়েছেন, যাতে গত দুই বারই সফল হয়েছেন দলটি। জনশ্রুতি রয়েছে, ‘ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন সময় সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ান বলে তাদের জনসম্পৃক্ততা বেশি’ এ ধারণা থেকেই আওয়ামী লীগ সবসময় তাদের বেছে নেন। তবে এতে করে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মাঝে নানা সময় ক্ষোভ বিরাজ করছে।

 

আসনটির বিভিন্ন শ্রেণি পেশার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত দুই সেশন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেও আসনটিতে বিএনপির লোকদের অনেকটা আধিপত্য রয়েছে। বিএনপির অনেক নেতাকর্মীই আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করায় দুই দলের লোকজন অনেকটা মিলেমিশে একাকার। তবে আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতাকর্মীদের মতে, দলে অনুপ্রবেশকারী এসব নব্য আওয়ামী লীগরা ভোটের সময় স্বরূপে ফিরে যাবে।

 

অর্থাৎ, তারা মুখে নৌকা বলে ভোটকেন্দ্রে গেলেও বাস্তবে বিএনপিকেই ভোট দিবে, আর এরাই আ.লীগের জন্য হুমকি।

 

এদিকে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে অধিকাংশই ব্যবসায়ী কিংবা পেশাজীবী সংগঠনের নেতা। সেদিক থেকে বিএনপির চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন, তাদের অনেক নেতা আছেন যাদের অবস্থান কেন্দ্রে অনেক ভালো, পাশাপাশি তৃণমূলেও তারা নিজেদের অবস্থান অটুট রেখেছেন।

 

জানা গেছে, নোয়াখালী-২ আসনে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে আবারো মনোনয়ন চাইবেন বর্তমান সাংসদ সদস্য মোরশেদ আলম। এছাড়াও মনোনয়ন পাওয়ার চেষ্টা করছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি জাফর আহমেদ চৌধুরী, বাফুফে সহ-সভাপতি আতাউর রহমান ভূইয়া মানিক ও ব্যবসায়ী লায়ন জাহাঙ্গীর আলম মানিক। মনোনয়ন প্রত্যাশী সবাই নিজেদের সমর্থন নিয়ে কেন্দ্রের হাইপ্রোফাইলে লবিং করছেন বলে জানা গেছে।

 

বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সাবেক চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক ছাড়াও আসনটিতে মনোনয়ন চাইবেন বিএনপির একাংশের নেতৃত্ব দেয়া কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী সদস্য কাজী মফিজুর রহমান। জাতীয় পার্টির একক প্রার্থী উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি হাসান মঞ্জুর।

 

বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী কাজী মফিজুর রহমান বলেন, দেশে এখনো নির্বাচনের কোনো পরিবেশ তৈরি হয়নি, আর দল থেকেও নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে আমাদের কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি। দল নির্বাচনে আসলে দলীয় মনোনয়ন আমি পাবো বলে আশা করি। দলের সীদ্ধান্ত ও মনোনয়ন পেলে আমি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবো।

 

অন্যদিকে বিএনপির অপর প্রার্থী জয়নুল আবদিন ফারুক পাঁচবারের এমপি। কেন্দ্রীয় রাজনীতির পাশাপাশি এলাকায়ও নিয়ন্ত্রণ আছে বেশ ভালো। তার সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব না হওয়ায় তার বক্তব্য নেয়া যায়নি।

 

আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী লায়ন জাহাঙ্গীর আলম মানিক বলেন, গত ২০-২৫ বছর ধরে এলাকার মানুষের জন্য আমি কাজ করে যাচ্ছি। এবার আমি দলীয় মনোনয়ন চাইবো। কিন্তু আমাদের এ আসনটিতে যারা রাজনীতি করেন তাদের মনোনয়ন দেয়া হয় না, গত ৪০ বছরে বিভিন্ন ব্যবসায়ীকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। এবার যদি দল ভালো মনে করে তাহলে আমাকে মনোয়ন দিবে এতে করে দলের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হবে।

 

আ.লীগ থেকে মনোনয়ন প্রার্থী জাফর আহমেদ চৌধুরী বলেন, সেনবাগে আ.লীগের সবচেয়ে সিনিয়র নেতাদের মধ্যে আমি একজন। আমি দল থেকে ২০০১ সালে মনোনয়ন পাওয়ার পর বিএনপি প্রার্থী কেন্দ্র দখল করে আমাকে হারিয়ে দেয়।

 

২০০৬ সালে মনোনয়ন পাওয়ার পর ভোটের দিন আধাবেলা ভোট করার পর দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে ভোট থেকে সরে দাঁড়াই। পরে ২০০৮ ডা. জামাল উদ্দিন আহমেদকে এবং ২০১৪ ও ২০১৮ সালে মোরশেদ আলমকে দল থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়।

 

তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমাদের দায়িত্বকালে এ আসনে নেতাকর্মীদের মধ্যে ঐক্যবদ্ধতা ছিল। যে কোনো দলের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার মতো অবস্থান আমাদের ছিল। কিন্তু বর্তমান এমপি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার পর নিজের ইচ্ছে মতো প্রতিটি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে কমিটি দিয়েছেন।

 

প্রতিটি পদে একাধিক প্রার্থী থাকলেও তিনি কোনো প্রকার নির্বাচন ছাড়া নিজের পছন্দের মতো ব্যক্তিকে সভাপতি সেক্রেটারি বানিয়েছেন, যার ফলে প্রতিটি ইউনিয়নে দলের মধ্যে একাধিক গ্রুপিং এর সৃষ্টি হয়েছে। আর আগামী নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর জন্য এ গ্রুপিংটা হুমকি হয়ে দাঁড়াবে বলেও তিনি দাবি করেন।

 

একদিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা দলীয় হাইপ্রোফাইলে লবিং করলেও লো-প্রোফাইলে নেতাকর্মীদের সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে তেমন কোনো দৌড়ঝাপ লক্ষ করা যায়নি। অন্যদিকে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে সাংগঠনিক যোগাযোগ থাকলেও নির্বাচন নিয়ে দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশনা না থাকায় তারাও অনেকটা ঝিমিয়ে আছে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version