-->
শিরোনাম

লক্ষীপুর মেঘনা উপকূলে অবাধে চলছে চিংড়ি পোনা নিধন

রিয়াজ মাহমুদ বিনু, লক্ষীপুর
লক্ষীপুর মেঘনা উপকূলে অবাধে চলছে চিংড়ি পোনা নিধন
বিহুন্দি জাল দিয়ে এভাবেই অবাধে চলছে রেণুপোনা নিধন

সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে লক্ষীপুরের রামগতি উপজেলার মেঘনা উপকূলজুড়ে গলদা চিংড়ির পোনা ধরার মহোৎসব চলছে। চিকন জালের টানা বিহুন্দি দিয়ে অবাধেই চলছে পোনা শিকার। এতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনাসহ জীববৈচিত্র্য নষ্ট হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় এক শ্রমিক লীগ নেতার ছত্রছায়ায় অসাধু কিছু লোক প্রকাশ্যে চিংড়ির পোনা আহরণ ও বিক্রি করছে।

 

সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার পৌর ৮নং ওয়ার্ডের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পশ্চিম পাশে রিপন কলোনিতে এ পোনা জমা করে তা দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা হচ্ছে। গিয়ে দেখা যায়, বিশাল এক ঘরে বেশ কয়েকটি কক্ষে শতাধিক ড্রাম ভর্তি গলদা চিংড়ির পোনা, পোনা ধরা ও বেচাকেনার নানা সরঞ্জাম। পাশের এক কক্ষে আধশোয়া অবস্থায় দেখা মেলে উপজেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি জামাল উদ্দীন ও তার সহযোগী ফারুকের।

 

সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তারা উত্তেজিত হয়ে বলেন, আপনারা লেখেন। আমাদের কিছু যায় আসে না। লেখলে কী হবে? আমরা তো আর চুরি করি না, ব্যবসা করি। প্রশাসন ম্যানেজ করেই আমরা ব্যবসা করি। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জামাল ও ফারুকের নেতৃত্বে রামগতিতে বিশাল একটি সিন্ডিকেট গলদা চিংড়ি পোনা আহরণ করে তা দেশের বিভিন্ন স্থানে চড়া মূল্যে বিক্রি করা হয়।

 

এছাড়া স্থানীয় মৌসুমি জেলেদের দাদন প্রদানসহ লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন তারা।

 

স্থানীয় জেলেরা জানান, প্রতি বছর এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত মেঘনার উপক‚লীয় অঞ্চলে গলদাসহ বিভিন্ন প্রজাতির রেণু অবস্থান করে। জোয়ারের সঙ্গে এসব রেণু নদীর তীরে চলে আসে। এ সুযোগে অসাধু একশ্রেণির মৎস্যজীবী চিংড়ি পোনাসহ নদী ও সামুদ্রিক প্রজাতির বিভিন্ন পোনা নিধন করছেন। স্থানীয় বেশ কয়েকজন দাদন ব্যবসায়ী টাকা দিয়ে এ কাজে জেলেদের উৎসাহী করে তোলেন। অর্থের লোভে শিশু-কিশোররাও এ কাজ করছে।

 

পোনা শিকারিদের ভাষ্যমতে, পোনা শিকারে উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি মো. জামাল উদ্দীন ও তার সহযোগী আড়তদার ফারুকের সহযোগিতায় এ অবৈধ কাজ করে আসছেন। তাদের তত্ত্বাবধানেই পোনাগুলো ট্রলার ও ট্রাকে করে মোকামে বিক্রি করা হচ্ছে।

 

জানা যায়, ২০০০ সালে দেশের উপক‚লীয় এলাকায় চিংড়ির পোনা আহরণ, ক্রয়-বিক্রয় ও পরিবহন নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সরকার। এ নিদের্শনার আলোকে উপক‚লীয় এলাকায় সারা বছরই চিংড়ির পোনা আহরণ নিষিদ্ধ থাকে। তবে মাঝেমধ্যে প্রশাসন অভিযান চালিয়ে জেল জরিমানা করলেও কিছুদিন পর আবার ব্যবসায় শুরু করে শক্তিশালী এ চক্র।

 

এ বিষয়ে শ্রমিক লীগ নেতা জামাল উদ্দীন ও ফারুক বলেন, আমরা লাখ লাখ টাকা পুঁজি দিয়ে ব্যবসা করছি। কাজ কাম নেই, তাই ব্যবসা করছি। চুরি তো করছি না। কাজ না করলে খামু কী? কোনো সমস্যা নেই আপনারা যত পারেন লেখেন!

 

লক্ষীপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, চিংড়ির পোনা নিধন বন্ধে মৎস্য বিভাগ অভিযান পরিচালনা করে আসছে। কিন্তু একশ্রেণির অসাধু মৎস্য ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক দলের কথিত নেতাদের সেল্টারে এ ধরনের অন্যায় কাজ করা হচ্ছে।

 

আমরা দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেব। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম শান্তনু চৌধুরী বলেন, সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যারা এ বেআইনি কাজ করছেন, আমরা তাদের বিরুদ্ধে দুই দফা ভ্রাম্যমাণ আদালত করে জরিমানা করেছি।

 

এরপরও নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পোনা ধরলে আবারো তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে কোনো ছাড় দেয়া হবে না।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version