-->

তদারকির অভাবে টাঙ্গাইল ওয়াক্ফ সম্পত্তি বেহাত

আ. রশিদ তালুকদার, টাঙ্গাইল
তদারকির অভাবে টাঙ্গাইল ওয়াক্ফ সম্পত্তি বেহাত
ছবিটি মধুপুর ধনবাড়ীর জমিদার নবাবজাদা নওয়াব আলী ওয়াক্ফ স্টেটের

১৯৩৪ সালের ওয়াক্ফ আইন অনুযায়ী তদারকির অভাবে টাঙ্গাইল জেলার বিপুল পরিমাণ ওয়াক্ফ সম্পত্তি বেহাত হয়েছে। সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। টাঙ্গাইল জেলার ২৯৯টি ওয়াক্ফ স্টেটের আওতায় জমি রয়েছে ৪১০ হাজার ২১৫ একর।

 

টাঙ্গাইল জেলার ১২টি উপজেলা ওয়ারী মধুপুর-ধনবাড়ী ১২টি স্টেটের ৯৫ একর গোপালপুরে ৩৩টি স্টেটের ৩৮ দশমিক ৩৪ একর, ঘাটাইল ৩১টি স্টেটের ২৩৮ দশমিক ৫৭ একর, ভ‚ঞাপুরে ৪টি স্টেটের ৮৮ দশমিক ২ একর, কালিহাতীতে ৪৮টি স্টেটের ১০০ দশমিক ১ একর, নাগপুরে ২৮টি স্টেটের ৯৫ একর, দেলদুয়ারে ১৫টি স্টেটের ৩ হাজার ৭১৪ দশমিক ৪১ একর, বাসাইলে ৩৪টি স্টেটের ৭৭ দশমিক ১১ একর, সখিপুরে ২টি স্টেটের ৫ একর, মির্জাপুরে ২৯টি স্টেটের ৩ হাজার ৩০১ দশমিক ৫৯ একর ও টাঙ্গাইল সদর ইপজেলায় ৬২টি স্টেটের আওতায় ২ হাজার ৪৬২ দশমিক ২৪ একর ওয়াক্ফকৃত জমি রয়েছে।

 

মধুপুর ধনবাড়ী জমিদার নবাবজাদা নওয়াব আলী ওয়াক্ফ স্টেট, টাঙ্গাইল উপজেলার করটিয়ার জমিদার হায়দার আলী খান পন্নী ও জাফর আলী খান পন্নী ওয়াক্ফ স্টেট, দেলদুয়ারের হজরত শাহান শাহ ও ফাতেহাদাদ খান ওয়াক্ফ স্টেট এবং কালিহাতী নাগবাড়ী গ্রামের আব্দুল হামিদ চৌধুরী ওয়াক্ফ স্টেটের হলো এর দুই-তৃতীয়াংশ। এতিমখানা, মাজার, মাদ্রাসা, খানকায়ে শরীফ, ঐতিহাসিক মসজিদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দেখাশোনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এসব জমি ওয়াক্ফ করে গেছেন দানশীল জমিদার ও জেলার বিভিন্ন ব্যক্তিরা।

 

১৯৩৪ সালের ওয়াক্ফকৃত আইনের ওয়াক্ফ স্টেটের আয়ের শতকরা ৫ ভাগ কর সরকারকে দেয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু কোনো কোনো ওয়াক্ফ স্টেট ৪৫-৫০ বছর ধরে সরকারকে আয়কর দিচ্ছে না। ফলে সরকার কোটি কোটি টাকা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

 

কোনো কোনো এলাকার প্রভাবশালী মহলের তদবিরে ওয়াক্ফ জমি সরকার প্রজাদের বিতরণ করে দেয়ায় অনেক সম্পত্তি বেহাত হয়ে গেছে। কোনো কোনো স্টেট মুতাত্তয়াল্লিরা আইন না মেনে গোপনীয়ভাবে ওয়াক্ফকৃত জমি বিক্রি করে দিয়েছেন।

 

১৯৩৪ সালের আইন অনুযায়ী, ওয়াক্ফকৃত কোনো জমি বিক্রি বা লিজ দেয়ার বিধান নেই।

 

ময়মনসিংহ ওয়াক্ফ অফিস থেকে একাধিকবার অভিযোগ করেন যে, ওয়াক্ফ আইন লঙ্ঘন করে ধনবাড়ী নওয়াব আলী চৌধুরী ওয়াক্ফ স্টেট মুতাত্তয়াল্লি ওয়াক্ফকৃত ৮৪ একর জমির দুই-তৃতীয়াংশ অনেক দিন হয় লিজ, বিক্রি বা অন্যায়ভাবে স্থায়ী হস্তান্তর করেছেন। ওয়াক্ফ প্রশাসনের অনুমতি ব্যতিরেকে ধনবাড়ী নওয়াব মঞ্জিল প্যালেসকে প্রমোদ ও পিকনিক স্পটে পরিণত করা হয়েছে।

 

এই ওয়াক্ফ স্টেট থেকে বিপুল পরিমাণ আয় হলেও লাখ লাখ টাকা ফাঁকি দিয়ে সরকারকে প্রতি বছর মাত্র ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা আয়কর দেয়া হচ্ছে।

 

টাঙ্গাইল জেলায় কোনো ওয়াক্ফ শাখা নেই। টাঙ্গাইলে একটি ওয়াক্ফ শাখা অফিসের জন্য সরকারের কাছে দাবি করে অনেকেই। ময়মনসিংহ ওয়াক্ফ অফিস থেকে ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, জামালপুর, শেরপুর, কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোনা এসব জেলার ওয়াক্ফ স্টেটগুলো দেখাশোনা, আইনগত তদন্ত ও পরিদর্শকরা পরিদর্শন চালাচ্ছেন।

 

একাধিকবার পত্রিকায় ওয়াক্ফকৃত জমির সংবাদটি প্রকাশ হলেও কোনো ফল পায়নি টাঙ্গাইলবাসী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ময়মনসিংহ ওয়াক্ফর এক কর্মকর্তা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version