বই থেকে দূরে সরে যাচ্ছে বর্তমান প্রজন্ম গ্রামে নিজ উদ্যোগে পাঠাগার তৈরি করেছেন মেহেদী হাসান। মেহেদী ছোটবেলা থেকে সামাজিক কাজে যুক্ত আছেন। মানুষের দুঃখ কষ্টগুলো ভাগাভাগি করার জন্য নিজে থেকে চেষ্টা করি তাদের পাশে দাঁড়ানোর।
শহরে বই পড়ার সুযোগ কমবেশি সকলে পায়,কিন্তু গ্রামের মানুষগুলোর বই পড়ার ইচ্ছা থাকলেও পান না সুযোগ। ছোট বেলা থেকে ইচ্ছা গ্রামে একটি পাঠাগার তৈরি করবো সেখানে সব শ্রেণির পেশার মানুষ বই পড়ার সুযোগ পাবে। তাই জ্ঞান পিপাসু মানুষের আকাঙ্ক্ষা পূরণে পাঠাগার প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন ছিল মেহেদীর।
২০২০ সালে পাঠাগারের কাজ শুরু করে বর্তমানে তা কাজ সম্পূর্ণ করে। বইপ্রেমী এই তরুণের পুরো নাম মো. মেহেদী হাসান। তার বয়স ২১ বছর। সে গাইবান্ধা সরকারি কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অনার্স ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী। গ্রামে নিজের বাড়ির সামনেই গড়ে তোলেন বই ঘর পাঠাগার। বর্তমানে পাঠাগারটি আলো ছড়াচ্ছে গাইবান্ধা জেলার বল্লমঝাড় ইউনিয়নসহ পাশ্ববর্তী উপজেলার মানুষের মাঝে।
বুধবার দেখা যায়, ৩৮ ফুট দের্ঘ্য ও ৮ ফুট প্রস্থ একটি আধাপাকা টিনের ঘরে টেংগরজানী গ্রামে গড়ে তোলা হয়েছে বই ঘর পাঠাগার। শিশুকিশোরদের বই থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সাহিত্য, বিনোদন, রাজনীতি, অর্থনীতি, উপন্যাস, প্রবন্ধ, রচনাসমগ্র, জীবনী, ছোটগল্প, কবিতা, ভাষাতত্তসহ সাহিত্যের প্রায় সব শাখার বই রয়েছে এই পাঠাগারে। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও দুষ্প্রাপ্য প্রকাশনার খোঁজ মেলে এখানে। বর্তমানে তার পাঠাগারে বই রয়েছে প্রায় ১ হাজার এর অধিক।
প্রতিদিন আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে গড়ে ২০ থেকে ২৫ জন পাঠক বই ও পত্রিকা পড়তে আসেন এই পাঠাগারে। পাঠাগারের সদস্যদের জন্য বই বাড়িতে নিয়েও পড়ার সুবিধা রয়েছে। ইতিমধ্যে বই ঘর পাঠাগারটি গণ-গ্রন্থাগার অধিদপ্তরের তালিকাভুক্তিকরণ সনদ প্রদান পেয়েছে।মেহেদী হাসানেন পাঠাগারে অধিকাংশ পাঠক বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী।
এছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ বই ও পত্রিকা পড়তে আসেন। মাঝেমধ্যে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় বই পড়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন মেহেদী।টেংগরজানী গ্রামের শিক্ষার্থী আফরোজা আক্তার বলেন,আমাদের গ্রামে এমন একটি পাঠাগার গড়ে উঠবে ভাবতে পারিনি।
আমরা পড়াশুনার পাশাপাশি প্রতিদিন পাঠাগাড়ে গিয়ে পছন্দের বই পড়ি। এখনে বই পড়ে খুব ভালো লাগে। অন্যদিকে শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন,আমাদের বাড়ি থেকে চার-পাঁচ মিনিট হেঁটেই ওই পাঠাগারে যাওয়া যায়। সময় পেলেই পাঠাগারে গিয়ে বই পড়ি এবং সেখান থেকে বই বাড়িতে নিয়ে আসি। বই পড়া শেষ হলে ফেরত দিয়ে আবার নতুন বই নিয়ে আসি।
গাইবান্ধা জেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি শেখ হাবিবুর রহমান বলেন বই ঘর পাঠাগারের উদ্যোক্তা মেহেদী নিজের অর্থায়নে বই পড়ার অভিযানকে বেগবান করেছেন। এটা সত্যিই বিরল। সে লেখাপড়ার পাশাপাশি গ্রামে পাঠকের চাহিদা পূরণ করে আসছেন। এতে যে শুধু গ্রামের মানুষ উপকৃত হচ্ছে তা নয়, আশেপাশের অনেক মানুষ বই ঘর পাঠাগার থেকে জ্ঞান অর্জন করছেন।
স্থানীয়রা বলছেন শুধু বইপড়া নয়, পাশাপাশি নানা ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে বই ঘর। পাঠাগার থেকে বছরের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কবি সাহিত্যিকের জন্ম-মৃত্যু দিবস পালন, জাতীয় দিবস পালন, চিত্রাঙ্কন, সাধারণ জ্ঞান, গল্পলেখা, কবিতা আবৃত্তির আয়োজন করা হয়।
পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা মোঃ মেহেদী হাসান বলেন,আমরা যারা গ্রামে বসবাস করি, তাদের শহরে গিয়ে বই পড়া বড় সমস্যা। কারণ, দেশের বেশির ভাগ পাঠাগার শহরকেন্দ্রিক। গ্রামের তরুণ প্রজন্মকে বই পড়ার প্রতি আগ্রহী করে তোলা কারণ বর্তমানে সকলে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম, গেমসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। বই থেকে দূরে সরে যাচ্ছে বর্তমান প্রজন্ম। তাই আমি আমার পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি পরিচিতজনের কাছ থেকে বই সংগ্রহ করা শুরু করি।
কলেজ যাওয়ার ভাড়া ও টিফিনের অতিরিক্ত টাকা জমা করে ও বাবা-মার সহযোগিতায় ২০২০ সালে শুরু করি পাঠাগার।
মেহেদী হাসান অরো জানান, অর্থাভাবে পাঠাগারের বই বৃদ্ধি করতে পারছি না। সরকারি অনুদান ও সহযোগিতা পেলে পাঠাগারে বই বৃদ্ধি করা সহজ হবে। তাই এই পাঠাগারটিকে একটি আধুনিক পাঠাগার হিসাবে গড়ে তোলার জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক সোহাগ মৃধা বলেন,বই ঘর পাঠাগারে আমি নিজেও গিয়েছি। নিজের অর্থায়নে পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করে গ্রামের মানুষদের বই পড়ার আগ্রহকে বেগবান করার পাঠকের চাহিদা পূরণ করে আসছেন। তার এই উদ্যোগকে আমি সাধুবাদ জানাই।
এছাড়াও বই ঘর পাঠাগারের উদ্যোগে বই পড়ার প্রতি আগ্রাহ করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রতিযোগিতা ও পাঠকার্যক্রম এর আযোজন করা হচ্ছে। এর ফলে বইমুখী হচ্ছে অনেকে। বইপড়া ও কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হচ্ছে এই পাঠাগারে।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য