-->
শিরোনাম

সুপেয় পানির তীব্র সংকটে ভুগছেন পাহাড়িরা

ভোরের আকাশ ডেস্ক
সুপেয় পানির তীব্র সংকটে ভুগছেন পাহাড়িরা

সুপেয় পানির তীব্র সংকটে ভুগছেন পাহাড়িরা। গ্রীষ্মের শুরুতে বান্দরবানের দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। খোদ সদর উপজেলার চিম্বুক এলাকায় শতাধিক পাহাড়ি পল্লীতে পানির জন্য হাহাকার বিরাজ করছে। সদরসহ অন্য ৬ উপজেলা রোয়াংছড়ি, রুমা, থানচি, লামা, আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ির পাহাড়ি এলাকাগুলোতে খাবার ও ব্যবহারের পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। গরম ও পানির সংকটে দিশাহারা তারা।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিদিন মাইলের পর মাইল খাবার পানির জন্য পাড়ি দিচ্ছেন পাহাড়ের বাসিন্দারা। বাধ্য হয়ে খাল ও ঝিরি ও ঝরনার দূষিত পানি পান করছেন বেশিরভাগ গ্রামবাসী। এতে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

 

বিশেষ করে সদর উপজেলার সুয়ালয়ক ইউনিয়নের ১২টি ম্রো পাড়ার সাড়ে ৪ হাজার মানুষ ও টংকাবতী ইউনিয়নের ৭৩টি ম্রো পাড়ায় ১৩ হাজার ৪৫০ মানুষ তীব্র পানির সংকটে ভুগছেন। জানা যায়, পাড়ায় পাড়ায় পানির সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে।

 

ফলে পানির খোঁজে তীব্র গরম উপেক্ষা করে মাইলের পর মাইল পাহাড়ি আঁকাবাঁকা ঢালু ও ঝুঁকিপূর্ণ পথ পাড়ি দিয়ে দূর-দূরান্তের ঝিরি-ঝরনাতে ছুটছেন তারা। কিন্তু ঝিরি-ঝরনাতেও পানি মিলছে না।

 

ঝিরিতে পানি নিতে আসা সাংরুই ম্রো ও রুইলো ম্রো জানান, অনেক দূর থেকে পাহাড়ি ঝুঁকিপূর্ণ পথ হেঁটে এখানে এসেছেন। ঝিরিতে পানি কমে গেছে। কয়েক ঘণ্টা লেগে যায় পাত্রগুলোতে পানি ভরতে। পাহাড় ঘেমে যে পানি জমা হয়, সে পানি নিয়ে খুবই কষ্ট করে খাড়া পাহাড় পাড়ি নিয়ে বাড়ি ফিরতে কয়েক ঘণ্টা চলে যায়।

 

একই বিষয়ে টংকাবতী চেয়ারম্যান পাড়ার বাসিন্দা পায়াং মুরুং বলেন, ‘একটু বৃষ্টি হলেই ঝিরির পানি ঘোলা হয়ে যায়। পাড়ায় পানির খুব সংকট। এ কারণে পাড়ার লোকজন বাধ্য হয়ে ঝিরির ঘোলা পানি পান করছেন। পানির জন্য অনেক দূরের পাহাড়ি পথ হেঁটে যেতে হয়। নিচু পাহাড়ে নামতে অনেক কষ্ট হয়, নামলে আবার উঠতে কষ্ট হয়। যার কারণে পাড়ার লোকজন ঝিরির ঘোলা পানি পানসহ নানা কাজে ব্যবহার করছেন।’

 

অন্যদিকে ক্রামাদি পাড়ার কাইসাং ম্রো বলেন, ‘পাড়া থেকে এক মাইল নিচে একটি ঝিরি আছে। বর্তমানে সেখানেও পানি নেই। পাহাড় ঘেমে ঘেমে জমা হওয়া পানি সংগ্রহ করে তা বাড়ি নিয়ে যেতে খুবই কষ্ট হয় আমাদের। এই পানি পান করছি সবাই।’ ম্রো পাড়ার কারবারি (পাড়া প্রধান) পায়াং ম্রো বলেন, ‘চিম্বুক এলাকায় প্রায় ৮০টি ম্রো পাড়ায় পানির সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। পানির জন্য পাহাড়ি মানুষজন খুব কষ্টের মধ্যে পড়েছেন।’

 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় পাহাড়ি-বাঙালি অধিকাংশই দুর্গম পাহাড়ি জনপদে বসবাস করেন। এসব মানুষের পানির চাহিদা মেটাতে জেলা পরিষদ, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ ও বিভিন্ন এনজিও সংস্থা বিগত কয়েক বছরে কয়েক হাজার রিংওয়েল-নলক‚প খনন করেছে।

 

অভিযোগ রয়েছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো রিংওয়েল-নলক‚প খননে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির আশ্রয় নেয়ায় শুষ্ক মৌসুমে পানি ওঠে না, অধিকাংশ কল অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। একটি রিংওয়েল বা নলক‚প দুই আড়াইশ ফুট গভীরে যাওয়ার কথা থাকলেও নাম মাত্র ৩০-৪০ ফুট। যা শুধুমাত্র বর্ষা মৌসুমে কাজ করে থাকে, ফলে শুষ্ক মৌসুম আসার আগেই সেসব কূপে পানি থাকে না।

 

বান্দরবান জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী শর্মিষ্ঠা আচার্য বলেন, ‘পানি সংকটের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা দিয়েছি। অফিসের যে রিং টিউবওয়েলগুলো আছে, সেগুলো সচল করে ব্যবহারের উপযোগী করে দেব।’

 

এ ব্যাপারে বান্দরবান মৃত্তিকা ও পানি সংরক্ষণ কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মাহাবুবুল ইসলাম বলেন, ‘অপরিকল্পিতভাবে পাহাড়ে চাষাবাদ (জুম চাষ), নির্বিচারে বৃক্ষনিধন ও নানা ধরনের বনজসম্পদ আহরণের ফলে পানির উৎস বিভিন্ন ঝিরি ও পাহাড়ি ঝরনার পানি শুকিয়ে গেছে।

 

এসব কাজ বন্ধ করা না গেলে পানির উৎস শুকিয়ে অচিয়েই বিপর্যয়ে পড়বে প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য।’

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version