-->

আগামরা রোগে আক্রান্ত সুন্দরী গাছ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে

খুলনা ব্যুরো
আগামরা রোগে আক্রান্ত সুন্দরী গাছ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে
দিন দিন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে সুন্দরবনের সুন্দরী গাছ

সুন্দরী গাছের নামেই বনের নাম সুন্দরবন। কিন্তু নীরব এক রোগে সেই সুন্দরী গাছই বিলুপ্ত হতে বসেছে। সুন্দরবনের ভেতরে নদী দিয়ে এগোলেই নজরে পড়ে মাইলের পর মাইলজুড়ে সুন্দরী গাছের কঙ্কাল। এ যেন সুন্দরী গাছের কঙ্কালে ভরা সুন্দরবন।

 

সরেজমিনে সুন্দরবনের বেশ কয়েকটি স্থান ঘুরে নজরে পড়েছে সারি সারি মৃত সুন্দরী গাছের চিত্র। সবুজ ঘন বনের ভেতর শুকিয়ে কালো হয়ে পত্রশূন্য সুন্দরী গাছগুলো দাঁড়িয়ে আছে। এগুলো মারা গেছে ‘আগামরা’ (টপ ডাইং) রোগে আক্রান্ত হয়ে। এমন মন্তব্য বন বিশেষজ্ঞদের।

 

বিশেষজ্ঞদের মতে, সুন্দরবনের গাছের মধ্যে সুন্দরী গাছের লবণ সহিষ্ণুতা কম। ফলে সুন্দরবনের মধ্যে লবণাক্ত এলাকার সুন্দরী গাছে আগামরা রোগের প্রকোপ বেশি দেখা দিয়েছে। সিডর ও আইলায় সাগরের লোনা পানিতে সুন্দরবন প্লাবিত হওয়ায় বনের মধ্যে লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়ে যায়। ফলে সুন্দরী গাছে টপ ডাইং রোগ ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে বনের ভেতর হাজার হাজার আগামরা গাছ সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

 

সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) এজেডএম হাসান মাহমুদ বলেন, গত দশ বছরে সুন্দরবনে আগামরা রোগের প্রকোপ ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে। বন বিভাগের নতুন কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী, সুন্দরবন থেকে বনজ সম্পদ আহরণের সিদ্ধান্ত বদল হওয়া এর একটি অন্যতম কারণ। এ ছাড়া বনের ভেতর থেকে মৃত গাছগুলো কেটে সরিয়ে না ফেলায় সেগুলো থেকে ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে।

 

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরী বলেন, সুন্দরবনের মাটি ও পানিতে লবণাক্ততা বাড়ার কারণেই মূলত সুন্দরী গাছ মরে যাচ্ছে। গাছের উচ্চতাও কমছে।

 

তিনি আরো বলেন, সুন্দরী গাছের বীজ লবণাক্ত পানিতে পড়ার কারণে তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। নতুন গাছ কম জন্মাচ্ছে। কারণ লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় মাটির পারস্পরিক সম্পৃক্ততা (কণা) দুর্বল হয়ে যায়। এমনকি শুষ্ক মৌসুমে সুন্দরবনের নদ-নদীতে লবণাক্ততা ৩০ পিপিএম পর্যন্ত বেড়ে যাচ্ছে।

 

এছাড়া লবণাক্ততার কারণে সুন্দরবনের উদ্ভিদরাজির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যাচ্ছে। খুলনা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ডক্টর মো. মোহসিন হোসেন বলেন, ফারাক্কার বাঁধের কারণে মিষ্টি পানির সরবরাহ কমে গেছে । যার ফলে সুন্দরবনের নদ-নদীতে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় সুন্দরী গাছ মরে যাওয়ার কারণ হতে পারে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version