-->
শিরোনাম

জুতা সেলাই করে চলছে মায়া রানীর সংসার

বিশ্বজিৎ কুমার দে, কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ)
জুতা সেলাই করে চলছে মায়া রানীর সংসার
উপজেলার একমাত্র নারী মুচি মায়া রানী

কটিয়াদী উপজেলার পূর্ব চারিপাড়া গ্রামে অন্যের জায়গায় বসবাস করেন বিধবা মায়া রানী (৩২)। স্বামী যোগেশ রবিদাস মুচির কাজ করতেন। তার উপার্জন দিয়ে কোনোমতে টেনেটুনে সংসার চলত। মাস তিনেক আগে মৃত্যু হয় তার। এরপরই সংসারে নেমে আসে চরম অভাব। খেয়ে না খেয়ে চলছিল তাদের জীবন। কিন্তু পেটের জ্বালা যে বড় জ্বালা।

 

তাই বাধ্য হয়েই সংসার চালাতে স্বামীর পথ অনুসরণ করে জুতা সেলাই কাজ শুরু করেন মায়া রানী।

 

উপজেলার একমাত্র নারী মুচি তিনি। চার শিশু সন্তানের মুখে দু’মুঠো ভাত তুলে দিতে মাঝে মাঝেই নিজে এক বেলা খেয়ে কাটান। এত কষ্ট করে জীবন চললেও তার ভাগ্যে জোটেনি সরকারি বিধবা ভাতা। ঠাঁই হয়নি সরকারি কোনো আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে।

 

জানা গেছে, মায়া রানীর চার সন্তান। তার বড় মেয়ে লিপি রানী (১৪) বাড়িতে থাকেন। ছেলে সাধন (৯) ও মেয়ে চৈতী রানী (৭) মাকে জুতা সেলাই কাজে সহযোগিতা করে। সব থেকে ছোট মেয়ে বৈশাখী রানী ৫ বছরের। অভাবের সংসারে সন্তানদের লেখাপড়া করানোর সামর্থ্যও নেই তার। তাই সন্তানকে সাথে নিয়ে কটিয়াদী সরকারি কলেজ সংলগ্ন রাস্তার পাশে তার স্বামী যেখানে বসে মুচির কাজ করতেন সেখানেই বসেন তিনি।

 

স্বামীর জীবদ্দশায় আশ্রায়ণের একটি ঘরের জন্য চেষ্টা করেছিলেন। অদৃশ্য কারণে তাও ভাগ্যে জুটেনি। সরকার ইতোমধ্যে কটিয়াদী উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত ঘোষণা করেছেন। কিন্তু ভূমি-গৃহহীন এই পরিবারটি অন্যের একটি পরিত্যক্ত ঘরে মানবেতর জীবনযাপন করছে।

 

মায়া রানী বলেন, জুতা সেলাই-কালি করে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা আয় হয়। আবার কোনো কোনো দিন ১০০ টাকাও আয় হয় না। এই টাকা দিয়ে পাঁচজনের সংসার আর চলছে না। শারীরিক অবস্থাও ভালো না আমার, অসুখ-বিসুখ লেগেই থাকে। অসুস্থ হয়ে কাজে যেতে না পারলে, সেদিন রান্নার হাঁড়ি উনুনে উঠানো কঠিন হয়ে পড়ে। আমার কোনো ভাতার কার্ড নাই। সরকারি ভাতা পাব কিনা জানি না। তবে পিতৃহারা অনাথ শিশুসন্তানদের জন্য সরকারের কাছে মাথা গোঁজার ঠাঁই চাই।

 

প্রতিবেশী হাসনা জাহান, রতন ও নবী হোসেন বলেন, মায়া রানী খুবই অসহায় নারী। সে ভিক্ষা বৃত্তি না করে কর্ম করে জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাওয়া তার জন্য একান্ত জরুরি।

 

এ বিষয়ে আচমিতা ইউপি চেয়ারম্যান মতিউর রহমান বলেন, আশ্রয়ণের ঘরের তালিকা পূর্ববর্তী চেয়ারম্যানের সময় হয়েছে। কেন এই পরিবারটি তালিকাভুক্ত হয়নি বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে মায়া রানীকে বিধবা ভাতা পাওয়ার ব্যাপারে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।

 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খানজাদা শাহরিয়ার বিন মান্নান বলেন, ঘরের জন্য আবেদন করলে বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version