-->
শিরোনাম

ব্রহ্মপুত্র বাঁচাতে অভিনব প্রতিবাদ ‘মৃতের চিৎকার’

মীর বাবুল, ময়মনসিংহ
ব্রহ্মপুত্র বাঁচাতে অভিনব প্রতিবাদ ‘মৃতের চিৎকার’

মীর বাবুল, ময়মনসিংহ: ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে বিশাল ব্যানারে কালো রঙে লেখা ‘মৃতের চিৎকার’। তার পাশে ছোট ছোট প্ল্যাকার্ড নীরবে দাঁড়িয়ে জানান দিচ্ছে মৃতপ্রায় রুগ্ণ নদের ভেতরকার ক্ষোভ আর আর্তনাদের কথা। হাঁটুপানিতে বসানো ডাইনিং টেবিলে সাজানো আছে হরেকরকম খাবার, তবে নেই তৃষ্ণা মেটানোর পানি। চারদিকে যেন পানির জন্য হাহাকার। পাশেই একদল তরুণ গাইছে যৌবনা ব্রহ্মপুত্রের বিরহে বিরহগাথা গান। কবির কলম চিরে বেরিয়ে এসেছে নদের বুকফাটা আর্তনাদ।

 

শুক্রবার দুপুরে নগরীর কাচারিঘাট এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের হাঁটুপানিতে নেমে এভাবেই নদ খনন কাজের প্রতিবাদ জানান ময়মনসিংহের সংস্কৃতিকর্মীরা। কবি শামীম আশরাফ আয়োজন করেন মৃতের চিৎকার নামে ব্রহ্মপুত্র নদ রক্ষার এ কর্মসূচি। এতে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, সংস্কৃতিকর্মী, রাজনৈতিক নেতাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ সংহতি প্রকাশ করে হাঁটুপানিতে নেমে চিৎকার করে প্রতিবাদ জানান। এ সময় তারা মৃতপ্রায় ব্রহ্মপুত্র নদের নাব্য ফিরিয়ে আনার দাবি জানান।

 

আয়োজনের উদ্যোক্তা শামীম আশরাফ বলেন, শিল্পের মানুষের চিন্তা নিয়ে সমন্বিতভাবে মৃতের চিৎকার কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। হাজার কোটি টাকা বাজেট হওয়ার পরও, কাজ হওয়ার পরও কেন নদে হাঁটুপানি। এ মৃত নদের চিৎকার অনেকের কাছে হয়তো পৌঁছাবে না। কিন্তু শিল্পের ভেতর দিয়ে দায়িত্বশীলসহ সবার কাছে নদের আর্তনাদ পৌঁছে দিতেই আমাদের এ চিৎকার।

 

কর্মসূচিতে অংশ নেয়া জনউদ্যোগ ময়মনসিংহ নামে একটি সামাজিক সংগঠনের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম চুন্নু বলেন, ২ হাজার ৭৬৩ কোটি ৬০ লাখ টাকার খনন প্রকল্প চলছে ব্রহ্মপুত্রে। গত বছর মে মাসে এক সভায় প্রকল্প পরিচালক বলেছিলেন এ চলতি বছর জুন-জুলাইয়ে নদে বার্জ, লঞ্চ-স্টিমার চলবে। কিন্তু আমরা দেখছি ঠিক উল্টো। এখন অনেক স্থানে হেঁটে পার হওয়া যায়। হাঁটুর নিচে পানি থাকে। ১০ ইঞ্চি পানিও কোথাও কোথাও নেই। যেখানে শুষ্ক মৌসুমেও কমপক্ষে ১০ ফুট পানি থাকার কথা। আমার মনে হয় নদ খনন করে যৌবন ফিরিয়ে আনার পরিবর্তে এটিকে মেরে ফেলার একটা পরিকল্পনা হচ্ছে। তাই আমরা এ খনন কাজের প্রতিবাদ করছি এবং ধারাবাহিক আন্দোলন করে যাব। যাতে সরকারের অর্থের অপচয়টা না হয়, যথাযথভাবে যেন নদ খনন হয় এবং ব্রহ্মপুত্র যাতে তার যৌবন ফিরে পায়।

 

বঙ্গবন্ধু শিশু একাডেমি ময়মনসিংহ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক কবি শরিফুল ইসলাম সরকার বলেন, আমি নিজেই ব্রহ্মপুত্রকে খরস্রোতা নদ হিসেবে দেখেছি। কিন্তু এ নদ খননের নামে টাকা অপচয় করা হচ্ছে, বিভিন্ন কৌশলের মাধ্যমে অসাধু ব্যক্তিরা দখলের চক্রান্ত করছে। প্রধানমন্ত্রী এ নদ খননের জন্য যে বাজেট দিয়েছেন তার সঠিক ব্যবহার করা হচ্ছে না। আমার অবস্থান থেকে এসবের প্রতিবাদ জানাতেই এখানে এসেছি। কারণ আমরা সেই পুরোনো নদ আবারো ফিরে পেতে চাই।

 

জানা গেছে, দখল, দূষণ আর পলি জমে ভরাট হয়ে যাওয়া ব্রহ্মপুত্র নদের নাব্য ফিরিয়ে আনতে ২০১৯ সালের শেষের দিকে শুরু হয় খননকাজ। প্রায় ২ হাজার ৭৬৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নদের ২২৭ কিলোমিটার খনন করছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিওটিএ)। খননের পর যমুনা-ব্রহ্মপুত্রের সংযোগস্থল জামালপুরের কুলকান্দি থেকে কিশোরগঞ্জের টোক পর্যন্ত নদটি ৩০০ ফুট প্রশস্ত ও শুষ্ক মৌসুমে ১০ ফুট গভীর থাকবে এমনটি কথা ছিল।

 

‘পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের নাব্য উন্নয়নে ড্রেজিং’ শীর্ষক প্রকল্পটি আগামী ২০২৪ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। ৫ বছর মেয়াদি প্রকল্পের প্রথম ২ বছর নদের ড্রেজিং এবং পরবর্তী তিন বছর রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করার কথা ছিল। চলতি বছরের জুন-জুলাই থেকে ঢাকা পর্যন্ত বার্জ চলার কথা ছিল। গেল বছর ময়মনসিংহে এক সভায় এমন কথা জানিয়েছিলেন ব্রহ্মপুত্র নদ খননের প্রধান প্রকল্প সমন্বয়কারী প্রকৌশলী খন্দকার রাকিবুল ইসলাম।

 

শুক্রবার আয়োজিত প্রতিবাদ কর্মসূচি নিয়ে জানতে চাইতে তিনি বলেন, জুলাই মাসে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকা পর্যন্ত বার্জ চলবে। উদ্বোধনের জন্য মন্ত্রীর সিডিউল চাওয়া হয়েছে। প্রকল্পের টাকা ছাড় না হওয়ায় খননকাজ চলছে ধীরগতিতে। ঊর্ধ্বমুখের অংশে কাজই শুরু করা যায়নি।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version