-->
শিরোনাম

দিনাজপুরে লক্ষ্যমাত্রার বেশি টমেটো উৎপাদন, কৃষকের মুখে হাসি

আব্দুস সালাম, দিনাজপুর
দিনাজপুরে লক্ষ্যমাত্রার বেশি টমেটো উৎপাদন, কৃষকের মুখে হাসি
পুনর্ভবা নদীর ব্রিজের ওপারে বসেছে টমেটোর বড় আড়ৎদার বাজার

আব্দুস সালাম, দিনাজপুর: কৃষি আবহমান বাংলার আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও ঐতিহ্যের মূল চালিকাশক্তি। জাতীয় খাদ্য উৎপাদনে দেশের সর্ব উত্তর-পশ্চিমের শস্যভাণ্ডার খ্যাত দিনাজপুর জেলার অবদান অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এবার দিনাজপুর জেলায় ১১০২ হেক্টর জমিতে নাবী টমেটো চাষ করা হয়েছে। নাবী টমেটো জাতের মধ্যে বিপুল, রানী, রোমা ভি, এফ (প্রোভেসিফ) চাষাবাদ বেশি হচ্ছে।

 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা প্রতি হেক্টর জমিতে ৪৯.৯০ টন ধরা হয়েছে অর্থাৎ ৫৫ হাজার টন নাবী টমেটো দিনাজপুর জেলাতে উৎপাদন হবে।

 

জেলার সব উপজেলা থেকে সদর উপজেলায় এ বছর ৭৯০ হেক্টর জমিতে টমেটো চাষ হয়েছে। বৃষ্টিপাত না হলে টমেটো উৎপাদনের বাজার ৩০ থেকে ৪০ দিনের মধ্যে শেষ হবে। এর মধ্যে সদর উপজেলার শেখপুরা ৪নং ইউনিয়ন অন্যান্য ইউনিয়নের চেয়ে সিংহভাগ টমেটো চাষের ক্ষেত্রে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। বর্তমানে এই ইউনিয়নে ৫০০ হেক্টর জমিতে টমেটো চাষাবাদ হয়েছে। সদর উপজেলায় ৪নং শেখপুরা ইউনিয়নের গোপালপুরহাটে (গাবুড়ায়) ৩৩ শতকের জায়গায় ওপর টমেটোর বাজার জমে উঠেছে। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কৃষকরা উৎপাদিত টমেটো খুব সকালে বাজারে নিয়ে আসে। রাস্তায় টমেটোর সারি সারি বহনকারি গাড়ি অপেক্ষায় থাকে। ব্যবসায়ীরা তাদের পছন্দমতো টমেটো সংগ্রহ করে। পুনর্ভবা নদীর ব্রিজের ওপারে বসছে টমেটোর বড় আড়াৎদার বাজার। এ মৌসুমে বাজারটি ২৩ লাখ টাকায় ইজারাদার নিয়েছে। হাটটি গোপালপুরহাট (গাবুড়া) নামে শুধু দিনাজপুর জেলা নয়, দেশের সমগ্র জেলায় পরিচিতি রয়েছে। প্রতিনিয়ত এই বাজার থেকে ৪০-৫০ ট্রাক পণ্য দেশের বিভিন্ন জেলায় পরিবাহিত হয়। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এখানে এসেছে।

 

ব্যবসায়ী দেলোয়ার মাতবর বলেন, প্রতি বছরের মতো ঢাকা থেকে এসেছি। প্রতিদিন ২ থেকে ৩ ট্রাক পণ্য ঢাকায় পাঠাই। প্রতি ট্রাকে ৪৫০ থেকে ৫০০ ক্যারেট টমেটো ভর্তি করা হয়। প্রতি টমেটো ক্যারেটে খরচ পড়ে ১০০ টাকা ঢাকা পর্যন্ত নিয়ে যেতে। গাড়িভাড়া বেশি হওয়ায় ক্যারেটপ্রতি দাম বেড়ে যায়।

 

শরীয়তপুরের ব্যবসায়ী রিপন বলেন, এখানকার বাজার পরিবেশ ভালো। শ্রমিকের কোনো অভাব নেই। আমাদের কোনো অসুবিধে হচ্ছে না। টমেটোর মান ভালো।

 

কৃষকরা জানালেন, এক বিঘা জমিতে টমেটো উৎপাদন করতে ৪০-৫০ হাজার টাকা খরচ হয়। প্রতি বিঘায় ২৫০-৩০০ মণ টমেটো উৎপাদিত হয়। এক মণ টমেটো বিক্রি উপযোগী করতে ৩০০-৩৫০ টাকা খরচ হয়। বর্তমান সময়ে বাজারে টমেটোর গুণাগুণ ভেদে ৬৫০-৭৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

 

টমেটোর বাজারে সরেজমিনে দেখা গেছে, চাহিদার তুলনায় এবার উৎপাদিত টমেটো বেশি পরিমাণে আমদানি হওয়ায় আর মধ্যস্থতাকারী ব্যবসায়ীরা নিজস্ব সিন্ডিকেট হওয়ায় কৃষকরা ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। কখনো বাজার উচ্চ গতিতে আবার কখনো বাজার নিম্ন গতিতে চলছে।

 

কৃষকরা বলছেন, উৎপাদিত টমেটো হিমাগারে রাখতে পারলে বাজারের এ রকম প্রভাব কমবে। বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে। চাষিরা ন্যায্য দাম পাবে এবং সেসঙ্গে টমেটো উৎপাদনে উৎসাহিত হবে কৃষকরা।

 

৪নং শেখপুরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন গড়ে ৫৫০ থেকে ৬০০ টন টমেটো দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে। জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় এখানকার টমেটো বাজারে সুন্দর পরিবেশ বিরাজ করছে। দেশের নানা স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা আসছে, টমেটোর বাজার বিস্তৃতির ক্ষেত্রে জায়গার স্বল্পতা আছে।

 

বাজার সম্প্রসারিত করার বিষয়ে বলেন, উন্নত হিমাগার থাকলে বাজারে দাম স্থিতিশীল থাকবে, তাহলে কৃষকরা ন্যায্য দাম পাবে এবং বাজার সম্প্রসারিত হবে। আর বেকারত্বও ঘুচবে।

 

শেখপুরা ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোস্তাকিন বলেন, চাহিদার তুলনায় বর্তমানে কৃষকরা পর্যাপ্ত টমেটো বাজারে সরবরাহ করছে এবং কৃষকরা ন্যায্য দাম পাচ্ছে। দিন দিন বাজারে টমেটোর দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষকদের এখন লোকসানের হাত থেকে রেহাই পেয়ে মুখে হাসি ফুটছে।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version