-->
শিরোনাম

সৈয়দপুর শহরের রাস্তাগুলোই যেন ডাস্টবিন, দূষণ-দুর্গন্ধে জনভোগান্তি

মো. মাইনুল হক, নীলফামারী
সৈয়দপুর শহরের রাস্তাগুলোই যেন ডাস্টবিন, দূষণ-দুর্গন্ধে জনভোগান্তি
ছবিটি রোববার সবজি বাজারের দক্ষিণ মাথায় কলাহাটি সংলগ্ন সড়কের ওপর থেকে তোলা

মো. মাইনুল হক, নীলফামারী: নীলফামারীর সৈয়দপুর প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হলেও এই শহরের রাস্তাগুলোই যেন ডাস্টবিন। পাড়া-মহল্লার অলিগলির রাস্তাই শুধু নয়, প্রধান প্রধান সড়কগুলোও ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। যত্রতত্র খোলা স্থানে রাস্তাজুড়ে ময়লার স্তূপ হওয়ায় এবং ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ায় যান চলাচলসহ লোকজনের যাতায়াতে সমস্যা হচ্ছে।

 

বিশেষ করে জনবহুল ও গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় জমে থাকা আবর্জনা দিনের পর দিন পরে থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে পৌরবাসী। পচা-ময়লা থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে দূষণ ঘটে চারপাশের পরিবেশ বিষিয়ে উঠেছে। ফলে জনভোগান্তি দেখা দিয়েছে পুরো শহরে। দীর্ঘদিন থেকে এ পরিস্থিতি বিরাজ করলেও কর্তৃপক্ষ নির্বিকার থাকায় জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

 

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, শহরের প্রাণকেন্দ্র শহীদ ডা. জিকরুল হক সড়কের উত্তরের মাথায় স্মৃতি অম্লান চত্বরের সামনে গৃহস্থালি ও পয়বর্জ্যরে স্তূপ। এখানে বছরের পর বছর ধরে এভাবে ময়লা ফেলে অনির্ধারিত উন্মুক্ত ডাস্টবিনে পরিণত করা হয়েছে।

 

পৌর কর্তৃপক্ষই এ স্থানে ময়লা ফেলার ব্যবস্থা করেছে। ফলে রেলওয়ে কারখানা, স্টেশন, হাসপাতালসহ ৩টি ওয়ার্ডের ও একটি ইউনিয়নের লোকজনের চলাচলের অন্যতম এই সড়কটি নোংরা আবর্জনার ভাগাড় হয়ে পড়েছে। এতে যাতায়াতে অসহনীয় কষ্ট পোহাচ্ছে লোকজন। সঙ্গে নষ্ট হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ এলাকার পরিবেশ।

 

জনবহুল এলাকা এবং ব্যস্ততম সড়ক হওয়ায় প্রতিমুহূর্তে অকল্পনীয় ভোগান্তি সইতে হচ্ছে জনগণকে। সেইসাথে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রাস্তাটা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তেমনি ওই নোংরা রোগজীবাণু যানবাহনের চাকা আর লোকজনের পায়ে পায়ে শহরময় ছড়িয়ে পড়ছে।

 

এ ছাড়াও কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল সংলগ্ন নিয়ামতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গেটের দুই পাশে মূল সড়কেই গড়ে উঠেছে স্থায়ী উন্মুক্ত ডাস্টবিন। স্কুলের শিশু শিক্ষার্থী, শিক্ষকরাসহ দোকানদার ও পথচারীরা চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছে।

 

এসব হলো উল্লেখযোগ্য কয়েকটির বর্ণনা। এগুলোর পাশাপাশি বড় বড় প্রায় সব সড়কসহ পাড়া-মহল্লার প্রতিটি রাস্তায় এমন উন্মুুক্ত ময়লার স্তূপের ছড়াছড়ি। এমন কোনো ওয়ার্ড নেই যেখানে রাস্তায় খোলাভাবে আবর্জনা ফেলা হয় না। এসব ময়লা-আবর্জনা সপ্তাহেও পরিষ্কার না করায় সমগ্র শহরই স্থায়ী ডাস্টবিন হয়ে গেছে।

 

এ ব্যাপারে সৈয়দপুর পৌরসভার কনজারভেন্সি ইনচার্জ মমিনুল ইসলাম বলেন, পুরো সৈয়দপুর শহরেই সব কাজই রাস্তায় হয়। তাই রাস্তায় ময়লা-আবর্জনা থাকলে সমস্যা কি? প্রতিদিনের জঞ্জাল তো দৈনন্দিনই সরিয়ে ফেলা হয়। অনেক সময় বিকেল গড়িয়ে যায় এই আর কি। এতটুকু সহ্য করতে হবে। এটা সৈয়দপুর, সিঙ্গাপুর তো নয়।

 

পৌর নির্বাহী প্রকৌশলী সহিদুল ইসলাম বলেন, ৩ লাখ জনসংখ্যার এই শহরে মাত্র ২০টি ডাস্টবিন রয়েছে। জনবহুল ঘিঞ্জি শহর হওয়ায় ময়লা-আবর্জনা ফেলার পর্যাপ্ত জায়গার সংকট। জনগণ জায়গা না দেয়ায় উদ্যোগ সত্ত্বেও আর ডাস্টবিন তৈরি করা সম্ভব হয়নি।

 

যেখানে যেখানে মানুষজন ময়লা ফেলছে সেই জায়গাগুলোতে ডাস্টবিন করে দিলে তো কমপক্ষে এলাকাগুলো নোংরা হওয়া থেকে রক্ষা পেত এবং স্বাস্থ্যঝুঁকিমুক্ত হতো। কেন তা করা হচ্ছে না প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই। মেয়র ও সচিবই এ নিয়ে ভালো বলতে পারবেন।

 

কামরান নামে জিকরুল হক সড়কের এক ব্যবসায়ী বলেন, প্রথম শ্রেণির পৌরসভার বাসিন্দা হয়েও আমরা ন্যূনতম নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত। সামান্য ময়লা ফেলার ডাস্টবিনও নেই পর্যাপ্ত পরিমাণে। যে কারণে যেখানে সেখানে আবর্জনা ফেলতে হয়। এতে শহরের অধিকাংশ রাস্তাই আজ যেন ডাস্টবিন। চলাচলে দুর্বিষহ ভোগান্তি আর দুর্গন্ধে দম আটকানোর অবস্থা। কলাহাটির আবর্জনার স্তূপটা সরানো হোক নয়তো স্থায়ী ডাস্টবিন করে দেয়া হোক।

 

পৌর সচিব সাইদুজ্জামান বলেন, আমি নতুন এসেছি তাই এখনো সব বিষয়ে জানা হয়ে উঠেনি। সে কারণে এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। তবে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হবে।

 

পৌর মেয়র রাফিকা আকতার জাহান বেবী মুঠোফোনে বলেন, এ ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করে পরে জানাব। এর কিছুক্ষণ পর নিজেই কল দিয়ে জানান, এসব এলাকায় ডাস্টবিন আছে কি না তা আগে যাচাই করতে হবে। ডাস্টবিন থাকার পরও যদি রাস্তায় ময়লা-আবর্জনা ফেলে তাহলে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে। গত ৩ বছরেও কি এ নিয়ে জানা বা বোঝা শেষ হয়নিÑ প্রশ্ন করলে তিনি সামগ্রিক বিষয়টি এড়িয়ে যান।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version