লিচুর রাজ্য হিসেবে উত্তরের জেলা দিনাজপুরের বেশ সুনাম রয়েছে সারা দেশে। এ অঞ্চলের বেলে-দোআঁশ মাটি লিচু চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় প্রতিবছরই স্থানীয় কৃষকেরা লিচু চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। বর্তমানে গাছে গাছে ঝুলছে মাদ্রাজি-বেদানা-বম্বাইয়ের থোকা। দিনাজপুরের ১৩ উপজেলাতেই কম বেশি লিচুর আবাদ হয়।
সবচেয়ে বেশি চাষ হয় সদর উপজেলার মাসিমপুর, উলিপুর, আউলিয়াপুর মহব্বতপুর বিরলের মাধববাটি, করলা, রবিপুর, রাজারামপুর, মহেশপুর বটহাট এবং চিরিরবন্দর ও খানসামা উপজেলায়। সাধারণত বাংলা জ্যৈষ্ঠ মাসের শুরুতে দিনাজপুরের লিচু পাকতে শুরু করে।
তবে চাষিরা বলছেন, এবার বৃষ্টি কম হওয়ায় লিচুর দেখা মিলবে জ্যৈষ্ঠের শেষ ভাগে। আবহাওয়া অধিদপ্তর এপ্রিলের শেষ ভাগে বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা জানালেও সেই অর্থে বৃষ্টি হয়নি দিনাজপুরে।
বিরলের মাধববাটি এলাকার চাষি লিমন রহমান বলেন, ঠিক এই মুহূর্তে বৃষ্টি দরকার। এখন লিচুর দানাটা পুষ্ট হতে শুরু করেছে। আমরা সেচ দিচ্ছি নিয়মিত। কিন্তু আকাশের বৃষ্টি হলে ভালো। আর দুই সপ্তাহ পর বৃষ্টি হলে তখন হঠাৎ ফলের গ্রোথ বেড়ে যাবে। লিচু ফেটে গিয়ে ঝরে পড়বে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, জেলায় ৫ হাজার ৪৯০ হেক্টর জমিতে লিচুর বাগান আছে ৫ হাজার ৪১৮টি। এর মধ্যে বোম্বাই লিচু ৩ হাজার ১৭০ হেক্টর, মাদ্রাজি ১ হাজার ১৬৬ হেক্টর , চায়না থ্রি ৮০২ হেক্টর, বেদানা ২৯৫.৫ হেক্টর, কাঁঠালি ৫৬ হেক্টর এবং মোজাফফরপুরী লিচু ১ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে।
এ ছাড়া বসতবাড়ির উঠানসহ বাগানগুলোতে লিচুগাছ আছে প্রায় সাত লাখ। এবার লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩১ হাজার ৭৯০ টন। গত দুই দিন সদর উপজেলার মাসিমপুর, উলিপুর, আউলিয়াপুর ও বিরলের মাধববাটি, রবিপুর এলাকায় লিচুবাগান ঘুরে দেখা গেছে, গাছে গাছে সবুজ রঙের থোকা থোকা লিচু ঝুলে আছে। ফলের ভরে কিছুটা নুয়ে পড়েছে গাছের ডালগুলো। গাছের পরিচর্যাও প্রায় শেষ।
চাষিরা জানিয়েছেন, আরো একবার গাছে ভিটামিন প্রয়োগ করা হবে। এ ছাড়া লিচুর গোড়ায় পোকা রোধে কীটনাশক স্প্রে করা হবে।
রবিপুর এলাকার লিচু চাষি শিশির শাহ জানান, ৩০ বিঘা জমিতে তার লিচু বাগান আছে। তবে এ বছর বেদানা ও মাদ্রাজির ফলন কম। কৃত্রিম সেচ দিয়ে যাচ্ছেন। গেল মৌসুমে ৩০ লাখ টাকার লিচু বিক্রি করেছেন তিনি। তবে এবার অন্তত ৪০ শতাংশ ফলন কমেছে বলে দাবি করেছেন তিনি।
লিচু চাষিরা বলছেন, কৃষকের শত্রু ও মিত্র দুটোই হচ্ছে আবহাওয়া। এবার শীত কম হওয়ায় গাছে মুকুল কম এসেছে, এর ওপর অনাবৃষ্টি। সব মিলিয়ে এবার ফলন কম হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন চাষিরা। তবে ফলন কম হলেও লিচুর দাম পাওয়া নিয়ে তারা আশাবাদী।
খানসামা উপজেলার শম্ভুগাও গ্রামের কৃষক মোশাররফ হোসেন বলেন, লিচুর ফলন কম হওয়ায় চাহিদা থাকবে বেশি। এ ছাড়া এবার পরিচর্যার খরচও বেশি হয়েছে। তাই এবার লিচুর দাম বেশি থাকবে।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নুরুজ্জামান বলেন, কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী চাষিরা গাছ ও ফলের পরিচর্যা করছেন। গতবার দিনাজপুরে লিচুর ফলন ছিল ৩০ হাজার টন। সাধারণত একবার বেশি ফলন হলে পরেরবার ফলন কিছুটা কমে যায়। তবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। ইতোমধ্যে ফল পুষ্ট হয়ে গেছে প্রায়।
দিনাজপুরে মূলত মাদ্রাজি, বেদানা, হাড়িয়া বেদানা, বোম্বাই, চায়না থ্রি, কাঁঠালি লিচু চাষ হয়। এর মধ্যে বাজারে প্রথম দেখা মিলবে মাদ্রাজি লিচুর। এটা দেখতে খানিকটা লম্বাকৃতির। পাকলে গাঢ় গোলাপি রঙের হয়, শাঁস তুলনামূলক কম আর বিচি আকারে বড়। তবে ঘ্রাণ আর স্বাদে অনন্য মাদ্রাজি লিচু।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য