-->
শিরোনাম
ঘূর্ণিঝড় মোখা

ভয়াল ঝুঁঁকিতে কক্সবাজার উপকূলের ২৩ লাখ মানুষ

এইচ এম ফরিদুল আলম শাহীন, কক্সবাজার
ভয়াল ঝুঁঁকিতে কক্সবাজার উপকূলের ২৩ লাখ মানুষ
কক্সবাজারের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিত মানুষ

কক্সবাজার উপকূলের ১১ লাখ ও ১২ লাখ রোহিঙ্গাসহ ২৩ লাখ লোক প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতে ভয়ংকর ক্ষয়ক্ষতির আশংকায় চরম উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় রয়েছেন।

 

বিশেষ করে ঘূর্ণিঝড় মোখা যত এগিয়ে আসতে শুরু করেছে, কক্সবাজারের সেন্টমার্টিন দ্বীপ এবং টেকনাফ উপক‚লের লোকজনের মধ্যে বাড়ছে উৎকণ্ঠা। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছেন। ঘূর্ণিঝড়ের বাতাসের গতিবেগ ১৯০ কিলোমিটার বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অফিস।

 

শনিবার দুপুরের পর থেকেই সেন্টমার্টিনসহ কক্সবাজার উপকূলের বাসিন্দারা বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে উঠতে শুরু করেছেন। সেন্টমার্টিনের বহুতল হাসপাতাল, সাইক্লোন শেল্টার ও গেস্ট হাউসের পাশাপাশি বহুতল রিসোর্টগুলোকেও আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষণা করা হয়েছে।

 

জেলার প্রায় পাঁচ লাখ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। তবে টেকনাফ ও উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ১২ লাখের বেশি মানুষকে আপাতত ক্যাম্পেই রাখা হয়েছে।

 

বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, রোববার বিকেল নাগাদ অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা বাংলাদেশের টেকনাফ উপকূল দিয়ে অতিক্রম করতে পারে। তবে ঘূর্ণিঝড়টি যেকোনো সময় গতিপথ পরিবর্তন করতে পারেন বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

 

সেন্টমার্টিন দ্বীপে বর্তমানে প্রায় ১০ হাজার মানুষ রয়েছে বলে জানান সেখানকার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান। টেকনাফ থানার ওসি আবদুল হালিম জানান, গত শুক্রবার থেকে থানায় আশ্রয় নেয়া লোকজনের দেখভাল করছেন পুলিশ সদস্যরা।

 

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান বলেছেন, ‘সেন্টমার্টিনে যেসব সরকারি স্থাপনা, যেগুলো শক্ত, মজবুত, দু-তলা, তিনতলা এ রকম ৩৭টা স্থাপনা আমরা আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করছি। ওখানে ৭ হাজার মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে।

 

এ রকম একটি হোটেল ব্লু মেরিনের ব্যবস্থাপক মনসুর আহমেদ বলেন, আমাদের দোতলা আর তিনতলায় পাঁচশর বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। সব রুমই খুলে দেয়া হয়েছে। মহিলা আর শিশুরা কক্ষগুলোয় রয়েছে, আর পুরুষরা থাকছে বাইরে।

 

রেডক্রিসেন্ট টিম লিড়ার আবদুল গফুর বলেন, এর মধ্যেই দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ নানা আশ্রয়কেন্দ্রে চলে গেছে। বাকিরাও আস্তে আস্তে চলে যাচ্ছে।

 

তিনি আরো জানান, দ্বীপে এখন বৃষ্টি হচ্ছে। কিছু দোকানপাট খোলা থাকলেও উপক‚লের কাছাকাছি এবং দূরের দোকানপাটগুলো বন্ধ হয়ে গেছে।

 

আবহাওয়াবিদরা আশঙ্কা করছেন, অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা অত্যন্ত বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। ঝড়ের প্রভাবে সেখানে বৃষ্টি হচ্ছে। কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের বিমান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

 

ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, সবাইকে আমরা নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়ার কাজ করছি। আমরা চাই না ঝড়ে কোনোরকম প্রাণহানির ঘটনা ঘটুক।

 

স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, উপকূলের কাছাকাছি যেসব জেলেরা বসবাস করেন, তাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনার প্রতি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। শনিবার মধ্যরাতের মধ্যেই সবাইকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

 

কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ড. তানজির সাইফ আহমদ জানান, জেলার উপকূলীয় অঞ্চলের ৫৯৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ কোথায়ও অরক্ষিত নেই। চলতি অর্থবছরে টেকনাফ, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, চকরিয়া কক্সবাজার সদরসহ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় জরুরিভিক্তিতে বাঁধ মেরামতের কাজ করা হয়েছে। অতি ঝুঁকিপূর্ণ টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ ও কুতুবদিয়া টেকসই বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। কক্সবাজার সি বিচের ভাঙন ঠেকাতে নাজিরার টেক থেকে লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার জিও ব্যগ ফেলে ভাঙনরোধ করা হয়েছে।

 

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিভীষণ কান্তি দাশ জানান, মোট ৬৩৬টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত আছে, যেখানে ৫ লাখের ওপর মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে। এর বাইরে স্কুল, কলেজ ও কয়েকটি হোটেল-মোটেল আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ পর্যন্ত আড়াই লাখ লোক ও বিশ হাজার গবাদিপশু আশ্রয়কেন্দ্রসমূহে অবস্থান করছে। তাদের পর্যাপ্ত খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে।

 

কক্সবাজারের উখিয়া আর টেকনাফের ৩৩টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১২ লাখের বেশি মানুষ বসবাস করে। ত্রিপল, বাঁশ, কাঠ দিয়ে তাদের ঘরগুলো তৈরি। অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়ে সেগুলো টিকবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

 

বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান শনিবার ঢাকায় সাংবাদিকদের বলেছেন, আমাদের পরিকল্পনা হচ্ছে প্রাণহানি এড়ানো। বিশেষ করে ঝড়ের পরের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলার প্রতিও আমরা বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি। অতি বৃষ্টির কারণে হঠাৎ বন্যা বা ভূমিধসের ঝুঁকিও থেকে যাচ্ছে।

 

কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ব্যতিত সাড়ে তিন লাখ লোক পাহাড়ে ঢালে, চূড়ায় ও পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস করছেন। সাইক্লোনের ঝড়ের আঘাতে তাদেরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version