-->

বিলুপ্তির পথে কুয়া

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
বিলুপ্তির পথে কুয়া
সংস্কার করলেই পুনরায় ব্যবহার করা যাবে ঐতিহ্যবাহী এই কুয়া

কুড়িগ্রামে প্রাচীন ঐতিহ্যের কুয়া বা ইন্দারা এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। এক সময় মানুষের পানের জন্য সুপেয় পানি হিসেবে গ্রামে একমাত্র উৎস ছিল এই কুয়া। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গ্রামের বধূরা কলসি কাকে নিয়ে কুয়ার পানি তুলে ঘরে নিয়ে যেত। গ্রামের মানুষ মাঠের কাজ শেষ করে এসে একসঙ্গে কুয়ার পানি দিয়ে গোসল করত।

 

এখন সেই দৃশ্য আর চোখে পড়ে না। সময়ের সাথে সাথে সেই দৃশ্যপট আমাদের কাছে অতীত। প্রায় ৯০ থেকে ১শ বছর পূর্বে গ্রামে-গঞ্জে পানের সুপেয় পানি পান করার জন্য এই কুয়া তৈরি করা হয়েছিল। সংস্কারের অভাবে প্রচীন আমলের ঐতিহ্যের কুয়া বা ইন্দারাগুলো এখন বিলুপ্তির পথে।

 

বর্তমানে কুড়িগ্রামের পাড়া মহল্লায় এখনো কালের সাক্ষী হয়ে আছে ঐতিহ্যের কুয়া বা ইন্দারা। আঞ্চলিক ভাষায় এই কুয়াকে বলা হয় ইন্দারা। এর প্রকৃত নাম হলো ইন্দ্রাগার। সংস্কৃত শব্দটি ইন্দ্র ও আগার থেকে এসেছে। ইন্দ্র অর্থ বৃহৎ আগার অর্থ কূপ, অর্থাৎ ইন্দ্রাগার শব্দের অর্থ হলো বৃহৎ কূপ। আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে এসব ঐতিহ্যের কুয়া বা ইন্দারা। পর্যায়ক্রমে মানুষ শিক্ষিত ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের যুগে নলকূপ বা মেশিন বসিয়ে মাটির গভীর থেকে পানি উত্তোলন করে এখন চাহিদা মেটাচ্ছে।

 

সম্প্রতি পৌর এলাকা ঘুরে কয়েকটি ইন্দারার সন্ধান পাওয়া গেছে, কুড়িগ্রাম পৌরসভার হোসেন খাঁ পাড়া ফকরিয়া মসজিদ সংলগ্ন ১টি, মাঝিপাড়ায় ২টি, খানপাড়ায় ১টি, হরিকেশ কানি পাড়ায় ১টি, হরিকেশ মধ্যপাড়ায় ২টি, সবুজপাড়ায় ১টি, জাহাজ ঘর মোড় এলাকায় ১টি ও পুরাতন রেল স্টেশনের পূর্বদিকে ১টি চোখে পড়ে। এর মধ্যে শুধু সবুজ পাড়া এলাকার কুয়াটি ভালো আছে এবং এখনো পানি খাওয়াসহ বাড়ির সব কাজে ব্যবহার হচ্ছে।

 

গুয়াতিপাড়ার প্রবীণ মো. আব্দুস সামাদ জানান, হোসেন খাঁ পাড়ার এই ইন্দ্রাটির বয়স প্রায় ১০০ বছর। ইন্দ্রাটি ১৯২৪ সালে নির্মাণ করা হয়েছে। সংস্কারের অভাবে এটি নষ্ট হয়েছে। আগে এই ইন্দ্রার পানি গ্রামের সবাই ব্যবহার করত। এ রকম অনেক ইন্দ্রা কুড়িগ্রামে অনেক জায়গায় নষ্ট হয়ে মাটির সাথে বিলীন হয়েছে।

 

পুরাতন পোস্ট অফিস পাড়ার সুলতান আহমেদ বলেন, জাহাজঘর মোড়ের ইন্দ্রাটি অনেক পুরাতন। বর্তমানে কুয়াটি উপরিভাগ ভালো আছে। ভেতরটা একটু সংস্কার করলেই পুনরায় ব্যবহার করা যাবে। তা ছাড়া এটা বাজার এলাকা, এখানে কোনো পুকুর নাই।

 

এই কুয়ায় পানি থাকলে মানুষের ব্যবহারের পাশাপাশি যেকোনো দুর্ঘটনাজনিত আগুন নেভানোর কাজে ফায়ার সার্ভিস ব্যবহার করতে পারবে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version