কুমিল্লা দক্ষিণাঞ্চলের লাকসাম, মনোহরগঞ্জ, লালমাই, বরুড়া, সদর দক্ষিণ ও নাঙ্গলকোট উপজেলা শহর ও গ্রামের কাঁচা-পাকা সড়ক এবং অলি-গলি দিয়ে প্রতিদিন সাঁই সাঁই করে ছুটে চলেছে শত শত মোটরসাইকেল। যার বেশিরভাগই অবৈধ এবং এদের কোনো কাগজপত্র নেই। সরকারি বিধিবিধান মানতে চায় না কেউই।
অথচ এসব লাইসেন্সবিহীন ও চোরাই মোটরসাইকেলে সয়লাব হয়ে গেছে সমগ্র এলাকা। এ অঞ্চলের অলিগলিতে নিবন্ধন ছাড়াই ৯০ ভাগ মোটরসাইকেল চলছে। এতে জন যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এ অঞ্চলের কয়েক লাখ মানুষকে। কিছুদিন পূর্বে স্ব স্ব উপজেলার থানা পুলিশ অবৈধ মোটরসাইকেল উদ্ধারে বিশেষ অভিযান চালিয়ে বেশকিছু মোটরসাইকেল আটক করলেও তাদের দমাতে পারেনি।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, জেলার দক্ষিণাঞ্চলের উপজেলাগুলোর অলিগলি এবং সড়ক পথে ব্যাপক হারে চোরাই মোটরসাইকেলের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। এ অঞ্চলের সড়ক পথে অন-টেস্ট লেখা বিপুলসংখ্যক মোটরসাইকেলের ব্যবহার মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় কোনটি বৈধ কিংবা কোনটি চোরাই বোঝা মুশকিল।
আবার প্রায় সড়কের পাশে হোটেল-রেস্তোরাঁ, মার্কেট, ব্যাংক-বীমা কিংবা সরকারি-বেসরকারি অফিসের সামনে এমনকি অলিগলিতে মোটরসাইকেল পার্ক করে রাখায় যানজটে জনদুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন পথচারীরা।
সূত্রগুলো আরো জানায়, জেলা দক্ষিণাঞ্চলের লাকসাম, নাঙ্গলকোট ও বরুড়া পৌর শহরসহ উপজেলাগুলোর বিভিন্ন সড়কে শত শত ভারতীয় চোরাই মোটরসাইকেল রয়েছে। এগুলোর কোনো সরকারি নিবন্ধন নেই। এসব গাড়ি বেপরোয়া চলাচলসহ জনদুর্ভোগের সৃষ্টি করছে।
আবার কেউ কেউ মোটরসাইকেল ব্যবহারে মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধী কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত। বর্তমানে মোটরসাইকেল ব্যবসা জনপ্রিয় হয়ে উঠায় দেশি ও বিদেশি কোম্পানির অনেক শোরুম গড়ে উঠেছে এ অঞ্চলের শহর এলাকায়।
এসব শোরুম থেকে নগদ কিংবা সহজ কিস্তিতে মোটরসাইকেল কিনছেন ক্রেতারা। শো-রুমের গাড়ির চেয়ে চোরাই বা ছিনতাইকৃত মোটরসাইকেল প্রায় অর্ধেক দামে পাওয়া যায় জেলার সীমান্তবর্তী এ অঞ্চলের বিভিন্ন হাটে।
হরেক রকম ব্র্যান্ডের নামিদামি মোটরসাইকেল এখন বিলাসিতার অন্যতম উপকরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং এ অঞ্চলের যুবক কিংবা শিক্ষার্থীদের মাঝে এ মোটরসাইকেল যেন এক নিত্যপণ্যের মতো প্রয়োজনীয় মাধ্যম।
স্থানীয় একাধিক পরিবহন নেতা জানান, জেলা দক্ষিণাঞ্চলের সবকটি উপজেলায় এসব মোটরসাইকেলের অধিকাংশেরই সরকারি নিবন্ধন আর বেশিরভাগ চালকেরই নেই প্রশিক্ষণ তথা ড্রাইভিং লাইসেন্স। তা ছাড়া, যত্রতত্র পার্কিং করে রাস্তায় যানজট সৃষ্টির নেপথ্যে অন্যতম কারণ এসব নম্বরবিহীন মোটরসাইকেল।
এ ধরনের মোটরসাইকেলের অধিকাংশই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে চোরাইকৃত কিংবা ভারত থেকে চোরাই পথে আনা। এসব মোটরসাইকেল চালকদের অধিকাংশই সমাজের বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ডের সাথে জড়িত।
দেখা গেছে, অনেক মোটরসাইকেলের নম্বর প্লেট নেই, আবার অনেকের নম্বর প্লেটে ‘অন-টেস্ট’, ‘আবেদিত’, ‘প্রেস’, ‘সংবাদপত্র’, ‘সাংবাদিক’, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কিংবা কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের নাম লিখে বছরের পর বছর সড়ক-মহাসড়কে চলাচল করলেও স্থানীয় প্রশাসন যেন রহস্যজনক কারণে অনেকটাই নীরব ভূমিকায়।
এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট স্থানীয় প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তাকে তাদের মুঠোফোনে বারবার চেষ্টা করেও কোনো জবাব নেয়া সম্ভব হয়নি।
তবে উপজেলাগুলোর স্থানীয় পুলিশের একটি সূত্র জানায়, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে অবৈধ মোটরসাইকেল উদ্ধার অভিযান শুরু হবে।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য