-->

জাতীয় রাজনীতিতে দৌরাত্ম্য হারাচ্ছে সিলেট

সিলেট ব্যুরো
জাতীয় রাজনীতিতে দৌরাত্ম্য হারাচ্ছে সিলেট
জাতীয় রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারকারী সিলেটের প্রয়াত রাজনীতিবিদগণ

বিগত দিনে বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতিতে সিলেটের রাজনীতিবিদদের পদার্পণ ছিল চোখে পড়ার মতো। নিজেদের রাজনৈতিক মেধা ও দক্ষতায় জাতীয় রাজনীতিতে দাপটের সঙ্গে বিচরণ ছিল সিলেটের বর্ষীয়ান নেতাদের।

 

এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদ, সাবেক স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী, সাবেক সংসদ সদস্য দেওয়ান ফরিদ গাজী, সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান, সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, সাবেক রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেন। এই বর্ষীয়ান নেতাদের মৃত্যুর পর সেই জায়গা পুরনে অনেকটাই ব্যর্থ সিলেটের আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারা।

 

এই বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদদের জীবনী বিশ্লেষণ করলে তাদের মেধা ও দক্ষতা সম্পর্কে সহজেই ধারণা পাওয়া যায় এবং তাদের যোগ্যতা ও মেধার বিচারে এই শূন্য যায়গা পুরন করা হয়তো কখনো সম্ভব নয়।

 

১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে আব্দুস সামাদ আজাদ বাংলাদেশের প্রথম পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। তিনি ১৯৭১ সালের হাঙ্গেরি বিশ্ব শান্তি সম্মেলনে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন এবং বিশ্ব বর্ণ বৈষম্য কমিটির চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন।

 

১৯৯১ সালের নির্বাচনে সুনামগঞ্জ-৩ আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় উপনেতার দায়িত্বপালন করেন।

 

১৯৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনে একই আসন থেকে সাংসদ নির্বাচিত হয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পুনরায় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ২০০১ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একই দলের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

 

চারদলীয় জোট সরকারের আমলে তিনি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্বপালন করেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্বে ছিলেন।

 

দেওয়ান ফরিদ গাজী স্বাধীনতা পরবর্তী সিলেট বিভাগে প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট সদর আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভায় প্রথমে স্থানীয় সরকার ও সমবায় প্রতিমন্ত্রীর এবং পরে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। বঙ্গবন্ধুর একজন ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে ফরিদ গাজীর অবদান ছিল অপরিসীম।

 

ফরিদ গাজী দীর্ঘকাল আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে হবিগঞ্জ-১ আসন থেকে পরপর সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। শেষ দিকে তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য এবং ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে নির্বাচিত দশম জাতীয় সংসদে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ছিলেন।

 

হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী ১৯৭১-৭২ সালে দিল্লীতে বাংলাদেশ মিশনের প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৭২ সালে জার্মানিতে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। এছাড়া সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া এবং ভ্যাটিকানেও একই পদে অধিষ্টিত ছিলেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণ করলে জাতীয় সংসদের স্পিকার মনোনীত হন হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী। ২০০১ সালের ১০ জুলাই স্পিকার থাকাকালীন মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

 

এম সাইফুর রহমান ১৯৭৬ সালে সামরিক আইন প্রশাসক মেজর জিয়াউর রহমানের সরকারে বাণিজ্য উপদেষ্টা হিসেবে ভিন্ন এক জীবন শুরু করেন। এরপর প্রথমে জিয়াউর রহমানের জাগো দলে পরে জিয়াউর রহমান ১৯৭৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিএনপি গঠন করলে এম সাইফুর রহমান সে দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পান। বিশেষ করে সিলেট বিভাগে রিয়াল এডমিরাল মাহবুব আলী খান আর সাইফুর রহমান বিএনপি সুসংগঠিত করেন।

 

১৯৭৯-৮১ ও ১৯৯১-৯৬ সালে বিএনপি সরকারের অর্থমন্ত্রী এবং ২০০১-০৬ সালে অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন প্রয়াত এ নেতা। জাতীয় সংসদে তিনি মোট ১২ বার জাতীয় বাজেট উপস্থাপন করেন।

 

আবুল মাল আব্দুল মুহিত ১৯৭২ সালে পরিকল্পনা কমিশনের সচিব হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৯৭৭ সালে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বহিঃসম্পদ বিভাগের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মুহিত। ১৯৮১ সালে আবুল মাল আবদুল মুহিত সরকারি চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নেন। ১৯৮২-৮৩ সালে এরশাদ সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন মুহিত।

 

আবুল মাল আবদুল মুহিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের মনোনয়নে সিলেট-১ আসনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য হিসেবে প্রার্থী হন। সেই নির্বাচনে তিনি ‘সংসদ সদস্য’ হিসেবে নির্বাচিত হন।

 

২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। ২০০৯ সাল থেকে টানা ১০ বছর তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে তিনি এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।

 

২০২২ সালের ৩০ এপ্রিল তিনি মৃত্যুবরন করেন। সুরঞ্জিত সেন দ্বিতীয়, তৃতীয়, পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম, নবম ও দশম জাতীয় সংসদসহ মোট সাতবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এর আগে সত্তরের নির্বাচনেও তিনি প্রদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।

 

তিনি ২০১২ সালে রেলমন্ত্রী হিসেবে পদত্যাগ করে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি তিনি পরলোকগমন করেন।

 

এ বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদরা সিলেটের সাধারণ মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় অমর হয়ে থাকবেন।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version