-->
শিরোনাম

মেগা প্রকল্পে বদলে যাচ্ছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার

এইচএম ফরিদুল আলম শাহীন, কক্সবাজার
মেগা প্রকল্পে বদলে যাচ্ছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার
কর্ণফুলী টানেলের অভ্যন্তরভাগ

মেগা প্রকল্পে বদলে যাচ্ছে চট্টগ্রামের দক্ষিণাঞ্চল ও কক্সবাজার।

 

সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের সূত্রের বরাত দিয়ে এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কক্সবাজার হতে যাচ্ছে পর্যটন রাজধানী।

 

এ বছরের সেপ্টেম্বরে চালু হবে বঙ্গবন্ধু কর্ণফুলী টানেল আর দোহাজারী কক্সবাজার রেললাইন। এ দুই প্রকল্পে দক্ষিণ চট্টগ্রাম আর কক্সবাজারের চিত্র বদলে যাবে।

 

সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি গণমাধ্যমকে জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ দুই প্রকল্প উদ্বোধন করতে যাচ্ছেন সেপ্টেম্বরে। বঙ্গবন্ধু টানেল চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজারের মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে দিয়েছে ৪০ কিলোমিটার। ফলে ২ থেকে আড়াই ঘণ্টায় যাত্রী ও মালামাল পৌঁছাবে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারে।

 

কর্ণফুলীর তলদেশে ১৮ থেকে ৩১ মিটার গভীরে টানেলটি নির্মাণ করা হচ্ছে। মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩.৩২ কিলোমিটার। ৪ লেন বিশিষ্ট দুটি টিউবের দৈর্ঘ্য ২.৪৫ কিলোমিটার। এ ছাড়া মূল টানেলের পশ্চিম ও পূর্ব প্রান্তে ৫.৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক এবং আনোয়ারা প্রান্তে ৭২৭ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি ফ্লাইওভার থাকবে। এ টানেলের ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৩৭৪.৪২ কোটি টাকা।

 

এর মধ্যে চীনের এক্সিম ব্যাংক দিচ্ছে ২ শতাংশ সুদে ৫ হাজার ৯১০.১৯ কোটি টাকা। বাকি টাকা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। এ পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৯৭ শতাংশ। চলতি বছর সেপ্টেম্বরে স্বপ্নের ট্রেন আসছে কক্সবাজারে। এতে খুশিতে আত্মহারা এ অঞ্চলের মানুষ।

 

জানা গেছে, কক্সবাজার-চট্টগ্রামে নতুন নগরায়ন হচ্ছে ১০/১২টি। ফলে যান্ত্রিক জীবনের কোলাহলে বাড়বে ব্যস্ততা। এমনই অভিমত একাধিক নগর বিশেষজ্ঞের। ইতোমধ্যে রেল প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৮৪ শতাংশ।

 

ট্রেন থামবে দেশের প্রথম বিশ্ব মানের ঝিনুক আকৃতির আইকনিক কক্সবাজার রেলস্টেশনে। এর মধ্যে শুরু হয়েছে রেল চলাচলের মহড়া। রেল চলাচলের মহড়া ও আইকনিক রেলস্টেশনের সৌন্দর্যবর্ধন কার্যক্রম দেখতে রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম মঙ্গলবার চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার রেল প্রকল্প পরিদর্শন করেন।

 

পরিদর্শন শেষে কক্সবাজার আইকনিক রেল স্টেশন ভবনে গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, সারা দেশের মানুষ ভীষণ আগ্রহের সঙ্গে অপেক্ষা করছেন, কখন রেলে করে কক্সবাজার আসা যায়।

 

আগামী আগস্টের মধ্যে কাজ শেষ করে সেপ্টেম্বরে উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুত করা। এ সময় প্রকল্প পরিচালক মো. মফিজুর রহমান বলেন, এ প্রকল্পে এখন কোনো চ্যালেঞ্জ নেই। এখন শুধু ফিটিং এর কাজ চলছে। এটি ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে। প্রতিদিন শত শত নারী পুরুষ ও শিশু জড়ো হচ্ছে রেললাইন এবং নির্মাণাধীন রেল স্টেশনে। কবে আসছে রেল? সেই অপেক্ষায় কক্সবাজারবাসী।

 

এ রেল স্টেশনের নির্মাণ আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বর্তমানে সাজসজ্জার কাজ চলছে।

 

এ অত্যাধুনিক আইকনিক রেলস্টেশন দেখতে গিয়ে জালাল আহমদ বলেন,কক্সবাজারের চাঁদের পাড়ায় নির্মিত এ রেলস্টেশন স্থানীয়রা ছাড়া পর্যটকদের ও আকর্ষণ করবে। উন্নত বিশ্বের ন্যায় যাবতীয় সুবিধা পাওয়া যাবে এ রেলস্টেশনে।

 

স্থপতি মো. ফয়েজ উল্লাহ বলেন, এ স্টেশনের বিশেষত্ব হচ্ছে দিনের বেলায় পর্যাপ্ত আলো থাকবে তাই বৈদ্যুতিক বাতি জালাতে হবে না। ওপরের ছাদ খোলা তাই সূর্যের আলোকরশ্মি ঢুকে যাবে অনায়াসে। শামুক-ঝিনুকের আদলে করা হয়েছে এটির নির্মাণশৈলী।

 

বলা যেতে পারে এটি পুরোপুরি গ্রিনবিল্ডিং। ২০১৮ সালে এ মেগা প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ২৯ একর জমির ওপর ২১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে ১ লাখ ৮৭ হাজার ০৭ বর্গফুটের আইকনিক নান্দনিক রেলস্টেশন ভবন। রেলস্টেশন ভবনের পার্শ্বের নির্মাণ করা হয়েছে ২০টি পাঁচ তলা ভবন।

 

যৌথ অর্থায়নে নির্মাণাধীন বহুল প্রত্যাশিত দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ স্থাপনের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। ১২ মে পর্যন্ত সার্বিক কাজের অগ্রগতি প্রায় ৮৪ শতাংশ ছাড়িয়েছে। চট্টগ্রামে এক মতবিনিময়কালে আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ট্রেন চলাচলে প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবির।

 

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে বুয়েটের প্রকৌশলীরা সেতু উন্নীতকরণের সমীক্ষা রিপোর্ট দেয়ার পরে সংস্কার কাজের জন্য দরপত্র আহব্বান করা হয়েছে, যা এ মাসের ১৮ তারিখ খুলছে (দরপত্র)। পুরান রেল সেতু সম্পূর্ণ সংস্কার করতে আরো বেশি সময় লাগবে। তবে আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে (রেল ট্র্যাকটি) নতুন ট্রেন চলাচলের প্রত্যাশা করছেন তিনি।

 

এদিকে নতুন স্থাপিত ফেরি সার্ভিস চালুর বিষয়ে চট্টগ্রাম নওজের নির্বাহী প্রকৌশলী পিংন্টু চাকমা বলেন, প্রথমে একবার দরপত্র আহব্বান ও খোলা হলেও প্রত্যাশিত না হওয়ার আবার দরপত্র আহব্বান করা হয়েছে। শিগগিরই ফেরি সার্ভিস চালু করা হবে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version