ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে দূরপাল্লার যানবাহনের সংখ্যা কমেছে। এ ছাড়া সড়ক সম্প্রসারণ করে লেন সংখ্যা বাড়ানো, সড়ক বিভাজক দিয়ে স্থানীয় গণপরিবহন আলাদা লেন (সার্ভিস লেন) করে দেয়া হয়েছে। পৃথক লেন করা হয়েছে দূরপাল্লার বাসের জন্যও। বিভিন্ন স্থানে পদচারী সেতু (ফুটওভারব্রিজ) নির্মাণ করা হয়েছে। এসবে মহাসড়কটিতে যানজটের ভোগান্তি শেষ হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হলেও সেটি হয়নি।
পরিবহন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, পথচারী ও যাত্রীরা বলছেন, ওই মহাসড়কে ভোগান্তির কারণগুলো হলো মহাসড়কের সার্ভিস লেনের কিছু অংশ দখল করে ট্রাক ও প্রাইভেট কার স্ট্যান্ড বসানো, ভাসমান দোকান, মহাসড়কঘেঁষা বাজার, স্থানীয় গণপরিবহনের চালকদের সার্ভিস লেন ব্যবহারে অনীহা, পরিবহনগুলোর যত্রতত্র পার্কিং এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারির অভাব।
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের হেমায়েতপুর, সাভার, নবীনগর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সাভার বাসস্ট্যান্ডে সার্ভিস লেনের কিছু অংশ দখল করে ৩০-৪০টি প্রাইভেটকার ও লেগুনা রাখা হয়েছে। ফুটপাতে দোকান রাস্তার একটা অংশই হয়ে গেছে। এতে সার্ভিস লেনে তৈরি হয়েছে যানজট। একই চিত্র দেখা যায় প্রতিটি বাসস্ট্যান্ডের সার্ভিস লেনে।
সমস্যাগুলো সমাধানে কয়েকবার সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি প্রদানসহ আইনশৃঙ্খলা কর্মকর্তাদের মৌখিক অনুরোধ করা হলেও তাদের তেমন আন্তরিকতা দেখা যায়নি।
সার্ভিস লেনে ভাসমান দোকান
সাভার বাসস্ট্যান্ডে মহাসড়কের উভয় পাশে সার্ভিস লেনের কিছু অংশ দখল করে প্রতিদিন বসে খাবার, পোশাক ও সবজির ভাসমান দোকান। নবীনগর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বিকেলের পর থেকে আরিচাগামী সার্ভিস লেনের প্রায় পুরোটাই ভাসমান দোকানদারদের দখলে চলে যায়। এতে এই লেনে তৈরি হয় যানজট। ভোগান্তিতে পড়তে হয় যাত্রী ও পথচারীদের।
এ ছাড়া ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ঘেঁষে কিছু এলাকায় বাজার, মাছ ও সবজির আড়ত গড়ে উঠেছে। বাজার ও আড়তে ভ্যান-পিকআপে করে পণ্য ওঠানো-নামানো করানো হয় মহাসড়কের কিছু অংশ দখল করেই। সাভার, গেন্ডা ও হেমায়েতপুর এলাকায় মহাসড়কঘেঁষা বাজারগুলোর সামনে এমন চিত্র দেখা গেছে। দীর্ঘক্ষণ পণ্য উঠানো নামানোর জন্য যানজট দেখা দেয়।
মানিকগঞ্জ থেকে ঢাকায় যাতায়াতকারী শহিদুল ইসলাম বলেন, হেমায়েতপুর থেকে নবীনগর পর্যন্ত ওই লেনে (সার্ভিস লেনে) বাস একবার ঢুকলেই বিপদ। বাসস্ট্যান্ড পার হতে কমপক্ষে ৪০ মিনিট থেকে ঘণ্টাখানেক দেরি হয়।
সার্ভিস লেন ব্যবহারে অনীহা
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড ঘুরে দেখা যায়, এই সড়কে চলাচলকারী বাসগুলোর অধিকাংশই নিরবচ্ছিন্নভাবে চলাচলের লেনেই যাত্রী ওঠানো-নামানো করাচ্ছেন। যাত্রীদের অনেককে সার্ভিস লেন পার হয়ে সড়ক বিভাজক টপকিয়ে নিরবচ্ছিন্ন চলাচলের লেনে এসে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যায়। চালকেরা নিরবচ্ছিন্ন চলাচলের লেনে যেসব যাত্রীকে নামিয়ে দিচ্ছেন, তারাও সড়ক পার হচ্ছেন সড়ক বিভাজক টপকিয়ে।
গাবতলী থেকে আরিচাগামী সেলফি পরিবহনের চালক আবদুস সালাম বলেন, ‘যাত্রীরা আমাদের গাড়িতে উঠে দ্রুত যাওয়ার জন্য। ওই দিক দিয়ে (সার্ভিস লেন) গেলে যানজটে আমাদের দেরি হয়ে যায়। তাই ওই দিক দিয়ে যাই না।’
নজরদারির অভাব
ভুক্তভোগী ও পরিবহনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা অভিযোগ করেন, সড়কের ওপরে পণ্য ওঠানো-নামানো এবং সড়কে ভাসমান দোকানপাট গড়ে উঠলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নজরদারির অভাব রয়েছে। মাঝেমধ্যে তারা কিছু পদক্ষেপ নিলেও সেগুলো কার্যকর নয়। যত্রতত্র এলোমেলোভাবে মহাসড়কের ওপরে দাঁড়িয়ে থাকা বাসগুলোর বিষয়েও উদাসীনতা দেখানো হয়।
নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) ধামরাই উপজেলা শাখার সভাপতি নাহিদ মিয়া বলেন, সড়কে বিশৃঙ্খলা রোধে সড়কে অবৈধ পার্কিং, হাটবাজারের পণ্য উঠানো-নামানোসহ ভ্রাম্যমাণ দোকানপাট থাকায় সড়কে জনসাধারণের চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। সৃষ্টি হচ্ছে যানজটের।
সমস্যাগুলো সমাধানে কয়েকবার সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি প্রদানসহ আইনশৃঙ্খলা কর্মকর্তাদের মৌখিক অনুরোধ করা হলেও তাদের তেমন আন্তরিকতা দেখা যায়নি। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের দাবি, পর্যাপ্ত জনবল না থাকা সত্ত্বেও সড়কের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে প্রয়োজন অনুসারে পদক্ষেপ নিচ্ছেন তারা।
পুলিশের ঢাকা জেলা দক্ষিণ বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস ও ট্রাফিক) আবদুল্লাহ হিল কাফী বলেন, সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষায় আমরা নিয়মিতই অভিযান চালাচ্ছি। সড়কে আড়াআড়ি করে অন্যান্য বাসের চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করাসহ নানা অপরাধে জরিমানা করা হচ্ছে। উচ্ছেদ করা হচ্ছে অবৈধ ভাসমান দোকান।
সড়কে বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে এমন বিষয়গুলোর ব্যাপারে দ্রুতই আমরা আবার অভিযান পরিচালনা করব।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য