মানিকগঞ্জে ট্রাফিক পুলিশের মাসোহারায় চলছে অবৈধ যানবাহন। মাসোহারায় অবৈধ যান হয়ে যাচ্ছে বৈধ। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে তিন চাকার যান চলাচল নিষিদ্ধ হলেও নিত্যদিনের চিত্র দেখে বোঝার উপায় নেই-এটি কোন ধরনের গাড়ির জন্য তৈরি। নছিমন-করিমন, সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত বিভিন্ন অটোরিকশার চলাচলে বিঘ্ন ঘটিয়ে বিস্তীর্ণ জায়গা নিয়ে করা হয়েছে স্টেশন।
মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডের প্রবেশমুখ আটকে সারি সারি করে রাখা হয় তিন চাকার যান। ইচ্ছামতো এগুলোতে চলছে যাত্রী ওঠানামা। এসব দৃষ্টিগোচর হয় না ট্রাফিক পুলিশের।
কারণ, অটোরিকশা, লেগুনা, আর ব্যাটারিচালিত যান নিয়ে চলছে রমরমা বাণিজ্য। প্রশাসনকে ম্যানেজ করার নামে কমিশন নেয় মালিক-শ্রমিকদের বিভিন্ন সমিতি ও সংগঠন। মাসোহারা পায় ট্রাফিক পুলিশ।
২০১৫ সালে দেশের ২২ মহাসড়কে সব ধরনের অটোরিকশা চলাচল নিষিদ্ধ করে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। অধিকাংশ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী করে উচ্চ আদালতও এসব যানবাহন বন্ধের জন্য দেশের বিভিন্ন জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও হাইওয়ে পুলিশকে নির্দেশ দেন। এরপরও পাল্টায়নি সড়কের চিত্র। এতে ভারী যানবাহন চলছে ধীরগতিতে, সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট।
শুধু তাই নয়, মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে পাটুরিয়া পর্যন্ত অন্তত ১০ স্থানে মহাসড়কের ওপর অবৈধভাবে গড়ে তোলা হয়েছে অটোরিকশা, টেম্পো ও ট্রাক-পিকআপ স্ট্যান্ড। মানিকগঞ্জ প্রবেশদ্বার মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ বক্সের সামনেই আছে লেগুনা সিএনজিচালিত অটোরিকশার অবৈধ স্টেশন।
এ ছাড়া ওই স্থানে বাস, ট্রাক, লেগুনা ও সিএনজি থামিয়ে চালকরা যাত্রী ওঠানামা করে। তবে দেখেও দেখে না কেউ।
সরেজমিনে মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে ঘুরে দেখা যায়, জয়রা রোড এবং পৌর টার্মিনালের সামনে অটোরিকশা আর লেগুনার অবাধ চলাফেরা। সৃষ্টি হয় যানজট। ভোগান্তিতে পড়ছে যাত্রীরা। অপরদিকে উপজেলার সামনে রয়েছে অবৈধ লেগুনার স্ট্যান্ড। প্রতিমুহূর্ত আতঙ্ক পার হচ্ছে ভারী যানবাহন এবং পথচারীরা।
অপরদিকে শহরমুখী প্রবেশদ্বারেই রয়েছে অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশার আনাগোনা। মাঝে মধ্যে এখান থেকে দুই একটা গাড়ি ড্রাম্পিং করে ট্রাফিক পুলিশ। আবার রেকার বিল নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয় এসব রিকশা। মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডের উপজেলার সামনে নিয়মিত চলে ট্রাফিক পুলিশের চেকপোস্ট। চেকপোস্টের সামনে দিয়ে হরদম চলছে অবৈধ যানবাহন।
এসব অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে নিচ্ছে না কোনো ব্যবস্থা। চেক করা হয় যেসব যানবাহন সেগুলো মাসোহারার বাইরে। মাসোহারার গাড়ির নেই কোনো চেক। ঝামেলায় পড়ে অপরিচিত গাড়ির ড্রাইভারা। স্টিকার সংযুক্ত মাসোহারার অবৈধ যান দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। ফলে বাড়ছে দুর্ঘটনা।
জানা গেছে, মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে চলাচলরত লেগুনা থেকে প্রতি মাসে ৩০ হাজার টাকা পায় ট্রাফিক পুলিশ। ৩ হাজার টাকায় পৌরসভার নম্বরবিহীন হ্যালোবাইক চলছে প্রতিনিয়ত। ছাড় পাচ্ছে না ব্যাটারিচালিত রিকশা। প্রতি মাসে হাজার টাকায় বৈধ হয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সড়ক মহাসড়কে। মাসোহার নেয়া হচ্ছে বিভিন্ন কুরিয়ার সার্ভিস গাড়ি থেকে। মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে বিভিন্ন উপজেলায় চলাচলরত সিএনজি থেকে তোলা হচ্ছে মাসোহারা। অবৈধ মাসোহারায় জিম্মি হয়ে পড়েছেন পরিবহন মালিকরা।
সোহাগ পরিবহনের চালক মো. জসিম বলেন, অবৈধ এসব যানের কারণে আমাদের ধীরগতিতে চলতে হয়। পাটুরিয়া ঘাট পার হওয়ার পর থেকেই ভয়ে ভয়ে গাড়ি টানতে হয়। এসব গাড়ি উল্টো পথে চলার কারণে দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অটোরিকশার ড্রাইভার বলেন, পেটের দায়ে গাড়ি চালাই। ট্রাফিক পুলিশের অত্যাচারে গাড়িই চালাতে পারি না। তাই বাধ্য হয়ে মাসে ১ হাজার টাকা দিয়ে গাড়ি চালাই। শুধু আমি না আমার মতো অনেক গাড়ির মালিক মাসে টাকা দিয়ে গাড়ি চালায়।
এ ব্যাপারে মানিকগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তা মেরাজ উদ্দিন খানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি মিটিংয়ে আছেন বলে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মুহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, পুলিশ কারো কাছ থেকে কোনো মাসোহারা নেয় না। যদি কোনো কর্মকর্তা অবৈধ যানবাহন থেকে মাসোহারা নিয়ে থাকে তাহলে তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য