-->

দূষণের কবলে গাজীখালী নদী, শঙ্কায় স্থানীয়রা

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি
দূষণের কবলে গাজীখালী নদী, শঙ্কায় স্থানীয়রা
মানিকগঞ্জের গাজীখালী নদী দূষণের কবলে পড়েছে

দূষণের কবলে পড়েছে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত গাজীখালী নদী। উপজেলার কৈট্টা এলাকায় দুটি শিল্পকারখানার বর্জ্য নদীতে ফেলার কারণে নদীর পানি দূষিত হচ্ছে।

 

কারখানাগুলোতে বর্জ্য শোধনাগার বা এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) ব্যবস্থা থাকলেও বর্জ্য নদীতে ফেলায় পরিবেশ দূষিত হচ্ছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।

 

সম্প্রতি জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় রাজিং নিট টেক্সটাইল লিমিটেড ও তারাসীমা অ্যাপারলেস লিমিটেড নামের দুটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে গাজীখালী নদী দূষণের অভিযোগ ওঠে। পরে জেলা পরিবেশ অধিদপ্তর সম্প্রতি গাজীখালী নদীতে ফেলা ওই শিল্পপ্রতিষ্ঠান দুটির তরল বর্জ্যরে নমুনা সংগ্রহ করে গবেষণাগারে পাঠায়।

 

নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদনে দূষণের প্রমাণ পাওয়ায় জেলা পরিবেশ অধিদপ্তর তারাসীমা অ্যাপারলেস লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানটিকে নোটিশ প্রদান করে। পরে পরিবেশ অধিদপ্তরের ওই নোটিশের জবাব দাখিল করে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ।

 

তবে পরিবেশ অধিদপ্তর মানিকগঞ্জ কার্যালয় থেকে ওই নমুনা পরীক্ষার ফল, নোটিশের কপি এবং শিল্পপ্রতিষ্ঠান কর্তৃক দাখিলকৃত জবাবের কপি সরবরাহ করার অনুরোধ করলেও জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম অপরাগতা প্রকাশ করেন।

 

জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে গাজীখালী নদী দূষণরোধে প্রতিবাদ করে আসছে স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে প্রতিবাদ করেও নদী দূষণরোধের কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কেন নিচ্ছে না তা স্থানীয়দের কাছে অজানা।

 

তবে একাধিক শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ফেলা বর্জ্যরে কারণে নদীর পানি দূষিত হওয়ায় এক সময়ের খরস্রোতা নদীটি দূষণের কবলে পড়ে এখন মৃতপ্রায়। বর্তমানে ব্যবহারের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে এই নদীর বিষাক্ত পানি। দূষিত পানি ও আবর্জনার দুর্গন্ধে টিকতে পারছেন না নদীপাড়ের মানুষ, আক্রান্ত হচ্ছেন নানা রোগব্যাধিতে।

 

জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, নমুনা পরীক্ষার টেস্টিং প্যারামিটারে বিডিএসের মাত্রা ২১০০ এর জায়গায় ২৫০০ বেশি, বিওডি এর মাত্রা ৩০ এর জায়গায় ৩২, নদী থেকে নেয়া নির্গত নমুনার ফলে বিওডি ৬০, সিওডির মাত্রা ২০০ এর জায়গায় ২৮৫ পাওয়া গেছে।

 

ফলে চলতি বছরের ১৬ এপ্রিল তারাসীমা অ্যাপারলেস লিমিটেডকে দূষণের দায়ে নোটিশ করা হয়েছে। পরে গত ৭ মে ওই শিল্পপ্রতিষ্ঠানটি নোটিশের জবাব পরিবেশ অধিদপ্তর বরাবর দাখিল করে।

 

যারা আইন ভঙ্গ করে নদী দূষণ করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া এবং শাস্তি হওয়া উচিত বলে মনে করে পরিবেশবাদী সংগঠনের সংগঠক অ্যাডভোকেট দীপক কুমার ঘোষ।

 

তিনি বলেন, নদীমাতৃক আমাদের সোনার বাংলাদেশ। কাজেই নদীকে আমাদের বাঁচাতে হবে। তারাসীমা অ্যাপারলেস লিমিটেড নামের শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বর্জ্যে দূষণের মাত্রা পাওয়ার পরও শাস্তিমূলক কোনো ব্যবস্থা না নেয়ার বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।

 

রিভারাইন পিপলের পরিচালক অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ জানান, শিল্পপ্রতিষ্ঠানটির পরিবেশবান্ধব কার্যক্রমের জন্য সুনামও আছে। তবে বর্জ্যে দূষণের মাত্রা পাওয়ার পরও কেন প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি তা জানি না। কিন্তু দূষণের দায়ে ব্যবস্থা না নিলে অন্যরাও সুযোগ পাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

 

তারাসীমা অ্যাপারেলস লিমিটেডের ম্যানেজার (লোকাল ইস্যু) মো. মোখসেদুর রহমান বলেন, টেস্টিং প্যারামিটারে নানাবিধ কারণে ফল ভিন্ন হতে পারে। তবে কারখানাটি নদী দূষণের জন্য দায়ী নয় বলে জানান তিনি। কারখানাটি পুরোপুরি পরিবেশবান্ধব বলেও দাবি তার।

 

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ বলেন, নদী দূষণরোধে জেলা প্রশাসন একটি মনিটরিং কমিটি গঠন করেছে। এই কমিটিও নদী দূষণরোধে কাজ করছে। নদীতে ফেলা সব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্যরে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হবে। নদী দূষণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আর তারাসীমা অ্যাপারেলস লিমিটেডকে পরিবেশ অধিদপ্তর নোটিশ করেছে।

 

এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান জেলা প্রশাসক।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version