-->
পুষ্টিহীনতার শিকার

কুমিল্লায় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে হাজারো শিশু-কিশোর

লাকসাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
কুমিল্লায় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে হাজারো শিশু-কিশোর
পুষ্টিহীনতায় ভুগছে এসব শিশু। ছবিটি কুমিল্লার লাকসাম থেকে তোলা

কুমিল্লার দক্ষিণাঞ্চলের লাকসাম, বরুড়া, লালমাই, নাঙ্গলকোট ও মনোহরগঞ্জ উপজেলায় কয়েক হাজার শিশু-কিশোর পুষ্টিহীনতার শিকার হয়ে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছে। এদের মধ্যে বেশিরভাগই স্কুলগামী শিক্ষার্থী। পুষ্টিহীনতায় শহর এলাকার চেয়ে গ্রামাঞ্চলেই এ শিশু-কিশোরদের সংখ্যা বেশি।

 

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, এ অঞ্চলের শিশু-কিশোরদের বেশিরভাগই দরিদ্র পিতা-মাতার সন্তান। অভাব-অনটন তাদের নিত্যসঙ্গী। খাদ্যাভাব, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, শারীরিক সক্রিয়তা, চাল-চলন, পিতা-মাতার আন্তরিকতা ও স্বাস্থ্যবিধি পালনে রয়েছে চরম ঘাটতি।

 

৫ বছর বয়সের মধ্যে ৪৩ শতাংশ শিশুই বয়স অনুযায়ী লম্বা হচ্ছে না, ৪১ শতাংশ শিশুর বয়সের চেয়ে ওজন কম। এমনকি মায়ের পুষ্টিহীনতার কারণে এখনো এ অঞ্চলে ৩৩ শতাংশ শিশুই পুষ্টিহীনতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করছে।

 

শহরের চাইতে গ্রামাঞ্চলের স্কুলপড়–য়া শিশু-কিশোরদের পুষ্টিহীনতাকে কম ওজন, স্বাভাবিক ওজন, অতিরিক্ত ওজন ও স্থুলতা এই ৪ ভাগে দেখা হয়। শহরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৩০ শতাংশ এবং গ্রামের অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ৫৫ শতাংশ শিশুর মধ্যে পুষ্টিহীনতার বিভিন্ন উপাদান পাওয়া গেছে। আবার শিশুর মায়েদের প্রায় ৪৭ শতাংশই নানা কারণে অপুষ্টির শিকার।

 

সূত্রগুলো আরো জানায়, এ অঞ্চলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়–য়া প্রায় ৫৫-৬০ শতাংশ শিশু-কিশোর অপুষ্টির শিকার। শিশুর মায়েদের মধ্যে প্রায় ৪২-৪৫ শতাংশ নানা কারণ অপুষ্টিতে ভুগছেন। মায়েদের অসচেতনতার কারণে বাড়ছে শিশুদের নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, জ্বর, সর্দি, চর্মরোগসহ নানা রোগ-ব্যাধি। মা ও শিশু স্বাস্থ্য উন্নয়ন এবং স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে এ ৫টি উপজেলায় রয়েছে অনেকগুলো সরকারি স্বাস্থ্য দপ্তর ও ক্লিনিক, বেসরকারি এনজিও ক্লিনিক, স্বাস্থ্য ক্লিনিক ও প্রাইভেট হাসপাতাল।

 

শিশু-কিশোরদের স্বাস্থ্য ও পুষ্টি নিয়ে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ, প্রাথমিক শিক্ষা, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ, বেসরকারি পর্যায়ে পুষ্টিসেবা নিয়ে বিভিন্ন এনজিও কাজ করলেও জনবল এবং আর্থিক সংকটসহ সমন্বয়হীনতার অভাবে কার্যক্রম গতি পাচ্ছে না।

 

স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসক জানান, শিশুর জন্মকালে ওজন ২.৫ কেজি বা তার বেশি বৃদ্ধির লক্ষ্যে গর্ভবতী মায়ের পুষ্টিসমৃদ্ধ সুষম খাবার গ্রহণ নিশ্চিতকরণসহ ৬ মাস থেকে ৫ বছর বয়সি শিশুদেরকে বয়স অনুযায়ী ১টি করে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ভিটামিন-এ ক্যাপসুল খাওয়ার পাশাপাশি রক্তস্বল্পতা কমিয়ে আনতে আয়রনসমৃদ্ধ খাবার যেমন : সবুজ শাক-সবজি, হলুদ ফলমূল, মাছ,মাংস, কলিজা, ডিম ইত্যাদি খাওয়াতে হবে।

 

খাদ্য প্রস্তুতকালে খাদ্যের পুষ্টির গুণাগুণ রক্ষার দিকে যতœবান হওয়া ও ২ বছর পর শিশুদেরকে ৬ মাস অন্তর ১টি করে কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়ানো উচিত।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version