-->
শিরোনাম

ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি উপকূলীয় জনপদের মানুষ

খুলনা ব্যুরো
ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি উপকূলীয় জনপদের মানুষ
আইলার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত খুলনার উপকূলীয় জনপদ (ফাইল ছবি)

২০০৯ সালের ২৫ মে দুপুরে দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় জনপদে ভয়াল ঘূর্ণিঝড় ‘আইলা’ আঘাত হানে। খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটের বিস্তীর্ণ এলাকা তছনছ হয়ে যায়। আইলার নাম শুনলে এখনো আঁতকে ওঠে উপকূলীয় জনপদ খুলনার কয়রা ও দাকোপ উপজেলার মানুষ।

 

তাদের স্মৃতিতে ভেসে ওঠে ধ্বংসস্তপ ও সে সময়কার দুর্বিষহ দিনগুলোর কথা। দীর্ঘ ১৪ বছর পার হলেও এখনো মুছেনি ক্ষতচিহ্নের দাগ। জনপদে এখনো চলছে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান ও খাবার পানির তীব্র হাহাকার। এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি উপকূলীয় জনপদের মানুষ।

 

২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় আইলায় কয়রা উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের পবনা নামক স্থানে নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে মঠবাড়ী গ্রামকে দুভাগে বিভক্ত করে একটি শাখা নদী তৈরি হয়েছিল। ওই শাখা নদী শাকবাড়িয়া খালের সঙ্গে মিশে একাকার হয়ে গেছে। শাকবাড়িয়া নদীর পাশ দিয়ে একটি রাস্তা ছিল। সেই রাস্তা ভেঙে একাকার হয়ে যায়।

 

আর চাষযোগ্য প্রায় তিনশ বিঘা জমি নদীতে পরিণত হয়। নদীর গভীরতা প্রায় ৩৫ ফুট। পবনার বাঁধ মেরামত হলেও সেখানে ১৪ বছরেও বাঁধ নির্মাণ সম্ভব না হওয়ায় এখন ১৬০ মিটার দীর্ঘ নদী ভাসমান ড্রামের ভেলা নিয়ে পাড়ি দিয়ে প্রয়োজন মেটাতে হচ্ছে। সেখানকার প্রত্যাপ স্মরণী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৩৫ নম্বর দক্ষিণ মঠবাড়ী প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি কমিউনিটি ক্লিনিক ও সুপেয় পানির পুকুর এলাকা থেকে বিচ্ছিন্ন।

 

বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, সুপেয় পানির প্রয়োজনে কিংবা ক্লিনিকে সেবা গ্রহীতাদের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম নদী পাড়ি দেয়া। ফলে চার হাজার মানুষের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে নদীতে পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি নিয়ে গর্ভবতী, শিশু ও কচি-কোমল শিক্ষার্থীদের প্রতিনিয়ত ভাসমান ড্রামের ভেলা দিয়ে পার হতে হচ্ছে। ভয়ে অনেকেই বিদ্যালয়ে যেতে চায় না। অভিভাবকরাও থাকেন দুশ্চিন্তায়।

 

অন্যদিকে, চাষযোগ্য জমি, বসত বাড়িঘর, সহায়-সম্পদ হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন অনেকেই।

 

এছাড়া কয়রা উপজেলার উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের পাথরখালী খালের ওপর একসময় একটি সেতু ছিল। সেতুটি ঘূর্ণিঝড় আইলার সময় ভেঙে যায়। পার্শ্ববর্তী ৭০ থেকে ৮০ বিঘা জমি খাল হয়ে যায়। খালের উত্তর পাড়ের বতুলবাজার, পাথরখালী, মাঝেরপাড়া গ্রামের মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও দৈনন্দিন হাটবাজারের জন্য দক্ষিণ পাড়ের রত্না ঘেরী গ্রামে ও বড়বাড়ী বাজারে আসতে হয়।

 

এছাড়া দক্ষিণ পাড়ের মানুষ ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষিকাজসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে ওপারে যায়। বছরের পর বছর ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় পারাপার হয়ে সম্প্রতি স্থানীয়রা ভাসমান ড্রাম সেতু তৈরি করেছে। একটি টেকসই ব্রিজের দাবি এলাকাবাসীর। অনুরূপ আইলার ক্ষতচি‎‎হ্ন আজও দৃশ্যমান বিভিন্ন রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ একাধিক বাড়িঘরে।

 

এছাড়া অনেক পরিবার বসতি হারিয়ে আজও বেড়িবাঁধের পাশে বসবাস করছেন।

 

দাকোপে রাস্তাঘাট, বেড়িবাঁধ, নতুন সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ না হওয়ায় এখনো ঝড় এলে মানুষ ভয়ে ভয়ে থাকে অদৃষ্টের ওপর ভর করে। আর্থিক অনটনে চিরতরে এলাকা ছেড়েছে প্রায় দুইশ পরিবার।

 

দাকোপের কামারখোলা ইউনিয়নের ছোট জালিয়াখালি এলাকায় ওয়াপদার রাস্তার ওপরে বসবাসরত অনিল রায়, ইমরুল সানা ও বেলাল গাজী জানান, আমাদের ভিটামাটি আইলায় ঢাকি নদীতে বিলীন হওয়ায় ওয়াপদার রাস্তার পাশে ভিটে বানিয়ে বাস করছিলাম। সে ভিটেও নদীতে ডুবে গেছে। নিজস্ব জায়গাজমি নেই যেখানে ঘর বাঁধব তাই দশ বছর ধরে পরিবার নিয়ে রাস্তার ওপরে বাস করছি।

 

দাকোপের সুতারখালির ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুম আলী ফকির জানান, নলিয়ান এলাকার প্রায় ১৪ কিলোমিটার ওয়াপদার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এলাকায় ঠিকমতো ফসল হয় না। তিনি জানান, তার এলাকার প্রায় ২ হাজার পরিবার এখনো ওয়াপদার রাস্তার ওপর বাস করছে।

 

শুধু আইলা নয় ফণি, বুলবুল, আম্পান ও সর্বশেষ ইয়াসে কয়রা ও দাকোপ উপজেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। জীবিকার তাগিদে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে বহু পরিবার।

 

এছাড়া কয়রার লক্ষাধিক দরিদ্র মানুষ পরিবার রেখে অন্যত্র ইটভাটা কিংবা দিনমজুরের কাজ করে টানাপড়েনে সংসার চালাচ্ছেন।

 

কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মমিনুর রহমান বলেন, এ মাসের সমন্বয় সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে। কীভাবে কী করা যায় সেটা আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করব।

 

কয়রা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, পবনা থেকে শাকবাড়িয়া পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ জমি ভেঙে খাল হয়ে যায়। সেখানে বাঁধ দিতে প্রচুর ব্যয়বহুল হওয়ায় স্থানীয়ভাবে করা সম্ভব হয়নি।

 

বড় ধরনের প্রকল্প অনুমোদনের মাধ্যমে বাঁধের ব্যবস্থা করা গেলে জনগণ উপকৃত হবে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version