-->
শিরোনাম

বেহাত হচ্ছে সামাজিক সুরক্ষা খাতে সরকারি বরাদ্দের ভাতার টাকা

চরফ্যাশন (ভোলা) প্রতিনিধি
বেহাত হচ্ছে সামাজিক সুরক্ষা খাতে সরকারি বরাদ্দের ভাতার টাকা

ভোলার চরফ্যাশনে সামাজিক সুরক্ষা খাতে সরকারি বরাদ্দের ভাতার টাকা বেহাত হচ্ছে। দালালচক্র সুবিধাভোগীদের বয়স্ক ভাতার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ মিলেছে। অসৎ কর্মচারী এবং পোষ্য দালাল শ্রেণির অপতৎপরতায় দরিদ্র মানুষের নামে বরাদ্দ এসব টাকা চলে যাচ্ছে তৃতীয় পক্ষের পকেটে।

 

ফলে প্রকৃত সুবিধাভোগীরা নামে থাকলেও বাস্তবে বেশির ভাগ সুবিধাভোগী ভাতার টাকা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। ভাতার টাকা নিয়ে অন্তহীন অভিযোগের কোনো সুরাহা মিলছে না বলেও অভিযোগ উঠেছে।

 

এসব টাকার গন্তব্য বের করতে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। চরফ্যাসনে বয়স্কভাতার সুবিধাভোগীর সংখ্যা ১৫ হাজার ৬৯২ জন এবং বিধবা ভাতার সুবিধাভোগী ৬ হাজার ৩৩১ জন। এই তথ্য উপজেলা সমাজসেবা থেকে প্রাপ্ত।

 

চর কলমী ইউনিয়নের বৃদ্ধ আবুল কাশেম অভিযোগ করেন, বয়স্কভাতা প্রকল্পের শুরু থেকে তিনি এই ভাতা পেয়ে আসছেন। ব্যাংক থেকে টাকা প্রদানের সময় ঠিকঠাক টাকা পেয়েছেন।

 

২০২২ সালে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে শুরুতেও তারা কিস্তির টাকা পেয়েছেন। তারপর থেকে আর টাকা পাচ্ছেন না। ৭০ বছর বয়সি আবুল কাশেম এই টাকা বেহাতের বিষয়ে অভিযোগ জানাতে একাধিকবার চরফ্যাসন উপজেলা সমাজসেবা অফিসে এসেছেন। সমস্যা সমাধানের কথা বলে ৬ মাস আগে অফিসের দায়িত্বশীল ব্যক্তি তার ২৪০৯ নম্বর বইটি রেখে দিয়েছেন।

 

তারপর থেকে এখন পর্যন্ত টাকার কোনো খবর নেই। এই বৃদ্ধের অভিযোগ, অফিসের কর্মকর্তারা দালাল শ্রেণির মাধ্যমে তার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। টাকাগুলো কোথায় যাচ্ছে- তা তদন্ত করে বের করার দাবি জানিয়েছেন তিনি।

 

নাংলাপাতা গ্রামের বৃদ্ধা সেতারা বেগম অভিযোগ করেন, তিনি ২০১৯ সনে ৩ কিস্তির টাকা ব্যাংক থেকে বুঝে পেয়েছেন। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত তিনি আর কোনো টাকা পাচ্ছেন না।

 

৬৫ বছর বয়সি সেতারা বেগম এ বিষয়ে সুরাহার জন্য ১৪৫৫৯ নম্বর বই নিয়ে উপজেলা সমাজসেবা অফিসে আসেন। সেখান থেকে সময়মতো টাকা পেয়ে যাবেন বলে তাকে আশ্বস্ত করে বিদায় দেয়া হলেও এখন পর্যন্ত তিনি আর টাকা পাননি।

 

একই গ্রামের আবদুল কাদের ২০১৫ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ব্যাংকের মাধ্যমে বয়স্কভাতার টাকা বুঝে পেয়েছেন। কিন্তু ২০২০ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত তিনি আর কোনো টাকা পাচ্ছেন না। কেন টাকা পাচ্ছেন না- তা জানার জন্য উপজেলা সমাজসেবা অফিসে গিয়েছেন। সেখান থেকে তার নামে অনলাইন না হওয়ায় টাকা পাবেন না বলে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।

 

তার নামটি কেন অনলাইন হয়নি, সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন তিনি।

 

এওয়াজপুর ইউনিয়নের পশ্চিম এওয়াজপুর গ্রামের হনুফা বেগম জানান, ২০১৪ সালে তালিকাভুক্ত হয়ে ২০২১ সাল পর্যন্ত ব্যাংকের মাধ্যমে বিধবা ভাতার টাকা নিয়মিত পেয়েছেন।

 

কিন্তু ২০২২ সাল থেকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন শুরুর থেকে তিনি আর টাকা পাচ্ছেন না। এ বিষয়ে হনুফা বেগম তার ৮৩ নম্বর বই নিয়ে উপজেলা সমাজসেবা অফিসে এলে বইতে ভুল ছিল জানিয়ে তা সংশোধন করে দেয়া হয়েছে বলে তাকে আশ্বস্ত করা হয়েছে। কিন্তু ওই সংশোধনের পরও তিনি ভাতার টাকা পাচ্ছেন না।

 

চরফ্যাশনের বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের একাধিক মেম্বার অভিযোগ করেছেন, নিয়ম অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ভাতার সুবিধাভোগীদের তালিকা অনুমোদন করে উপজেলা সমাজসেবায় পাঠানোর কথা। কিন্তু পরিষদ মেম্বারদের এই তালিকায় কোনো ভূমিকা নেই।

 

মেম্বারদের অভিযোগ, অফিস কর্তৃক পালিত একটি দালালচক্র সুবিধাভোগীদের থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে এই তালিকা করে থাকেন। দালালদের মাধ্যমে সেসব টাকার একটা অংশ উপজেলা সমাজসেবা অফিসের দায়িত্বশীলরা পেয়ে থাকেন।

 

পরিষদের চেয়ারম্যানরাও দালালদের পোষেন, সুবিধা নেন। এই দালালচক্রই অফিসের সঙ্গে আঁতাত করে সুবিধাভোগীদের নামের সঙ্গে নিজেদের নামে তোলা মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে সুবিধাভোগীদের নামে বরাদ্দের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।

 

উপজেলা নির্বাহী অফিসার আল নোমান বলেন, টাকা না পেয়ে কিছু ক্ষতিগ্রস্ত সুবিধাভোগী আমার কাছেও এসেছেন। বিষয়গুলো দ্রুত সমাধানের জন্য উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাকে বলা হয়েছে। আরো অভিযোগ থাকলে দ্রুত তার সঙ্গে সেগুলো নিষ্পত্তি করা হবে বলেও তিনি জানান।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version