মাদারীপুরের রাজৈরের কদমবাড়ীতে আজ ২৮ মে থেকে শুরু হচ্ছে এবারের ৩ দিনব্যাপী ‘কুম্ভমেলা’ বা কামনার মেলা। মেলাকে ঘিরে মাঠজুড়ে বসেছে সারি সারি দোকান। এসব দোকানে পাওয়া যাচ্ছে পছন্দের সব জিনিসপত্র।
আয়োজকরা বলছেন, এ মেলায় এক সপ্তাহ আগে থেকেই ভক্তবৃন্দ ও দোকানিরা আসছেন মেলায়। দোকানিরা বসছেন পসরা সাজিয়ে। দিন দিন মেলার জনপ্রিয়তা বাড়ায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লাখ লাখ মানুষের সমাগম ঘটছে। এদিকে মেলায় আগত মানুষের নিরাপত্তায় তিন স্তরবিশিষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
আয়োজক কমিটির সদস্যরা জানান, ২৮ মে ১৩ জ্যৈষ্ঠ শুরু হচ্ছে মাদারীপুরের রাজৈরের কদবাড়ির দিঘীরপাড় মহামানব শ্রীশ্রী গণেশ পাগল সেবাশ্রমে দেশের অন্যতম কুম্ভ মেলা। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শাস্ত্রমতে সত্য যুগে দেবতা ও অসুরদের সমুদ্র মন্থনে যে অমৃত সুধা উঠেছিল তা চারটি কুম্ভ পাত্রে হরিদ্বার, প্রয়াগ, উজ্জয়িনী ও নাসিক এ চারটি স্থানে রাখা হয়েছিল।
এ ঘটনার পর থেকে ভারতীয় মুনি ঋষিরা কুম্ভমেলার আয়োজন করে আসছেন। শত বছর পূর্বে জ্যৈষ্ঠ মাসের ১৩ তারিখে ১৩ জন সাধু ১৩ সের চাল ও ১৩ টাকা নিয়ে রাজৈর উপজেলার কদমবাড়ীর দীঘিরপাড় ভারতের কুম্ভমেলাকে অনুসরণ করে এ মেলার আয়োজন করেন। সেই থেকে মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার কদমবাড়ীর দীঘিরপাড় শ্রীশ্রী গনেশ পাগল সেবাশ্রমে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এক রাতের মেলা হলেও মেলা চলে সপ্তাহব্যাপী।
প্রায় ২৫ থেকে ৩০ লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতি ঘটে এ কুম্ভমেলা বা কামনার মেলায়। রোববার সকাল থেকেই দলে দলে জয় ডংকা ও নানা রকমের বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে জয় হরিবল ও জয়বাবা গনেশ পাগল ধ্বনি করতে করতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সাধু সন্যাসী ও ভক্তবৃন্দরা বাসে, ট্রাকে, ট্রলারে ও পদব্রজে মেলা প্রাঙ্গণে আসতে শুরু করে।
খুলনা, বরিশাল, পিরোজপুর, সাতক্ষীরা, রাজশাহী, বগুড়া, চিটাগং, রংপুর, যশোর, খুলনা, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, নারায়ণগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, গৌরনদীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে দলে দলে মানুষ আসে।এ ছাড়াও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও অন্যান্য রাষ্ট্র থেকেও বহু ভক্তবৃন্দ আসে ঐতিহ্যবাহী এ কামনার মেলায়।
এ মেলায় আসা হাজার হাজার সাধু সন্ন্যাসী ও আর ভক্তরা একতারা আর দোতারায় সুর দিয়ে সারা রাত মেতে থাকেন। আয়োজন করা হয় ছোট-বড় অর্ধশতাধিক প্যান্ডেলে বাউল সংগীতানুষ্ঠানের। গভীর রাত পর্যন্ত চলে অর্ধ লক্ষাধিক ভক্তদের মধ্যে ভক্তসেবা কমিটির প্রসাদ বিতরণ।
এ মেলা উপলক্ষে প্রায় ৯ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বসেছে সারি সারি নানা রকমের দোকান। পুরো মেলাটি সিসি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এদিকে লাখ লাখ ভক্তদের উপস্থিতিতে মোবাইল নেটওয়ার্কে কাজ না করায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থা সুগম করতে একটি ভ্রাম্যমাণ টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে গ্রামীণফোন।
দেশ-বিদেশ থেকে আসা এসব সাধু সন্ন্যাসী ও ভক্তরা ১০৮টি মন্দির দর্শন, প্রার্থনা, আরাধনা, পূজা-অর্চণা, ধর্মীয় সংগীত, নৃত্য-বাদ্য বাজনা পরিবেশনের মধ্য দিয়ে রাত অতিবাহিত করেন। এ মেলা উপলক্ষে ৭ দিন পূর্ব থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসে দোকানিরা। বাঁশ বেতের শিল্প কারুকাজ খচিত গৃহস্থালি মালামাল, মৃৎ শিল্প বা মাটির তৈরি তৈজসপত্র, বাহারি মিষ্টি, দৃষ্টি আকর্ষণীয় খেলনা ও বাহারি প্রসাধনী পণ্য দিয়ে সাজিয়ে বসছে কমপক্ষে ২ সহস্রাধিক বিভিন্ন ধরনের স্টল।
মহামানব শ্রী শ্রী গনেশ পাগল সেবাশ্রম সংঘের সভাপতি প্রণব বিশ্বাস বলেন, মেলা শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় সভা করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে আগত ভক্তদের আপ্যায়নের জন্য চিড়া, গুড়, চাল, ডাল ও খিচুরি প্রসাদের আয়োজন করা হয়েছে। মেলা উদযাপনের সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসন মেলা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার ব্যাপারে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন।
মাদারীপুর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মনিরুজ্জামান ফকির বলেন, আইনশৃংখলা রক্ষার জন্য তিন স্তরবিশিষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। মেলা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে শতাধিক পুলিশ বিভিন্ন স্থানে নিয়োজিত থাকবে।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য