মধু মাস জ্যৈষ্ঠ মাস। আম, জাম, কাঁঠাল পাকার মাস এটি। কুমিল্লা দক্ষিণাঞ্চলের লাকসাম, বরুড়া, লালমাই, নাঙ্গলকোট ও মনোহরগঞ্জ উপজেলার সব পেশার মানুষ গত কয়েকদিনের গ্রীষ্মের তাপদাহ ও ভ্যাপসা গরমে দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসজুড়ে প্রচন্ড খরা ও ভ্যাপসা গরমে মানুষ শূন্য হয়ে পড়েছে এলাকার অলি-গলি, হাটবাজার ও রাস্তাঘাট।
ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে ২-৪ দিন কিছুটা বৃষ্টি হলেও গত কয়েক দিনে তীব্র খরা, তাপদাহে ৫টি উপজেলার জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। ফলে নানা ভাইরাস রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার শিশু-কিশোর ও বৃদ্ধসহ সব পেশার মানুষ।
এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে বৃষ্টি না হওয়ায় বাতাসে ধুলাবালু এবং বিষাক্ত শিসা ছড়াচ্ছে। পুড়ে যাচ্ছে গাছপালা ও আবাদি জমির ফসল। এদিকে অবৈধ ট্রাক্টর-ভেকু দিয়ে মাটি কাটার ফলে সরকারের কাঁচা-পাকা সড়কগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে এলাকার পরিবেশ দূষিত হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসজুড়ে গরমের তীব্রতায় এ অঞ্চলের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। শত শত শিশু-কিশোর ও বৃদ্ধ আক্রান্ত হচ্ছে গরমজনিত বিভিন্ন ভাইরাস রোগে।
গত কয়েক সপ্তাহে জেলার দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ৩ সহস্রাধিক বিভিন্ন ভাইরাস রোগীকে চিকিৎসা দিয়েছেন সরকারি হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ক্লিনিক ও প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে। ওষুধ দোকানগুলোতে বিভিন্ন ভাইরাস রোগীদের প্রচুর ভিড় বাড়ছে। এ অঞ্চলে প্রচন্ড তাপদাহ ও গরমে মানুষের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা।
দিনে প্রচন্ড গরমে এ অঞ্চলের ছিন্নমূল মানুষ, শিশু-কিশোর ও বৃদ্ধদের পোহাতে হচ্ছে বাড়তি দুর্ভোগ। গত ২৪ ঘণ্টায় এ অঞ্চলের তাপমাত্রা মৌসুমের সর্বোচ্চ বৃদ্ধি পেয়েছে। এলাকায় কিছুটা বাতাস থাকলেও বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধ সংকট দেখা দিয়েছে। খাল-বিল, পুকুর, নদী এখন পানি শূন্য। মানুষ বাজার থেকে বিশুদ্ধ পানির নামে বিভিন্ন ব্রান্ডের বোতল ও জার এবং ভেজাল ওষুধ কিনে প্রতারিত হচ্ছেন।
সূত্রগুলো আরো জানায়, স্থানীয় আবহাওয়া অফিস টানা ভ্যাপসা গরমের আগামবার্তা ঘোষণা দেয়ায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশংকা করলেও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বর্ষা মৌসুম আসতে অনেক দেরি হবে। ফলে আসন্ন আমন ধান- গ্রীষ্মকালীন শাকসবজি ও মৎস্য চাষে বর্তমান পানি সংকটে বড় ধরনের দুর্ভোগে পড়েছে কৃষকরা।
চৈত্রের এ গরমের তাপদাহে স্থানীয় খেটে খাওয়া, দিনমজুর ও ছিন্নমূল মানুষের জীবনযাত্রার ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। গত কয়েক মাসে প্রচন্ড খরতাপ ও ভ্যাপসা গরমে এলাকায় গরমজনিত বিভিন্ন ভাইরাস রোগ-ব্যাধি বেড়ে গেছে। এসব রোগের আক্রান্ত রোগীরা প্রতিনিয়ত ভিড় করছে ওষুধের দোকানগুলোতে।
২ থেকে ৪ দিনের মধ্যে বৃষ্টিপাত না হলে রোগ-ব্যাধি আরো বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসক জানান, গত কয়েকদিনের টানা গরমে ভাইরাসজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ তাপদাহ ও দিনে ভ্যাপসা গরম ও রাতে শীত এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ডায়রিয়া, আমাশয়, চর্ম ও এ্যাজমাসহ বিভিন্ন ভাইরাস রোগীর সংখ্যাই বেশি।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, প্রচুর ঠান্ডা পানি, ঠান্ডাজনিত খাবার, স্যালাইন, শরবত, আখের রস, জুস, আইস ও মৌসুমী ফল-ফলাদি খাওয়ার পরামর্শ দেন তারা।
এ তাপদাহ কেবল জনজীবনে অস্থিরতা আনছে না বরং মানবদেহের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য