-->
শিরোনাম

বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর পাল্টে গেছেন চট্টগ্রামের আইনজীবীরা

সীতাকুন্ড (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর পাল্টে গেছেন চট্টগ্রামের আইনজীবীরা

দেশব্যাপী চলমান তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে ১৪ মে অধস্তন আদালতের বিচারক ও আইনজীবীদের কালো কোর্ট এবং গাউন পরিধান করার আবশ্যকতা নেই বলে বিজ্ঞপ্তি জারি করে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। এ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর পাল্টে গেছে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের অধস্তন আদালতের চিত্র।

 

সোমবার চট্টগ্রাম আদালতে দেখা গেছে, কালো কোর্ট-গাউনের বদলে আইনজীবীরা সাদা ফুল শার্ট, কালো টাই, সাদা শাড়ি বা সালোয়ার কামিজ ও সাদা নেক ব্যাড পরিধান করে নিজেদের মামলা শুনানি করছেন। তীব্র গরমে হাইকোর্ট প্রশাসনের এ বিজ্ঞপ্তি চট্টগ্রাম আদালতে আইনজীবীদের মাঝে এনে দিয়েছে স্বস্তি।

 

১১ মে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে শফিউল আলম ওরফে আলাউদ্দিন নামে এক আইনজীবী হিট স্ট্রোকে মৃত্যুবরণ করলে ড্রেস কোর্টের বিষয়টি আলোচনায় আসে।

 

এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে চট্টগ্রাম জজ আদালতের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাক জানান, আইনজীবীদের ড্রেস কোডের বিষয়টি ঐতিহ্যগত হলেও তীব্র গরমে কালো কোর্ট ও গাউন পরে আমাদের শুনানি করতে অনেক কষ্ট হয়। দেরিতে হলেও এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই এবং প্রতিবছর এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার আশাবাদ জানাই।

 

সিনিয়র আইনজীবী মো. আবুল হাসান সাহাব উদ্দিন জানান, বাংলাদেশ মূলত একটি গ্রীষ্মপ্রধান দেশ। বছরের প্রায় ৮ মাস দেশে উচ্চ তাপমাত্রা থাকে। কোর্ট-গাউন পরার আবশ্যকতা উঠিয়ে দেয়া কিংবা কিছুদিনের জন্য শিথিল করা আইনাঙ্গনের একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। প্রতিবছর তীব্র গরমের সময় যেন এর ধারাবাহিকতা বজায় থাকে এ কামনা করছি।

 

এর আগে দেশব্যাপী চলমান তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে অধস্তন আদালতের বিচারক ও আইনজীবীদের কালো কোর্ট এবং গাউন পরিধান করার আবশ্যকতা নেই বলে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। গত ১৪ মে শনিবার প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নির্দেশক্রমে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. গোলাম রব্বানীর সই করা বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

 

অধস্তন দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত, ট্রাইব্যুনালগুলোর বিচারক ও আইনজীবীদের মামলা শুনানিকালে পরিধেয় পোশাক সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশব্যাপী চলমান তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে দেশের বিভিন্ন আইনজীবী সমিতির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ বিচারপতিদের আলোচনাক্রমে এ সিদ্ধান্ত এসেছে।

 

বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, দেশের সব অধস্তন দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত, ট্রাইব্যুনালের বিচারক ও আইনজীবীরা ক্ষেত্রমতো সাদা ফুল শার্ট বা সাদা শাড়ি বা সালোয়ার কামিজ ও সাদা নেক ব্যাড বা কালো টাই পরিধান করতে পারবে। এক্ষেত্রে কালো কোর্ট ও গাউন পরিধান করার আবশ্যকতা নেই। এ নির্দেশনা ১৪ মে থেকে পরবর্তী নির্দেশনা প্রদান না করা পর্যন্ত বলবৎ থাকবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

 

তবে উচ্চ আদালতের আইনজীবী ও বিচারকদের ড্রেস কোড অপরিবর্তিত রয়েছে বলে জানানো হয়। ১১ মে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটি গরমে আইনজীবীদের ড্রেস কোড পরিবর্তনে প্রধান বিচারপতির কাছে অনুরোধ জানান। উচ্চ তাপমাত্রার প্রেক্ষাপটে আইনজীবী-বিচারকদের জন্য গ্রীষ্ম ও শীতকালীন ভিন্ন ভিন্ন ড্রেস কোড নির্ধারণের জন্য প্রধান বিচারপতি বরাবর আবেদন করা হয়।

 

চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. সেকান্দর চৌধুরী জানান, বর্তমানে প্রচলিত আইনজীবীদের পোশাকটি মূলত ব্রিটিশ ভাবধারা ও আবহাওয়া বিবেচনায় নির্ধারণ করা হয়েছিল।

 

কালের বিবর্তনে আবহাওয়া ও জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তন হওয়ায় বর্তমানে বাংলাদেশ গ্রীষ্মপ্রধান দেশে পরিণত হয়েছে। কিন্তু আইনজীবীদের কল্যাণ ও পেশাগত দায়িত্ব পালনের সুবিবেচনায় পোশাকের কোনো পরিবর্তন করা হয়নি।

 

ফলে দেশের হাজার হাজার আইনজীবী প্রতিবছরের মার্চ থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত উচ্চমাত্রার গরম আবহাওয়ায় অনেক কষ্ট সহ্য করে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে হয়।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version