-->
শিরোনাম

কাগজের ঠোঙায় বাড়তি আয়, মিলছে সচ্ছলতা

ফরিদপুর প্রতিনিধি
কাগজের ঠোঙায় বাড়তি আয়, মিলছে সচ্ছলতা
আলফাডাঙ্গা পৌরসভার বাকাইল গ্রামে কাগজের ঠোঙা তৈরিতে ব্যস্ত রুবিয়া বেগম

আলফাডাঙ্গা পৌরসভার বাকাইল গ্রামের দিনমজুর রফিক বিশ্বাস। সংসারে এক ছেলে ও এক মেয়ে। তার একার আয়ে সংসার চালাতে কষ্ট হয়। এ কারণে স্ত্রী রুবিয়া বেগম এলাকার শুকুর আলী নামে এক ব্যবসায়ীর জন্য ঠোঙা তৈরি করে দিচ্ছেন।

 

তিনি বলছিলেন, সংসারের কাজের ফাঁকে দিনে ২০ কেজি পর্যন্ত ঠোঙা তৈরি করতে পারেন। এতে আয় হয় অন্তত ৩০০ টাকা। একসময় গ্রামটির বিশ্বাসপাড়ার মানুষের প্রধান পেশা ছিল সরিষার তেল বানিয়ে বিক্রি করা। তবে পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় অনেকে পেশা বদলেছেন। অনেক নারী কাগজের ঠোঙা তৈরি করে সংসারে সচ্ছলতা ফিরিয়েছেন। ছাত্রীরাও অবসরে এ কাজ করে বাড়তি আয় করছে। তবে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে তাদের।

 

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, স্থানীয় বাজারের ফল, মুদি, মিষ্টির দোকানসহ অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ঠোঙা বিক্রি হয়। গ্রামটি থেকে বর্ষার সময় দিনে ৫০ কেজির মতো ঠোঙা বিক্রি হয়। ৮০ থেকে ৮৫ টাকা কেজি দরে মাসে লক্ষাধিক টাকার ঠোঙা বিক্রি করেন তারা। তবে শুষ্ক মৌসুমে মাসে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা বিক্রি হয়। ঈদের মতো উৎসবের সময়ে বিক্রি আরো বাড়ে।

 

বাকাইলের ফরিদ বিশ্বাসের মেয়ে ফাহিমা খাতুন স্থানীয় বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। পড়ালেখার পাশাপাশি দিনে ১৫-২০ কেজি ঠোঙা বানাতে পারে সে। কেজিপ্রতি ১০-২০ টাকা মজুরি হিসেবে তার দৈনিক আয় হয় ২০০-২৫০ টাকা। এ টাকায় পড়ালেখা ও সংসারের কাজে ব্যয় হয়।

 

জানা গেছে, পুরুষরা গ্রামে গ্রামে ঘুরে পুরোনো বই-খাতা, পত্রিকা, পোস্টার ও ক্যালেন্ডারসহ বিভিন্ন ধরনের কাগজ কেজি দরে কেনেন। সেগুলো কেটে আঠা লাগিয়ে ঠোঙা তৈরি করে শুকিয়ে বাজারে কেজি দরে বিক্রি করেন। অনেক সময় ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী ঠোঙা তৈরি করা হয়।

 

বাকাইল গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন বয়সি নারীরা ঘরের বারান্দায় ঠোঙা তৈরি করছেন। ৭৫ বছর বয়সি তছিরউদ্দিন বিশ্বাস ও তার স্ত্রী তহুরন নেছার ঠোঙা বিক্রির টাকায় সংসার চলে। ছেলেরা আলাদা হয়ে গেছে। এক নাতি ও নাতনি আছে সংসারে।

 

তহুরন নেছা জানান, স্বামীর মাসে ৩ হাজার টাকার ওষুধ লাগে। সব চলে ঠোঙা বিক্রির টাকায়।

 

এ দম্পতি জানান, এলাকার অনেক নারী ঠোঙা বানিয়ে দেন। তাদের কেজিপ্রতি ১০-২০ টাকা দিতে হয়।

 

ইউএনও রফিকুল হক বলেন, নারীরা ঠোঙা তৈরি করে ভাগ্য পরিবর্তন করছেন, এটি নিঃসন্দেহে ভালো কাজ। মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর ও যুব উন্নয়ন থেকে তাদের প্রশিক্ষণের সুযোগ রয়েছে।

 

এ বিষয়ে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version