-->
শিরোনাম

দিনাজপুরের লোভনীয় টসটসে লিচু এখন বাজারে, দাম একটু বেশি

আব্দুস সালাম, দিনাজপুর
দিনাজপুরের লোভনীয় টসটসে লিচু এখন বাজারে, দাম একটু বেশি
নিউমার্কেটে হাঁক-ডাক দিয়ে লিচু বিক্রি চলছে

দিনাজপুরের ঐতিহ্যবাহী লিচু এখন বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। লিচুর সুঘ্রাণ যেন পাগল করে দিচ্ছে সবাইকে। এবার প্রয়োজনীয় বৃষ্টিপাত না হওয়ার কারণে কাক্সিক্ষত লিচুর পূর্বের যে রূপ তা অনেকটা ম্লান হয়ে গেছে।

 

সারি সারি ভ্যানে সবুজ পাতায় মোড়ানো টসটসে লাল লিচু। দেখলেই যেন জিভে জল আসে। ভ্যান নিয়ে বাজারে প্রবেশ করতেই খুচরা বিক্রেতা ও আড়তদারেরা ঘিরে ধরছেন। এরপর পাতা সরিয়ে শুরু হচ্ছে হাঁকডাক। পরে উচ্চ দাম হাঁকা ক্রেতা ভ্যান নিয়ে আড়ত ঘরে যাচ্ছেন। মুখে হাসি নিয়ে টাকা গুনছেন লিচুচাষিরা।

 

প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা নাগাদ দিনাজপুর শহরের কোতোয়ালি থানার গেটের বাইরে কালীতলা এলাকায় পৌরসভার নিউমার্কেটের ফলের দোকানগুলোতে এখন ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড়। সারি সারি ঝুড়িতে সাজিয়ে রাখা লিচু। প্রতিটি থোকায় ৫০টি লিচু।

 

কেউ খুচরা বিক্রি করছেন, কেউবা দিচ্ছেন আড়তে। ক্রেতা দাম জিজ্ঞেস করতেই লিচুর থোকা উঁচিয়ে ক্রেতাকে আকৃষ্ট করছেন বিক্রেতা। এক সপ্তাহ ধরে নিউমার্কেটে লিচু বিক্রি চলছে।

 

শুক্রবার সকালে বাজারে মাদ্রাজি, বেদানা, বোম্বে ও চায়না-থ্রি জাতের লিচুর দেখা পাওয়া গেল। চাষিরা বলছেন, বোম্বাই ও মোজাফফরপুরী জাতের লিচু বাজারে আসতে আরো অন্তত এক সপ্তাহ সময় লাগবে। ১ হাজার মাদ্রাজি লিচু বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ৩০০ টাকায়। বেদানা লিচু ৫ হাজার ৫০০ থেকে ৬ হাজার ৫০০ টাকা।

 

চায়না-থ্রি জাতের ১ হাজার লিচু বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার থেকে ৭ হাজার ৫০০ টাকায়। তবে বাজারে মাদ্রাজি লিচুই বেশি। খুচরা বিক্রির পাশাপাশি আড়তদারেরা ঝুড়ি ও প্লাস্টিকের ক্যারেটে লিচু প্যাকেট করছেন। ঢাকা, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, চাঁদপুর, সিলেটসহ প্রায় সবকটি বিভাগে বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকারেরা লিচু কিনতে এসেছেন। ট্রাকে করে সেসব লিচু বিভিন্ন জেলায় নেয়া হচ্ছে।

 

দিনাজপুরের লিচুর দেশজুড়ে খ্যাতি রয়েছে। জেলার ১৩টি উপজেলাতেই কমবেশি লিচুর আবাদ হয়। সবচেয়ে বেশি চাষ হয় দিনাজপুর সদর উপজেলার মাসিমপুর, উলিপুর, আউলিয়াপুর, মহব্বতপুর, বিরল উপজেলার মাধববাটি, করলা, রবিপুর, মহেশপুর, বটহাট এবং চিরিরবন্দর ও খানসামা উপজেলায়। তবে গত বছরের চেয়ে এবার বেদানা, চায়না-থ্রি ও বোম্বাই লিচুর ফলন কম।

 

নিউমার্কেট এলাকার লিচুচাষি সাহাদত বলেন, ১ হাজার ৩০০ গাছের বাগান তাঁর। এবার ফলন অর্ধেকে নেমেছে। তবে শুরুতেই দাম ভালো পাচ্ছেন। দুই দিন আগে প্রতি হাজার মাদ্রাজি লিচু বিক্রি করেছেন ১ হাজার ৯০০ টাকায়। আজ বিক্রি করেছেন ২ হাজার ২০০ টাকায়। এই দাম আরো বাড়বে।

 

নিউমার্কেট এলাকা থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকায় ৫০০টি বেদানা জাতের লিচু কিনেছেন মালেক। লিচুগুলো তিনি ঢাকায় আত্মীয়ের বাসায় পাঠাবেন। মাজেদুর বলেন, এবার শুরুতেই বেদানার দাম চড়া। ঝুড়ি কিনতে লাগবে ১০০ টাকা, কুরিয়ার চার্জ নেবে ৩৫০ টাকা। সব মিলিয়ে প্রতিটি লিচুর দাম পড়ল ৭ টাকা ৩০ পয়সা। দাম বেশি পড়লেও মাল ভালো পেয়েছেন।

 

প্রতিবছর লিচুর মৌসুমে লিচু বিক্রি, পরিবহন, বাঁশের খাঁচা তৈরি, শ্রমিকদের মজুরি সব মিলিয়ে দিনাজপুরে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হয়।

 

দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় ৫ হাজার ৪৯০ হেক্টর জমিতে লিচুর বাগান আছে ৫ হাজার ৪১৮টি। এর মধ্যে বোম্বাই লিচু ৩ হাজার ১৭০ হেক্টর, মাদ্রাজি ১ হাজার ১৬৬ হেক্টর, চায়না-থ্রি ৮০২ হেক্টর, বেদানা ২৯৫ দশমিক ৫ হেক্টর, কাঁঠালি ৫৬ হেক্টর ও মোজাফফরপুরী লিচু ১ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে।

 

এ ছাড়া বসতবাড়ির উঠান, বাগানসহ লিচুগাছ আছে প্রায় সাত লাখ। এবার লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩১ হাজার ৭৯০ টন।

 

দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নরুজ্জামান বলেন, দিনাজপুরের লিচুর চাহিদা দেশব্যাপী। বিশেষ করে এখানকার বেদানা লিচু অত্যন্ত সুস্বাদু। গত বছর ২৮ টন লিচুর ফলন হয়েছে, যার বাজারমূল্য ছিল প্রায় ৬০০ কোটি টাকা। এবার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ টন। তবে এবার বোম্বাই ও চায়না-থ্রি জাতের লিচুর ফলন কিছুটা কম।

 

প্রতিবছর লিচুর মৌসুমে লিচু বিক্রি, পরিবহন, বাঁশের খাঁচা তৈরি, শ্রমিকদের মজুরি সব মিলিয়ে দিনাজপুরে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হয়।

 

লিচু চাষি মোক্তার জানান, আমরা দিনাজপুর গৌর এ শহীদ বড় ময়দানে এবারো বড় আকারে লিচুর আড়ৎ করে সারা দেশে লিচুর সরবরাহ করতে চেয়েছিলাম। বেড়া টিনসহ প্রায় ঘর কমপ্লিট ছিল।

 

কিন্তু প্রশাসনের এক অজ্ঞাত কারণে আমরা সেখানে আড়ৎ বা মোকাম করতে পারিনি। এ জন্য আমাদের কোটি কোটি টাকার লোকসান হলো। শহরের কালিতলায় লোকজনের আনাগোনা এবং অতিরিক্ত যানবাহনে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে বলে আমরা দুঃখিত।

 

আমরা কোথায় যাব প্রশাসন এবার আমাদের সাথে বিমাতাসুলভ আচরণ করেছে। যার কারণে বাধ্য হয়েই কোতোয়ালি থানার পাশে কালিতলায় লিচুর কারবার করতে হচ্ছে।

 

সরকার যদি আমাদের নির্দিষ্ট করে একটি জায়গা বরাদ্দ দিত তাহলে লিচু বিদেশেও রপ্তানি হতো এবং দেশে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় হতো।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version