নিয়মিত বিল পরিশোধ করেও চরম গ্যাস সংকটে রয়েছে তিতাস গ্যাস মানিকগঞ্জ অঞ্চলের হাজারো আবাসিক গ্রাহক। সরবরাহ লাইনে গ্যাস না পাওয়ায় রান্নাবান্নার কাজে সংগ্রহ করতে হচ্ছে চড়া দামের বোতলজাতকৃত তরল সিলিন্ডার গ্যাস কিংবা লাকড়ি।
জানা গেছে, মানিকগঞ্জ তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি গ্রাহকদের পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ না করেই গত এক যুগে গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা বিল নিয়েছে তিতাস কর্র্তৃপক্ষ। এ নিয়ে বিক্ষুব্ধ গ্রাহকগণ মিছিল-মিটিং, আন্দোলন করেছে। আন্দোলন ঠেকাতে গ্রাহকদের মিছিলে নির্বিচার গুলিও চালানো হয়েছে। কোনো আন্দোলন কাজে আসেনি। দিশেহারা গ্রাহকরা অবশেষে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১০ সাল থেকেই মানিকগঞ্জে গ্যাস সরবরাহ কমতে থাকে। ২০১২ সালের শুরুতে আবাসিক গ্রাহকরা সপ্তাহে শুধু শুক্রবার গ্যাস পেত। বছরের মাঝামাঝিতে গ্যাস সরবরাহ শূন্যের কোটায় চলে আসে।
গ্যাস না পেয়েও বছরের পর বছর নিয়মিত বিল পরিশোধ করতে থাকা গ্রাহকরা অসহায় হয়ে পড়লে ২০১৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও বর্তমান মানিকগঞ্জ পৌর মেয়র মো. রমজান আলীর নেতৃত্বে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের দাবিতে মিছিল বের করা হয়। ওই মিছিলে পুলিশের টিয়ার শেল ও গুলিতে আহত হন কর্তব্যরত সাংবাদিক, মেয়র মো. রমজান আলী, তার স্ত্রী ও ভাইসহ অসংখ্য গ্রাহক।
তিতাস গ্যাস মানিকগঞ্জ অঞ্চল ম্যানেজার প্রকৌশলী মো. আতিকুল হক সিদ্দিকী বলেন, আশুলিয়ার সিএমবি রোড ডিআরএস (প্রেসার নিয়ন্ত্রক) হতে সাভার, ধামরাই, সাটুরিয়া, মানিকগঞ্জ দিয়ে আরিচাঘাট পর্যন্ত এ লাইন গেছে। এখানে দৈনিক চাহিদা ২২ দশমিক ৬ এমএমসিএফডি। কিন্তু আমরা পাচ্ছি ১১ দশমিক ৮ এমএমসিএফডি। প্রতিদিন ঘাটতি থাকছে ১১ এমএমসিএফডি।
তিনি জানান, আবাসিকে প্রতি এমএমসিএফডি গ্যাসের দাম ১৮ টাকা এবং সিএনজি পাম্পে ৩৫ টাকা। মানিকগঞ্জ অঞ্চলে আবাসিক ডাবল চুলা রয়েছে ২১,৭৭৩টি এবং একক চুলা রয়েছে ১১০৯টি। ডাবল চুলার প্রতি মাসে বিল ১০৮০ টাকা এবং একক (সিঙ্গেল) চুলার বিল হচ্ছে ৯৯০ টাকা। এ ছাড়াও ১৭টি সিএনজি পাম্প ও ৪৩টি শিল্প কারখানায় গ্যাস সংযোগ আছে।
তিনি আরো বলেন, মানিকগঞ্জ অঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে উচ্চপর্যায়ে আলোচনা চলছে। আশা করি অচিরেই মানিকগঞ্জের গ্রাহকের গ্যাস সংকট কেটে যাবে।
উচ্চ আদালতের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী যথাসময়ে যথাযথভাবে জবাব দাখিল করা হয়েছে।
রিট পিটিশনার বিশিষ্ট সমাজসেবক আরশেদ আলী জানান, তিতাস গ্যাসের হিসাব মতে শুধু আবাসিকে প্রতি মাসে বিল করা হয় ২ কোটি ৩৫ লাখ ১৪ হাজার ৭৫০ টাকা। বছরে ২৯ কোটি ৫৩ লাখ ৫৩ হাজার টাকা। ১২ বছরের মধ্যে ২ বছর বাদ দিয়ে বিগত ১০ বছর কোনো গ্যাস সরবরাহ করেনি তিতাস কর্তৃপক্ষ। সেই হিসেবে গত ১০ বছরে গ্যাস না দিয়েই শুধু আবাসিক গ্রাহকদের কাছ থেকে বিল উত্তোলন করেছে ২৯৫ কোটি ৩৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা।
মানিকগঞ্জ শহরের এলাকার বাসিন্দা গালিব বলেন, তিতাসের গ্যাস সরবরাহে অনিয়ম অবৈধভাবে বিল আদায় সংক্রান্তে উচ্চ আদালতে পিটিশন দায়ের করা হয়েছে। আমরা আদালতের নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছি। তবে সিলিন্ডার গ্যাস ও লাকড়ির দাম চড়া হওয়ায় সাধারণ গ্রাহকরা চরম অসুবিধায় আছে।
মানিকগঞ্জ পৌর এলাকার খুশি আক্তার বলেন, বছর ১০ আগে মাঝেমধ্যে গভীর রাতে গ্যাস আসত আর আমরা রাত জেগে হলেও তা দিয়ে রান্নাসহ পানি ফুটানোর কাজ করতাম।
শিবালয় উপজেলার টেপড়ার সাবেক ব্যাংকার মো. মহিউদ্দিন বলেন, আমার বাসায় মোট ৮টি লাইন ছিল। আগেই সাতটি কাটা হয়েছে। সর্বশেষটিও বিচ্ছিন্ন করার আবেদন করেছি। গ্যাস পাব না কিন্তু বছরের পর বছর বিল আর কতকাল দিব।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিতাস গ্যাসের এক কর্মকর্তা বলেন, এমনিতেই তো গ্যাস নাই তারপরও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা শিল্পে নতুন সংযোগ চান এবং নিয়েছেন যা আমাদের কিছুই করার নেই।
মানিকগঞ্জ পৌর মেয়র মো. রমজান আলী বলেন, এই গ্যাসের দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে আমার পরিবারের ওপর পুলিশ গুলি করেছে। আমি, আমার স্ত্রী এবং আমার ভাইসহ অনেক আহত হয়েছিলেন। রিট পিটিশনার আরশিদ আলী জানান, শুধু আবাসিক গ্রাহকদের বিল বাবদ প্রায় ৩০০ কোটি টাকা অবৈধভাবে আদায়সহ তিতাসের নানা অনিয়ম সংক্রান্তে উচ্চ আদালতে ১৪/১/২৩ রিট করেছি।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য